যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের ঢাকা সফর নিয়ে যা বললেন কূটনীতিকরা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৩, ১১:১৪ পিএম


সফররত যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক নিরাপত্তা বিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি উজরা জেয়া গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।


সফররত যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক নিরাপত্তা বিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি উজরা জেয়া সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, ওয়ালিউর রহমান, তৌহিদ হোসেন ও ঢাবির অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ।

যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক নিরাপত্তা বিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি উজরা জেয়া সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া চার দিনের সফরে মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান। এরপর বুধবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে এসে ঢাকায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে একের পর এক মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। মার্কিন প্রতিনিধি দলের এই সফরে ঢাকা যতটা চাপে থাকার কথা ভেবেছিল তা হয়নি। বরং এই সফর থেকে সরকার অনেকটা স্বস্তিতে আছে। এমনকি ওয়াশিংটন থেকে যে স্বরে কথা উঠেছিল ঢাকা আসার পর সেই স্বরও প্রায় ক্ষীণ হয়ে যায়।
রাজনৈতিক অনিষ্পন্ন ইস্যু বাংলাদেশই ঠিক করবে, বিরোধীদের দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং সংবিধান নিয়ে সফরকারি দলটি কোনো কথা না বলায় সরকার পুলকিত। সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে খানিকটা কথা বললেও সরকার বলছে, এটিতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চান। কাজেই এ আর নতুন কি।
[caption id="attachment_447367" align="aligncenter" width="700"]
‘তারা বলতে চাইছে, আমাদের শত্রু মনে করো না। আমাদের দুই দেশেরই কমন এজেন্ডা রয়েছে, যার মধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক এক নম্বর’
জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলটি আমাদের আশ্বস্ত করতে আসছে। তারা বলতে চাইছে, আমাদের শত্রু মনে করো না। আমাদের দুই দেশেরই কমন এজেন্ডা রয়েছে, যার মধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক এক নম্বর। নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের বার্তা বিশ্লেষণ করে মনে হল, দুই জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এখানে এসেছেন। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে এখানকার নির্বাচন নিয়ে কোনো অস্থিরতা দেখতে চান না।
[caption id="attachment_447371" align="aligncenter" width="700"]
তিনি বলেন, সফরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই সফরটি হয়েছে।
‘বাংলাদেশ নিয়ে ওয়াশিংটন যে স্বরে কথা বলেছিল সফরকারি দলটি যখন দিল্লিতে আসে তখনই সেই স্বরের তীব্রতা কমে যায়’
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালিউর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে ওয়াশিংটন যে স্বরে কথা বলেছিল সফরকারি দলটি যখন দিল্লিতে আসে তখনই সেই স্বরের তীব্রতা কমে যায়। ঢাকায় আসার পরে তাদের স্বর আরো নরম হয়ে যায়।
[caption id="attachment_447368" align="aligncenter" width="700"]
তিনি বলেন, মার্কিন এই প্রতিনিধি দলটি যখন দিল্লি এসেছিল তখনই দেশটির পক্ষ থেকে তাদের ব্রিফ দেয়া হয়। এতে বলা হয়, ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঢাকা। তোমরা সেখানে গিয়ে এমন কিছু বলো না যাতে আমাদের সম্পর্কের ক্ষতি হয়। দিল্লি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বুঝিয়েছে, বাংলাদেশকে নিয়ে চিন্তা করো না। তারা আমাদের বন্ধু। ঢাকা সফরে ওই বার্তাটিই প্রকাশিত হতে দেখা গেল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘তারা মিডিয়াকে আড়াল করে বাংলাদেশকে এমন কোনো বার্তা দিয়েছে যা আমরা জানি না’
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেছেন, এতটুকু বলার জন্য এতদূর থেকে আসার দরকার ছিল না। আর এলোই যদি তাহলে দিল্লি হয়ে আসার কারণ কি?
তিনি বলেন, তারা মিডিয়াকে আড়াল করে বাংলাদেশকে এমন কোনো বার্তা দিয়েছে যা আমরা জানি না।
[caption id="attachment_447375" align="aligncenter" width="700"]
উজরা জেয়া বলেছেন, নির্বাচন, সংলাপসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশ ঠিক করবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু এটি করার জন্য বাংলাদেশের ওপর কে কতটুকু চাপ দিচ্ছেন এটাই গুরুত্বপূর্ণ।
‘তাদের কথাবার্তা শুনে বোঝাই যাচ্ছে এখানকার নির্বাচনে সবাই ভোট দিতে পারলেই তারা খুশি। বিরোধীদলের দাবি, সংবিধান পরিবর্তন-এসব নিয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেছেন, তাদের কথাবার্তা শুনে বোঝাই যাচ্ছে এখানকার নির্বাচনে সবাই ভোট দিতে পারলেই তারা খুশি। বিরোধীদলের দাবি, সংবিধান পরিবর্তন-এসব নিয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। এখন দেখা যাবে-বিরোধীদল কিভাবে এসব মোকাবিলা করে।
মার্কিন সফরকারী দলটি বাংলাদেশকে আর চাপ দিতে চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর কত চাপ দেবে? বাংলাদেশ তো আগের বাংলাদেশ নেই। বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভালো রাখারও তাগিদ আছে এই সফরে।
আরও পড়ুন: