×

রাজধানী

আগুন ঝুঁকিতে রাজধানী, প্রস্তুতি-নজরদারী সীমিত

Icon

আজিজুর রহমান জিদনী

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৯ পিএম

আগুন ঝুঁকিতে রাজধানী, প্রস্তুতি-নজরদারী সীমিত

ছবি : সংগৃহীত

নিমতলী ও চুড়িহাট্টা থেকে শুরু করে অন্যান্য বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকেই বারবারই আগুনের বিষয়ে ঢাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ শহর হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে বিশেষজ্ঞরা। সবশেষ রাজধানীর সবচেয়ে বড় ঘনবসতিপূর্ণ কড়াইল বস্তির আগুন রাজধানীবাসীকে ফের স্মরণ করিয়ে দেয় অগ্নি ঝুঁকির বিষয়টি। নানা অসঙ্গতিতে আগুনের কাছে অসহায় মানুষ। অপরিকল্পিত নগরে অননুমোদিত ও নকশাবিহীন অবকাঠামোর ভিড়, সংকীর্ণ গলি, বিদ্যুতের জটলা পাকানো তার এবং গ্যাসের সিলিন্ডার- সব মিলিয়ে একটি স্ফুলিঙ্গই যথেষ্ট কোনো বড় বিপর্যয় ঘটাতে, যা থেকে এখনো ঢাকাকে নিরাপদ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এখানে কয়েকদিন আগে যে ভূমিকম্প হয়েছে- তা সামনে আরো একটি বড় ধরনের ভূমিকম্পের আভাস দিচ্ছে। এমন হলে শুধু ভবন বা অবকাঠামো ধস নয়, বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হবে। কারণ ঢাকার মাটির নিচ দিয়ে গ্যাস লাইন রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে বিদ্যুতের জটলা পাকানো তার। ভবন ধস হলে বৈদ্যুতিক স্পার্ক থেকে আগুন সৃষ্টির প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। গ্যাস লাইন লিকেজ সৃষ্টি হলে স্ফুলিঙ্গের একটু ছোয়া পেলেই আগুন ছড়িয়ে পড়বে। জাতিসংঘের হিসাবে ঢাকার জনসংখ্যা এখন ৩ কোটি ৬৬ লাখ। জাপানের টোকিওকে পেছনে ফেলে ঢাকা এখন বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল নগরে পরিণত হয়েছে। কিছু ঘটলে ভবন ধসের পাশাপাশি আগুনে পুড়ে মারা যাবে অনেক মানুষ। তাই বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরোপুরি রক্ষা করা না গেলেও ক্ষতি কমাতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।

সম্প্রতি, রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদাম ও পোশাক কারখানায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর, যেখানে ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল-সিইপিজেড এলাকায় কারখানা ভবনে লাগা আগুন প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে। পুরোপুরি নেভে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর। শাহজালাল বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজের আগুন নির্বাপণ হয় ২৭ ঘণ্টা পর। সর্বশেষ কড়াইল বস্তিতে আগুনের ঘটনা ঘটে। পুড়ে যায় ১ হাজার ৫০০ এর বেশি ঘর। ১৬ ঘণ্টা লাগে এ আগুন নির্বাপণে। 

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, পুরান ঢাকায় ২ হাজার ৫০০ রাসায়নিক গুদামের লাইসেন্স আছে; এরকম একটা বিষয় শোনা গিয়েছে। কিন্তু আমি বলতে চাই, সেখানে কোনো লাইসেন্স নেই। আমরা দীর্ঘ ৫-৬ বছর ধরে এটা বন্ধ রেখেছি। আমি নিজেই এখানে তিন বছর ধরে আছি, আমার সময়কালে কোনো লাইসেন্স দেয়া হয়নি, এমনকি নবায়নও করা হয়নি। আর এর আগের যত লাইসেন্স এগুলো সবই বাতিল। সুতরাং পুরান ঢাকার রেসিডেনশিয়াল এরিয়াতে যতগুলো গুদাম রয়েছে, তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততাই নেই।

অগ্নি নির্বাপণ ও ঝুঁকি প্রতিরোধে বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা টোটাল ৮টা পয়েন্ট নোট করেছি। এর মধ্যে সব ক্ষেত্রেই যেই সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলো মূল্যায়ন করাটা খুবই জরুরি। এই মুহূর্তে এইট প্রেজেন্ট যে, ফায়ার রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট এইটা এখন আমাদের দ্রæত অ্যাসেস করতে হবে। আমরা যাতে বুঝতে পারি, মানে জোনভিত্তিক অথবা ফায়ারের রিস্কের যেই মাত্রা, সেই মাত্রা হিসেবে দ্রæত এই ফায়ারের রিস্কের অ্যাসেসমেন্টটা করা দরকার। ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের পরিদর্শক রয়েছেন ২৬৮ জন। সারা বাংলাদেশের এরিয়া যদি ভাগ করি, এটা আসলে খুবই নগণ্য- এটা আসলে কাভার করাটা নিয়ারলি ইমপসিবল। কিন্তু তারা এই চেষ্টাটা করে যাচ্ছে। এই গ্যাপ পূরণ করার জন্য আমাদের যে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশনগুলো রয়েছে, সেই স্টেশনের যে স্টেশন অফিসাররা কিন্তু প্রতি শনিবারে টোপোগ্রাফি করে।

অবৈধ গোডাউন উচ্ছেদের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের নিজস্ব কোনো ম্যাজিস্ট্রেট নেই। জেলা প্রশাসনের যে ম্যাজিস্ট্রেট, সেই ম্যাজিস্ট্রেটের ওপরেই আমাদের নির্ভর করতে হয়। সুতরাং এখানে আমাদের একটা বড় দুর্বলতা যে, আমরা চাইলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারি না। এ কারণে হয়তো আপনারা ভ্রাম্যমাণ আদালত যেভাবে আশা করেন, সেভাবে আমরা দিতে পারছি না। কোনো আবাসিক জায়গায় কখনো কোনো রাসায়নিক গুদাম বা কারখানা হতে পারে না। এটা হতে গেলে অবশ্যই আমাদের ওই এলাকার কমিউনিটি এফেক্ট হবে।

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি উদ্বেগজনক উল্লেখ করে বলেন, বস্তি ও নিম্ন আয়ের আবাসনে ঘনবসতি, দাহ্য অবকাঠামো ও পর্যাপ্ত খোলা জায়গার অভাবে অগ্নিকাণ্ড ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বাড়ছে। টেকসই নগর-পরিকল্পনা, বিল্ডিং কোডের কঠোর বাস্তবায়ন, দুর্বল ভবনের তালিকা তৈরি করা ও উচ্ছেদ এবং ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এসব ব্যবস্থা দ্রুত না নিলে ভবিষ্যৎ দুর্যোগে ঢাকায় বড় বিপর্যয় হবে।

অগ্নি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এবং ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সাবেক পরিচালক এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, আমাদের যেসব অবকাঠামো বানানো হয়, সেগুলোতে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তার কোনো প্রস্তুতি নেই। আগুন এখন একটা ভয়াবহ দুর্যোগ, কিন্তু সেরকম রিস্ক রিডাকশনের কোনো ব্যবস্থা নেই।

ভবনগুলোতে ফায়ার ডিটেকশান থেকে শুরু করে কোনো ইমার্জেন্সি ট্যুল নেই। কিন্তু ভবনে এসি আছে, ওভেন আছে, ফ্যান আছে, যেগুলোর সবই ফায়ার হ্যাজার্ড ইক্যুইপমেন্ট। রিস্ক রিডাকশন করা যাবে, সেটার কোনো ব্যবস্থা নেই। তার মতে, বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। কিন্তু সেটি হলেই হবে না। রিস্ক রিডাকশনের ব্যবস্থা না থাকলে এটি ঘটবেই। তিনি বলেন, ঢাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব, নির্মাণমানের দুর্বলতা, অব্যবস্থাপনা ও সীমিত প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা- সব মিলিয়ে প্রমাণ করে যে, একটি ৭.০+ ভূমিকম্প একদিনেই এই নগরীকে ইতিহাসের ভয়াবহতম বিপর্যয়ের একটি রূপ দিতে পারে। আগুন তাকে আরো ভয়াবহতায় ঠেলে দেবে। তবে ক্ষতি কমাতে জরুরি হলো- কঠোর বিল্ডিং কোড প্রয়োগ, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের রেট্রোফিট, উদ্ধার সক্ষমতা বাড়ানো, শহর পরিকল্পনায় ভূমিকম্প ঝুঁকি অন্তর্ভুক্তি, হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার শক্তিশালী নকশা, জনসচেতনতা ও নিয়মিত মহড়া এবং একটি কার্যকর জরুরি প্রতিক্রিয়া কাঠামো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৩১

ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৩১

বিশ্ব রেকর্ডগড়া তামিমের ফিফটি, সিরিজ জয় বাংলাদেশের

বিশ্ব রেকর্ডগড়া তামিমের ফিফটি, সিরিজ জয় বাংলাদেশের

লালমনিরহাটে ৫ থানার ওসিদের একযোগে বদলি

লালমনিরহাটে ৫ থানার ওসিদের একযোগে বদলি

আগুন ঝুঁকিতে রাজধানী, প্রস্তুতি-নজরদারী সীমিত

আগুন ঝুঁকিতে রাজধানী, প্রস্তুতি-নজরদারী সীমিত

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App