প্লট দুর্নীতি
হাসিনা-জয়-পুতুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন ৩ বাদী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৫, ০৫:৪৭ পিএম

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। ছবি: সংগৃহীত
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন বাদীরা। সোমবার (১১ আগস্ট) দেড় ঘণ্টায় তাদের জবানবন্দি নথিবদ্ধ করেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
সাক্ষ্য দেয়া বাদীরা হলেন- শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন, পুতুলসহ ১৮ জনের মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া এবং জয়সহ ১৭ জনের মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান। তিন মামলায় আসামি হিসেবে আছেন শেখ হাসিনা।
এদিন বেলা ১১টা ৪৩ মিনিটের দিকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রথমে সালাহউদ্দিন, এরপর কেয়া এবং সবশেষে রাশেদুল জবানবন্দি দেন। দুপুরর সোয়া ১টার দিকে তাদের সাক্ষ্য শেষ হয়। মামলার সব আসামি পলাতক থাকায় তাদের আইনজীবীরা সাক্ষীদের জেরা করার সুযোগ পাননি। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৬ অগাস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত। দুদকের কৌঁসুলি মুহাম্মদ সুলতান মাহমুদ জানিয়েছেন, ওই দিন সাক্ষ্য দিতে তিন মামলায় ১৫ জনকে সমন পাঠানো হবে।
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ৬ প্লট দুর্নীতির মামলায় গত ৩১ জুলাই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানার সঙ্গে তাদের সন্তানসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ঢাকার দুই বিশেষ জজ আদালত। এর মধ্যে তিন মামলায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১১ অগাস্ট দিন নির্ধারণ করেন বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। বাকি তিন মামলায় শেখ রেহেনা এবং তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম ১৩ অগাস্ট দিন ধার্য করেন।
অপর ১৬ আসামি হলেন-জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। তার পরিবারের অন্যরাও দেশের বাইরে। তাদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে ৬টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গত ডিসেম্বরে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এরপর ১২ জানুয়ারি প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার ও নিয়মের অভিযোগে পুতুলের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে সংস্থাটি। পরদিন শেখ রেহানা এবং তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
এরপর ১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। এই ছয় মামলাতেই শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদের কেউ কেউ একাধিক মামলার আসামি। সবমিলিয়ে ৬ মামলার আসামির সংখ্যা ২৩। এসব মামলায় দুদক অভিযোগ করে, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবার ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। অযোগ্য হলেও পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ নেন তারা।