দিলীপ আগারওয়ালার সহযোগী কাজী হাসান জাকি ও মাসুম খান এখনও অধরা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ০৯:৩৫ এএম

দিলীপ আগারওয়ালার দুই সহযোগী কাজী হাসান জাকি ও মাসুম খান
ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগারওয়ালাকে হত্যাকাণ্ড, চোরাচালান, অর্থপাচার ও প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হলেও, এই বিতর্কিত ব্যবসায়ীর অন্যতম দুই ব্যবসায়িক সহযোগী কাজী হাসান জাকি ও মাসুম খান এখনও অধরা রয়েছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দিলীপের আর্থিক অপরাধগুলোর নেপথ্যে এই দুজনের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। দিলীপ আগারওয়ালা নিজেই তদন্তকালে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। আর এই প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কাজী হাসান জাকি ও মাসুম খানের সন্ধানে মাঠে নেমেছে।
তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কাজী হাসান জাকি যিনি মূলত দেশের এক প্রভাবশালী মানি লন্ডারিং মাফিয়া, দীর্ঘদিন ধরে দিলীপ কুমারের সঙ্গে যৌথভাবে বিদেশে অবৈধ অর্থ পাচারে জড়িত ছিলেন। তিনি একাধিক ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা বিদেশে সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিতেন। এই ত্রয়ী দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কাজী হাসান জাকি ও দিলীপ কুমার যৌথ মালিকানায় দেশের বিভিন্ন রুটে শিপিং ও লঞ্চ ব্যবসা পরিচালনা করতেন। তবে এই ব্যবসার আড়ালে চলত সংগঠিত চোরাচালান সিন্ডিকেটের কার্যক্রম। মূলত, এই শিপিং ব্যবসার মাধ্যমে সোনা, হীরা, মাদক এমনকি বৈদেশিক মুদ্রাও পাচার হতো। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, কাজী হাসান জাকি গত ১০–১৫ বছর ধরে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি’ খাতে প্রভাবশালী অবস্থান তৈরি করেছেন। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর ছত্রছায়া কাজে লাগিয়ে তিনি অস্বচ্ছ উপায়ে বিদ্যুৎ ব্যবসায়ী হয়েছেন।
অন্যদিকে মাসুম খান, দিলীপের সঙ্গে ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে পরিচিত হলেও, তদন্তে উঠে এসেছে তিনি বিদেশি ব্যাংক একাউন্ট খুলে সেগুলোর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার করতে সাহায্য করেছেন। দুবাই, মালয়েশিয়া, কানাডা ও সিঙ্গাপুরে তাদের নামে এবং বেনামে গড়ে উঠেছে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, শপিং ইউনিট এবং বাড়ি। প্রাক্তন একজন সাধারণ ব্যবসায়ী ছিলেন মাসুম খান, যিনি দীর্ঘদিন সাধারণ পরিবহণ ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। কিন্তু দিলীপ কুমারের ছত্রছায়ায় তিনি অস্বাভাবিক হারে অর্থ ও ক্ষমতা অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি দেশের অন্যতম প্রভাবশালী ‘ট্রান্সপোর্ট লর্ড’ হিসেবে পরিচিত। লঞ্চ, বাস ও লজিস্টিকস ব্যবসায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন মাসুম।
তদন্তকারীদের মতে, জাকি ও মাসুম উভয়েরই বিদেশে 'সেকেন্ড হোম' প্রোগ্রামের আওতায় বৈধতার আড়ালে গড়ে তোলা অবৈধ সম্পদের রেকর্ড রয়েছে। মালয়েশিয়া, দুবাই ও কানাডায় তাদের পরিবার নিয়মিত ভ্রমণ ও বসবাস করেন। এমনকি, বাংলাদেশের বাইরে কয়েকটি ব্যবসায়িক লাইসেন্স ও কোম্পানির মালিকানা খোঁজে পাওয়া গেছে, যেগুলোর সঙ্গে দিলীপ আগারওয়ালার ‘বিনিয়োগ’ এর সুস্পষ্ট যোগসূত্র রয়েছে। মাসুম এবং কাজী হাসান জাকি—দুইজনেরই পরিবার বিদেশে বসবাস করছেন, সন্তানরা ইউরোপ, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের অভিজাত স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করছে। অথচ এসব ব্যয়বহুল জীবনের উৎস সম্পর্কে নেই কোনো স্বচ্ছ ব্যাখ্যা বা বৈধ উৎসের প্রমাণ। অর্থমন্ত্রণালয় ও দুদক সূত্র বলছে—তাদের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদের খোঁজ মিললেও সেগুলোর উৎস এখনও অন্ধকারে।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানাচ্ছেন, মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় কিছুটা ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও দিলীপ আগারওয়ালার গ্রেপ্তারের ঘটনা অগ্রগতি হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে, তার শীর্ষ সহযোগীদের ধরা না পড়া নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে দুদক, র্যাব ও সিআইডির একাধিক ইউনিট এই দুই সহযোগীর অবস্থান এবং কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে।