বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘আজ যখন দেখি আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তির হাতে চলে যাচ্ছে, তখন আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া ছাড়া কোনো পথ নেই। একইসঙ্গে আমাদের শক্তি এতই কম যে, আমরা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারছি না। আমি জানি না তরুণরা সাহস নিয়ে এগিয়ে আসবে কি না। যদি না আসে, তাহলে আফগানিস্তানের চেয়েও খারাপ অবস্থা দেখবে বাংলাদেশ।’

রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ‘মহান ভাষা আন্দোলনে কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহার অনবদ্য ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল)।

তিনি আরো বলেন, ‘আফগানিস্তানে তো অন্তত আমেরিকানরা সৈন্য দিয়ে চুক্তি করে রক্তের হলি খেলা ঠেকিয়ে রেখেছে, বাংলাদেশে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। দেখা যাবে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক দেশে রূপান্তরিত হয়েছে।’

মেনন বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের কাটা মুণ্ডু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাওয়া গেল। যদি বিএনপির আমলে এটি হতো, তাহলে বুদ্ধিজীবীরা এতক্ষণে রাস্তায় ১০টি মিছিল করতেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (ঢাবিশিস) বিবৃতি দিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাস্তায় নেমে পড়ত। কিন্তু কিছুই হয়নি। সাবাশ ছাত্র ইউনিয়নের ছেলেরা। তারা একটি প্রতিবাদী ভাস্কর্য তৈরি করেছে এবং সেটি ভেঙে ফেলার পর আবার সাহস করে ভাঙা টুকরোগুলো কুড়িয়ে এনে পুনঃস্থাপন করতে পেরেছে।’

ভাষা আন্দোলনে মোহাম্মদ তোয়াহার অবদান তুলে ধরে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি আরো বলেন, ‘আমাদের মাতৃভাষাকে রক্ষা করার জন্য এবং তার মধ্য দিয়ে নতুন জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটানোর জন্য যারা অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করেছেন তাদের মধ্যে তোয়াহা অন্যতম।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে নতুন করে নতুন কিছু লেখা হচ্ছে। কিন্তু এই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত যখন হয়, তার ধারাক্রম কেউ পাল্টাতে পারবে না। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ প্রথম ভাষা আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। সেই আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু যেমন ছিলেন, তেমনি তোয়াহাও ছিলেন। তাই কাউকে বাদ দিয়ে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস রচনা করা যাবে না।’

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন শুধু বাংলার স্বতন্ত্রবোধ, জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি করেনি, এদেশের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়িয়েছে। সেদিন বাংলাকে হিন্দুর ভাষা বলে আন্দোলনকে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ভাষা আন্দোলন সাম্প্রদায়িকতা, দক্ষিণপন্থা, দ্বিজাতি তত্ত্বের বিরুদ্ধে এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।’

এমএলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, এমএলের পলিট ব্যুরোর সদস্য লুৎফর রহমান, সাইফুল হক মাস্টার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইমুম হক প্রমুখ।