×

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে শান্তির পথ হবে না

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক: বিশ্বের নজর এখন আলাস্কায়

স্বাগত জানালো ভারত

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৫, ০৯:১৮ পিএম

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক: বিশ্বের নজর এখন আলাস্কায়

ছবি: সংগৃহীত

আগামী ১৫ আগস্ট, শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মুখোমুখি হবেন আলাস্কায়। দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশার পর এই বৈঠক শুধু দুই দেশের সম্পর্কই নয়, বিশ্ব রাজনীতির ধারা পাল্টে দিতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এই আলোচনার গুরুত্ব বেশি।

বৈঠকের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে দুই দেশের প্রশাসন। বিশ্ব রাজনীতিতে এত দিন ধরে ঝুলন্ত থাকা বহু প্রশ্ন এই বৈঠকে আলোচনার টেবিলে আসতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প ও পুতিনের এই ‘বিগ মিটিং’ অনেকটাই নির্ধারণ করবে আগামী দিনের কূটনৈতিক পরিস্থিতি।

ট্রাম্পের জন্য এই বৈঠক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক এক মাইলফলক। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি দ্রুত যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও শুরুতে রাশিয়ার প্রতি কিছুটা নমনীয়তা দেখিয়েছিলেন ট্রাম্প, কিন্তু যুদ্ধবিরতি নিয়ে অগ্রগতি না হওয়ায় পরবর্তীতে কঠোর শুল্ক আর নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে মস্কোর ওপর চাপ বাড়িয়েছেন তিনি। এই প্রেক্ষাপটে আলাস্কায় বৈঠক হওয়ার ঘটনা ট্রাম্পের রাজনৈতিক কৌশলে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

আর পুতিনের কাছে ইউক্রেন যুদ্ধ একদিকে সামরিক ও রাজনৈতিক মিশন। পূর্ব ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করাই তার মূল লক্ষ্য। এছাড়া ন্যাটোর বিস্তার রোধ করাও তার অগ্রাধিকার। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে ‘শতাব্দীর বৃহত্তম ভূরাজনৈতিক বিপর্যয়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন পুতিন বারংবার। তিনি চান রাশিয়ার পুরনো প্রভাব ফিরে আসুক, আর তাই আলোচনায় ইউক্রেনের অধিকৃত অংশকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে দাবি করবেন এবং ন্যাটোর প্রসার রোধে জোর দেবেন।

তবে বৈঠক থেকে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুপস্থিতি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তাদের ভূখণ্ড ছাড়ার প্রস্তাবে একদমই রাজি নন। আর অধিকৃত ভূখণ্ডের ওপর এই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কূটনৈতিক সমঝোতার পথ কঠিন করে তুলেছে।

ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে শান্তির পথ হবে না

ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠক নিয়ে ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, সম্ভাব্য চুক্তিতে ইউক্রেনকে তার ভূখণ্ডের একটি বড় অংশ ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হতে পারে। এ উদ্বেগ থেকে গত শনিবার রাতে ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের প্রতি রাশিয়ার ওপর চাপ আরো বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

সাড়ে তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের পথ খুঁজে পেতে আলাস্কায় বৈঠকে বসছেন ট্রাম্প ও পুতিন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ওই বৈঠকে যোগ দিতে চাইছেন। ইউক্রেন ও ইউরোপের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সতর্ক করে বলা হয়েছে, কিয়েভকে অবশ্যই আলোচনার অংশ করতে হবে।

গত শুক্রবার পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের ঘোষণা দেয়ার সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, উভয় পক্ষের মঙ্গলের জন্য কিছু ভূখণ্ড অদলবদল করতে হবে।’ এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত আর কিছু বলেননি। পর দিন জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেন, শান্তি কেনার জন্য তার দেশ রাশিয়াকে কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেবে না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জেলেনস্কি লেখেন, ইউক্রেনীয়রা দখলদারের কাছে নিজেদের ভূমি দেবে না। আমাদের স্বার্থবিরোধী যে কোনো সিদ্ধান্ত, আর ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে নেয়া যে কোনো সিদ্ধান্ত হবে শান্তির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের সঙ্গে ফোনালাপে জেলেনস্কি ইউক্রেনের মিত্রদের প্রতি টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘স্পষ্ট পদক্ষেপ’ নেয়ার আহ্বান জানান। শনিবার রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে ইউরোপীয় নেতারা বলেন, সক্রিয় কূটনীতি, ইউক্রেনকে সহায়তা ও রুশ ফেডারেশনের ওপর চাপ সৃষ্টি- এ তিনটিকে মিলিয়ে একটি যৌথ পদ্ধতিই শুধু রাশিয়ার অবৈধ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সফল হতে পারে।

ইউরোপের নেতারা ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ইউক্রেনকে সমর্থন অব্যাহত রেখে, পাশাপাশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ ও তা বজায় রেখে তারা ট্রাম্পকে যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিকভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন এ যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন। 

এই নেতারা আরো বলেন, একটি সমাধানে অবশ্যই ইউক্রেন ও ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা গ্যারান্টি যা ইউক্রেনকে তার সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা কার্যকরভাবে রক্ষার সক্ষমতা দেবে। ইউরোপীয় নেতারা বিশ্বাস করেন, ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে দেশটিতে শান্তির পথ নির্ধারণ করা যাবে না।

ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠকের দিন ঘোষণার পর নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে শনিবার যুক্তরাজ্যে বৈঠক করেন কিয়েভের মিত্র দেশগুলোর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা। তাদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের প্রতিনিধিরা। 

এদিকে, টেলিফোনে জেলেনস্কি, স্টারমার ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জের সঙ্গে কথা বলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ। তিনি বলেন, ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ ইউক্রেনীয়দের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্ধারণ করা যাবে না। সেই সঙ্গে ইউরোপকেও আলোচনায় যুক্ত হতে হবে।

এ বছর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে তিন দফা শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযান শুরু করে। তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে কয়েক হাজার মানুষ নিহত ও লাখ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের ‘সুযোগ আছে’

পুতিন এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সঙ্গে যুদ্ধ অবসানের পথ খুঁজে পেতে কোনো ধরনের আলোচনায় বসতে রাজি নন। তবে জেলেনস্কি তিনমুখী আলোচনা চান। তিনি মনে করেন, পুতিনের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ছাড়া শান্তির পথে অগ্রগতি সম্ভব নয়।

তবে শনিবার হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, পুতিন ও জেলেনস্কিকে নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করার ইচ্ছা আছে ট্রাম্পের, কিন্তু আপাতত রুশ প্রেসিডেন্টের অনুরোধে কেবল রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের দুই নেতার মধ্যেই বৈঠক হচ্ছে।

ট্রাম্প এর আগে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক দিয়ে শুরু করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি ‘রাশিয়াকে দিয়েই শুরুর’ পরিকল্পনা করছেন, তবে পুতিন ও জেলেনস্কিকে নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের ‘সুযোগ আছে’ বলে তার বিশ্বাস।

তবে এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের ব্যাপারে পুতিন আদৌ রাজি হবেন কিনা তা অনিশ্চিত। সাড়ে তিন বছর আগে তিনি প্রতিবেশী দেশটিতে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করার পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের দুই নেতা কখনো মুখোমুখি বসেননি।

স্বাগত জানাল ভারত

আলাস্কায় হতে যাওয়া ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে বৈঠকের জন্য সমঝোতাকে স্বাগত জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৫ সালের ১৫ আগস্ট আলাস্কায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকের সমঝোতাকে স্বাগত জানায় ভারত। এই বৈঠক ইউক্রেনে চলমান সংঘাতের অবসান ঘটানোর এবং শান্তির সম্ভাবনা উন্মোচনের প্রতিশ্রুতি বহন করে।

প্রসঙ্গত, রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে গত বুধবার ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। ফলে আগের ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কসহ ভারতীয় পণ্যে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাড়তি শুল্ক আরোপ করার বিষয়ে আগেই ভারতকে হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তখন তার অভিযোগ ছিল, রাশিয়া থেকে তেল কিনে ইউক্রেনে হামলায় মস্কোকে সহায়তা করছে ভারত।

বৈঠকের ভেন্যু কেন আলাস্কা

আলাস্কা কেন এই বৈঠকের ভেন্যু হলো, তা-ও বেশ গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা দরকার। একসময় রাশিয়ার অংশ ছিল এই অঞ্চল যা ১৮৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করা হয়। তাই আলাস্কায় বৈঠক আয়োজন একদিকে দুই দেশের ইতিহাস ও সম্পর্কের প্রতীকী অর্থ বহন করে। অন্যদিকে, এটি তুলনামূলক কম জনবসতিপূর্ণ, নিরাপদ ও সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য এলাকা হওয়ায় শীর্ষ নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও সহজ হয়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য ছিল এই বৈঠককে কোনো দেশের রাজধানীর বাইরের নিরপেক্ষ মঞ্চ হিসেবে গড়ে তোলা, যেখানে কোনো পক্ষই নিজেদের আধিপত্য জানান দিতে পারবে না। আলাস্কা সেই মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে, যা কূটনৈতিক সৌহার্দ বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

তাই এই বৈঠক কেবল দুই দেশের সম্পর্কের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্ব রাজনীতির জন্য একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা সবকিছুর ওপর এর প্রভাব পড়বে দীর্ঘদিন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

৭ মাসে 'মব সন্ত্রাসে' নিহত ১১১: আসক

৭ মাসে 'মব সন্ত্রাসে' নিহত ১১১: আসক

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রসারে দরকার বরাদ্দ বৃদ্ধি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব

গোলটেবিল আলোচনায় বললেন বিশেষজ্ঞরা মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রসারে দরকার বরাদ্দ বৃদ্ধি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব

ইসির প্রাথমিক বাছাইয়ে টিকলো যে ২২ রাজনৈতিক দল

ইসির প্রাথমিক বাছাইয়ে টিকলো যে ২২ রাজনৈতিক দল

হল রাজনীতি নিষিদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন- কার লাভ, কার ক্ষতি

হল রাজনীতি নিষিদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন- কার লাভ, কার ক্ষতি

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App