ভারতের কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে শিক্ষানবীশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা নিয়ে রাজনীতি না করতে কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। খবর এনডিটিভির।

সংবাদমাধ্যমটি এক প্রতিবেদনে জানায়, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৌঁসুলি কপিল সিব্বলের মধ্যে কথার লড়াইয়ের সময় এ আহ্বান জানিয়েছেন বিচারপতি। শুনানির সময় কপিল সিব্বল আদালতকে অনুরোধ করেন, এ বিষয়ে যাতে কোনো উসকানিমূলক বিবৃতি দেয়া না হয়।

সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, এ বিষয়ে কারো কোনো বিবৃতি দেয়া উচিত না। কিন্তু আমাদের কাছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একজন মন্ত্রীর বক্তব্য আছে। এটি খুব গুরুতর বিষয়। (ওই মন্ত্রী বলেছিলেন) কেউ যদি আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে আঙুল তোলেন, তাহলে সেই আঙুল কেটে ফেলা হবে।

কটাক্ষ করে এ কথার পাল্টা জবাব দেন কপিল সিব্বলও। এমন পরিস্থিতিতেই প্রধান বিচারপতি বলেন, দয়া করে ঘটনাটি নিয়ে রাজনীতি করবেন না। আইন তার নিজের গতিতে চলবে। দ্রুত ও কার্যকর তদন্তের পর আইন তার স্বাভাবিক গতিতে চলবে সেটি আমরা নিশ্চিত করছি।

প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য এমন একসময়ে এলো যখন আর জি কর হাসপাতালের চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে ঘিরে তুমুল রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছে।

আরো পড়ুন : ধর্ষকদের দ্রুত বিচার নিশ্চিতে মোদিকে চিঠি মমতার

প্রধান বিরোধী দল বিজেপি ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করে বিক্ষোভ করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন দল অভিযোগ করেছে বিজেপি রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে মিথ্যা অভিযোগ করছে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বলেছে, এটি চিকিত্সকদের কল্যাণ এবং নিরাপত্তার বিষয়েও উদ্বিগ্ন। বেঞ্চ বলেছে, আমরা শুধু নির্দেশিকা তৈরি করতে যাচ্ছি না, আমরা একটি প্রয়োগযোগ্য দিকনির্দেশ দিতে যাচ্ছি।

শুনানির সময় ডাক্তারদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী বেশ কয়েকজন আইনজীবী বিক্ষোভে যোগদানের জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ধর্মঘট করা যাবে না। ডাক্তারদের অবশ্যই তাদের দায়িত্ব পুনরায় শুরু করতে হবে কারণ দেশের দরিদ্র জনগণকে সেবা প্রদান থেকে বাদ দেয়া যাবে না।

ভারতের প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, চিকিৎসকদের ডিউটিতে থাকলে তাদের অনুপস্থিত হিসেবে চিহ্নিত করা হবে না এবং ডিউটিতে না থাকলে আইন অনুসরণ করা হবে। তাদের আগে কাজে ফিরতে বলুন, কেউ কোনো ডাক্তারের বিরুদ্ধে বিরূপ ব্যবস্থা নেবে না। পরে অসুবিধা হলে আমাদের কাছে আসুন, তবে তাদের আগে কাজ করতে দিন।

গত ৯ অগাস্ট পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার সরকারি আর জি কর হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে ৩২ বছর বয়সী নারী চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে অনুযায়ী, নির্যাতিতার চোখ, মুখ ও গোপনাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত রয়েছে। দায়িত্বে থাকা অবস্থায় শিক্ষানবীশ ওই চিকিৎসক এ ঘটনার শিকার হয়। ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ সঞ্জয় রায় নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।

আরজি করের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা গ্রহণ করে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের মামলাটি ওঠে শুনানির জন্য।