উসকানিদাতারা চিহ্নিত অভিযানে র্যাব-পুলিশ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০১৮, ০২:০২ পিএম

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গুজব ছড়িয়ে ও উসকানি দিয়ে সহিংসতা ছড়ানোর দায়ে অভিযুক্তদের সন্ধানে একযোগে কাজ করছে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবকটি ইউনিট। এরইমধ্যে শতাধিক উসকানিদাতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে গুজব রটনাকারী শতাধিক আইডিও শনাক্ত করা হয়েছে। এসব আইডির অধিকাংশ ফেক বলে জানা গেছে। এরইমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মোট ৫১টি মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ৫ শতাধিক ব্যক্তিকে। এসব মামলায় গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত মোট ৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে সাভার মডেল থানায়ও অনুরূপ মামলা করেছে পুলিশ। পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, উসকানিদাতা ও গুজব যারা ছড়িয়েছে তাদের চিহ্নিত করা গেছে। অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের ধরতে অভিযান চলছে। ফেক আইডি বন্ধ করতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, যারা স্কুল-কলেজ পড়–য়া কিশোরদের আন্দোলনকে উসকে দিয়ে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করেছিল তাদের ধরতে অভিযান চলছে। বেশ কয়েকজনকে আটক করা গেছে। তিনি বলেন, বিদেশে বসেও কেউ কেউ এমন অপকর্ম করেছে। পুলিশ এ নিয়ে কাজ করছে।
পুলিশ জানায়, শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী ২৯ জুলাই দুপুরে বিমানবন্দর সড়কে দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় গড়ে ওঠা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনে সহিংস ঘটনা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানির পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মোট ৫১টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় বুধবার সকাল পর্যন্ত মোট ৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে দণ্ডবিধি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মোট ৪৩ মামলায় ৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আন্দোলনে সহিংস ঘটনা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানির পরিপ্রেক্ষিতে রমনা বিভাগে মোট ১৪টি মামলা করা হয় এবং মোট ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যার মধ্যে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা হয় ১০টি, গ্রেপ্তার করা হয় ২০ জনকে। ৮৪ জনকে আসামি করে দায়ের করা ৪টি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় ১৩ জনকে। ১৪টি মামলার মধ্যে ১৩টির তদন্ত করছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ এবং একটি মামলা তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ।
লালবাগ বিভাগে একজনসহ অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনকে আসামি করে একটি মামলায় গতকাল পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওয়ারী বিভাগে মামলা হয়েছে ২টি। অজ্ঞাতনামা ৩৫০/৪৫০ জনকে আসামি করে করা দুই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় একজনকে। মতিঝিল বিভাগে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ৬টি মামলা করা হয়েছে। ৬টি মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তেজগাঁও বিভাগে ৬ জনকে আসামি করে দুটি মামলা করা হয়েছে। যার মধ্যে ২ জন এজাহারনামীয়সহ সন্দিগ্ধ আরো ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিরপুর বিভাগের মিরপুর মডেল থানায় বিইউবিটি ইউনিভার্সিটি ও কমার্স কলেজসহ অন্যান্য কলেজের অজ্ঞাতনামা ৫০০/৬০০ ছাত্র-শিক্ষককে আসামি করে ১টি মামলা, অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনকে আসামি করে কাফরুল থানায় ১টি মামলা এবং ৯৬ জনকে আসামি করে আরো ৩টিসহ মোট ৫টি মামলা করা হয়েছে। গুলশান বিভাগে অজ্ঞাতনামা ২০০০/২৪৫০ জনকে আসামি করে ৭টি মামলা এবং ৩১ জনকে আসামি করে আরো ২টি মামলাসহ মোট ৯টি মামলা করা হয়েছে। ৯টি মামলায় মোট ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উত্তরা বিভাগে অজ্ঞাতনামা ১০০/১৫০ জনকে আসামি করে ৩টি মামলা এবং ১১৩ জনসহ অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি মামলাসহ মোট ৪টি মামলা করা হয়েছে। মামলায় মোট ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ২৯ জনকে আসামি করে দায়ের করা মোট ৮টি মামলায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৮টি মামলার মধ্যে ৪টি মামলা ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগ, একটি ডিবি পুলিশ এবং একটি থানা পুলিশ তদন্ত করছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উসকানিমূলক মিথ্যা তথ্য অপপ্রচারের দায়ে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন আহমাদ হোসাইন (১৯) ও নাজমুস সাকিব (২৪)। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) শারমিন জাহান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গ্রেপ্তারকৃত দুজনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন উসকানিমূলক পোস্ট ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেয়া চেষ্টা করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ও ৬৬ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। শারমিন জাহান বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে যারাই এসব অপপ্রচার করবে অথবা করছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
অন্যদিকে নাশকতার চেষ্টা ও উসকানি দেয়ার অভিযোগে রবিবার সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। মামলায় সাভারের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু, তার ছোটভাই সাভার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দেওয়ান মাইন উদ্দিন বিপ্লবসহ ৩শ জনকে আসামি করা হয়।