×

স্বাস্থ্য

যে চার কারণে স্থবির স্বাস্থ্য খাত

Icon

সেবিকা দেবনাথ

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ০৪:৫৬ পিএম

যে চার কারণে স্থবির স্বাস্থ্য খাত

ছবি: সংগৃহীত

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ধাক্কা গত ১০ মাসেও সামলে উঠতে পারেনি স্বাস্থ্য খাত। এখনো অস্থিরতা ও স্থবিরতা চলছে এই খাতে। অপরদিকে, একের পর এক উদ্ভূত সমস্যা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। সরকার পরিবর্তনের পর বদলি, ওএসডি করাসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামেন স্বাস্থ্য খাতের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। সেই পরিস্থিতি কিছুটা থিতু হওয়ার পরপরই শুরু হয় আরেক সমস্যা। সম্প্রতি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ঘটে গেছে নজিরবিহীন ঘটনা। ২৮ মে থেকে পুরো ১৮ দিন বন্ধ ছিল এই সরকারি হাসপাতাল। 

বলা যায়, সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার পরপরই শুরু হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। আবাসন সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতিও অবনতির দিকে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ ও সামনে ভোগাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। জনবল সংকট, শয্যাসংকট, আই সিইউ সংকট, নমুনা পরীক্ষার কিট ও স্যালাইন সংকটও রয়েছে। চিকুনগুনিয়ার বিস্তার বাড়লেও ঢাকার বাইরে এই ভাইরাস সনাক্তের কোনো ব্যবস্থা নেই। জোড়াতালি দিয়ে এ বিষয়গুলো সমাধান করার চেষ্টা হলেও তা খুব বেশি ফলপ্রসূ হচ্ছে না বা হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অপারেশনাল প্ল্যান (ওপি) বাতিলের সিদ্ধান্তে স্বাস্থ্য খাত স্থবির হয়ে আছে বলে মনে করছেন তারা। 

স্বাস্থ্য খাতের ৩৮টি ওপি বন্ধ করেছে সরকার। এসব কর্মসূচিতে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ২৫ হাজার কর্মী। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের তেল, চালকের বেতন, এমনকি সিভিল সার্জনের গাড়ির তেলসহ নানান সরবরাহ বন্ধ। রোগ নিয়ন্ত্রণ ও পুষ্টি কর্মসূচির পাশাপাশি উন্নয়নের নানান খাত বন্ধ। দুর্নীতি হচ্ছে বলে সরকার এসব ওপি বন্ধ করে দেয়। ওপি বন্ধে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী কমিউনিটি ক্লিনিক। কর্মীদের বেতন নেই, ওষুধ সরবরাহ নেই। অথচ সাধারণ মানুষের চাহিদার শেষ নেই। এছাড়া, সিভিল সার্জন অফিস, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবায়ও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। তাদের অনেক কিছু এই অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায়। জরুরি সেবার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয় এবং কর্মরতদের বেতন-ভাতা দিতে নতুন একটি ডিপিপি প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর আর এভাবে ডিপিপি হবে না। তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে বিশেষ কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আলাদা ডিপিপি করবে।

সংশ্লিষ্টরা মোটা দাগে স্বাস্থ্য খাতে অস্থিরতা ও স্থবিরতার চারটি কারণ নির্ধারণ করেছেন। সেগুলো হলো- রাজনৈতিক পরিবর্তন, পদত্যাগ ও নিয়োগ, অর্থনৈতিক সংকট, স্বাস্থ্যসেবা খাতে অব্যবস্থাপনা।

বাংলাদেশ পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. আবু জামিল ফয়সাল মনে করেন স্বাস্থ্য খাতে অস্থিরতা ও স্থবিরতা দুটি দিকই আছে। উদাহরণ হিসেবে ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, অস্থিরতা হলো- আগের সরকারের আমলে যে লোকজন ছিল তাদের বদলি করা হয়েছে। তারা কাজ করবে কি করবে না এ নিয়ে অস্থিরতা আছে। কিছু দিন আগে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মতো সরকারি একটি হাসপাতাল দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল। এটিও অস্থিরতার কারণে হয়েছে। এই অস্থিরতার বিভিন্ন কারণ আছে। যেগুলো বর্তমান সরকার সঠিকভাবে সামাল দিতে পারেনি। আর দ্বিতীয় অবস্থা হচ্ছে স্থবিরতা। স্বাস্থ্য খাতের যে সেক্টর প্রোগ্রামগুলো ছিল তা অর্থায়নের অভাবে বন্ধ আছে। যে কারণে কাজগুলো স্থবির হয়ে আছে। 

তিনি আরো বলেন, আগে হয়তো খারাপ নেতৃত্বে দেশ পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু তখন একটি নেতৃত্বে চলেছে। আর এখন বিভিন্ন ধরনের লোকজন এসেছে। একদল এক মত প্রকাশ করলে অন্যদল ভিন্ন মত প্রকাশ করছেন। বিভিন্ন ধরনের লোকের সমাবেশ। বলা যায় বারোয়ারি সরকার। এই সরকার দিয়ে খুব সহজে বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। তবে সরকার যদি অস্থিরতার কারণগুলো নিরূপণ করে সেখানে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে সেক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব। 

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য চিকিৎসাবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী ভোরের কাগজকে বলেন, যেকোনো পরিবর্তনের পরই একটা স্থবিরতা থাকে। আমরা এখন একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। স্বাস্থ্য খাতের ওপিগুলো বন্ধ। বড় বড় সিদ্ধান্তগুলোও পিছিয়ে গেছে। প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে জনবল ছিল বিভিন্ন কারণে সেক্ষেত্রে পরিবর্তন হয়েছে। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেই দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজ শুরুতেও সময় লেগেছে। এছাড়া, আরেকটি বিষয় আছে। তবে এটি শুধু স্বাস্থ্য খাতেই নয় সব খাতেই। বিভিন্ন খাতে দাবি-দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে এ পরিস্থিতির দ্রæত উন্নতি হবে বলে মনে হয় না। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস বাংলাদেশের (এএইচআরবি) আহ্বায়ক সৈয়দ আবদুল হামিদ মনে করেন, স্বাস্থ্য খাত কোনো ‘স্ট্রেট ফরোয়ার্ড’ বিষয় নয়। এই খাতে ‘ডিপ রুটেড’ চ্যালেঞ্জ আছে। তিনি বলেন, অন্যান্য খাতের তুলনায় এই খাতে চ্যালেঞ্জ ও স্টেক হোল্ডারের সংখ্যাবেশি। এই খাতের জটিলতা ও চ্যালেঞ্জগুলোকে বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য যে ‘কারিশমা’ লাগে তা আমাদের প্রশাসনের নেই। কখনো ছিলও না। সহজ করে বলতে গেলে, দেশের স্বাস্থ্য খাতকে বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো লিডারশিপ কোনো পর্যায়েই ছিল না; তা হোক মন্ত্রী পর্যায়ে, হোক সচিব বা মহাপরিচালক পর্যায়ে। এও ঠিক একজন নেতার পক্ষে সব বিষয়ে পারদর্শী হওয়া সম্ভব নয়। তাকে নিরপেক্ষভাবে কিছু লোক নির্বাচন করতে হবে। যার কাছ থেকে সৎ পরামর্শ পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে তার কাজের মূল্যায়ন করতে হবে। তিনি কোন দল করেন সেটিকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না। কিন্তু এ কাজটি কখনো হয়নি। সব সময় যা করা হয়েছে; তা হয়েছে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালানোর মতো। 

তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সমস্যাগুলোর কিছু ‘কি পয়েন্ট’ আছে। সিস্টেমেটিকেলি তা পরিবর্তন করা গেলে সমাধান করা যেত। কিন্তু তা আমরা পারিনি। উদাহরণ হিসেবে বলেন, ঢামেক কিংবা জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা সমাধানে সরকার অবশ্যই আন্তরিক ছিল। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ‘স্ট্যাটেজিক্যালি গেইম’ খেলতে হয়। ঢামেকের ছাত্রাবাসের ইস্যুটি এখনকার ইস্যু নয়। এটি ‘ডিপ রুটেড’ ইস্যু। সহজে সমাধান হবে না। আবার ঢামেক শিক্ষার্থীদের পড়ালেখাও বন্ধ রাখা যাবে না। সরকার এক্ষেত্রে বিকল্প চিন্তা করতে পারতো। যেমন- ‘ন্যাম’ ভবন এখন খালি। ছাত্রদের সেখানে থাকার এবং কলেজে যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থা করে সমাধান করা সম্ভব ছিল। চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ক্ষেত্রেও বিকল্প চিন্তা করা যেত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

২০ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর

বিমান বিধ্বস্ত ২০ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর

বিমান বিধ্বস্তে নিহত ২৭ জনের মধ্যে ২৫ জনই শিশু

বিমান বিধ্বস্তে নিহত ২৭ জনের মধ্যে ২৫ জনই শিশু

এমন ঘটনা কি শুধুই রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থার, প্রশ্ন অভিনয়শিল্পী-গায়িকা পারশা

বিমান দুর্ঘটনা এমন ঘটনা কি শুধুই রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থার, প্রশ্ন অভিনয়শিল্পী-গায়িকা পারশা

মধ্যরাতে শিবির-ছাত্রদলের সংঘর্ষ

মধ্যরাতে শিবির-ছাত্রদলের সংঘর্ষ

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App