ফিলিস্তিন বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচারের দাবি: ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ০৯:২৫ এএম

ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব লিডস-এর অধ্যাপক সালমান সাইয়েদ। ছবি : সংগৃহীত
বর্তমান বিশ্বে ফিলিস্তিন প্রশ্নটি কেবল একটি আঞ্চলিক সংকট নয়, বরং এটি বৈশ্বিক ন্যায়বিচারের এক প্রতীক হয়ে উঠেছে। ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব লিডস-এর অধ্যাপক সালমান সাইয়েদ সম্প্রতি এমনই মন্তব্য করেছেন। তিনি বলছেন, ফিলিস্তিনের সংগ্রাম আজকের বিশ্বের পশ্চিমা উপনিবেশবাদ ও বৈষম্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার চরম সীমাবদ্ধতা উন্মোচন করছে।
এই বক্তব্য সালমান সাইয়েদ তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ‘রিওরিয়েন্টিং রেজিস্ট্যান্স’ শীর্ষক চতুর্থ ক্রিটিকাল মুসলিম স্টাডিজ সম্মেলনে দেন। সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গবেষক, একাডেমিক ও চিন্তাবিদরা একত্রিত হন। সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ছিল ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে প্রচলিত জ্ঞানকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা, বিশেষ করে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে। সাইয়েদ মনে করেন, এই ধরণের আলোচনা ও চিন্তাভাবনা ভবিষ্যতের বিশ্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বার্তাসংস্থা আনাদোলুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সালমান সাইয়েদ বলেন, ফিলিস্তিন প্রশ্নটি মূলত একটি বৃহত্তর ন্যায়বিচারের আহ্বান। তিনি উল্লেখ করেন, আজকের দুনিয়ায় মুসলমানদের নিজেদের সরকার কিংবা বৈশ্বিক রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। ফিলিস্তিনের ঘটনাবলী এই সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
আরো পড়ুন : গাজায় আরো ৬০ মরদেহ উদ্ধার, নিহত ছাড়াল ৫৪ হাজার
তিনি বলেন, যদি আমরা টেলিভিশনের পর্দায় সরাসরি নির্যাতনের শিকার মানুষদের রক্ষা করতে না পারি, তাহলে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থাকে পুনর্বিবেচনা করা জরুরি। তাঁর মতে, ফিলিস্তিন হচ্ছে পশ্চিমা উপনিবেশবাদের সর্বশেষ প্রতিষ্ঠিত উপনিবেশিক বসতি।
তিনি আরো বলেন, ফিলিস্তিনের সংগ্রাম এখন শুধু একটি অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা বিশ্বব্যাপী প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। তিনি উদাহরণ দেন লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশের, যারা ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এটি বৈশ্বিক সহমর্মিতা ও প্রতিরোধের লক্ষণ বলেই তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে প্রতিরোধ বা রেজিস্ট্যান্স-এর ধারণা পশ্চিমা গণমাধ্যম ও একাডেমিক চর্চা থেকে অনেকটাই বাদ পড়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তথাকথিত 'লিবারেল' আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা মুসলমানদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই পরিস্থিতি নতুন ধরনের বৈশ্বিক সংহতি গড়ে তোলার আহ্বান জানায়।
সাইয়েদ মনে করেন, কেবল জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বর্তমান সংকটগুলো বোঝা যাবে না। বরং বৈশ্বিক পর্যায়ে গবেষক ও সচেতন ব্যক্তিদের একত্রিত করে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা জরুরি। সম্মেলনের অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল ডিকলোনাইজেশন (উপনিবেশমুক্তি) ও এম্যান্সিপেশন (মুক্তি)। তিনি বলেন, যদিও অনেক মুসলিম দেশ ৫০ থেকে ৭০ বছর আগে স্বাধীনতা লাভ করেছে, তবু প্রকৃত সার্বভৌমত্ব এখনো অর্জিত হয়নি।
তিনি গণতন্ত্র প্রসঙ্গেও বলেন, যদি কোনো দেশের সরকার স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, তাহলে শুধু ভোটাধিকার থাকলেই গণতন্ত্র কার্যকর হয় না। প্রকৃত গণইচ্ছার প্রতিফলন তখনই সম্ভব, যখন সরকারগুলো বাইরের চাপমুক্ত হয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।