×

জাতীয়

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট

টানা ৭ দিন সেবাহীন, সংকট কবে কাটবে তাও জানা নেই

Icon

সেবিকা দেবনাথ

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০৪:২৩ পিএম

টানা ৭ দিন সেবাহীন, সংকট কবে কাটবে তাও জানা নেই

ছবি: সংগৃহীত

টানা ৭ দিন যাবত চিকিৎসাসেবা বন্ধ আছে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট (এনআইও) ও হাসপাতালে। বলা যায়, পুরোপুরি অচল। বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের দুটি গেটই। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের বন্ধ গেটের সামনে ভিড় করছেন রোগী ও তার স্বজনরা। সেবা না পেয়ে ক্ষোভ ঝাড়ছেন অনেকেই। তারা বলছেন, একটি সরকারি হাসপাতালে এতদিন সেবা বন্ধের নজির ইতিহাসে নেই। এই দুর্ভোগ নিরসনে সরকার কেনো দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছেন না এ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

হাসপাতালের ভেতরে অবস্থানরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ডেকে অনেকেই জানতে চাইছেন হাসপাতাল বন্ধের কারণ। উত্তরে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যরা বলছেন, মারামারির কারণে হাসপাতাল বন্ধ। কখন সেবা কার্যক্রম চালু হবে তা কর্তৃপক্ষই জানেন। তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তবে জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় আহত ৫৫ জন এবং মহিলাসহ ২০ থেকে ২৫ জন রোগী এই হাসাপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন।

সোমবার (২ জুন) আগারগাঁওয়ে ২৫০ বেডের জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সরেজমিন চিত্রটি এমনই ছিলো। জানা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। দৈনিক শতাধিক রোগীর অস্ত্রোপচার হয়। গত ৭ দিন যাবৎ বিপুলসংখ্যক রোগীর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। শুধু নতুন রোগীই নয়, হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর ফলোআপ চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাও পড়েছেন বিপাকে।

কেরাণীগঞ্জের জিঞ্জিরা থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন পারভিন (৩৬)। এটি সরকার হাসপাতাল, চিকিৎসাও ভালো। আমি এর আগেও চোখের সমস্যা নিয়ে এখানে এসেছিলাম। বিনামূল্যে চারটা ইঞ্জেকশন পেয়েছি। তখন চোখ ভালো হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার  সমস্যা হচ্ছে। তাই হাসপাতালে এসেছি। এসে দেখি হাসপাতাল বন্ধ। আমাদের মতো গরিব রোগীদের জন্য এই হাসপাতালই ভরসা। 

গত শনিবার চোখের অস্ত্রোপচার হয়েছিলো ষাটোর্ধ্ব রহমত আলীর। ফলোআপ চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন এদিন। এসে দেখেন হাসপাতাল বন্ধ। তার মেয়ে জানান, এখন কোথায় যাবো তাই ভাবছি। রহমত আলীর মতো ফলোআপ চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এসেছিলেন মালা বিশ্বাস। মালা বিশ্বাসের ছেলে বিশ্বজিৎ বলেন, এই খবরটা জানতাম না। অসুস্থ মা’কে নিয়ে সেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এসেছি। হাসপাতালের গেট বন্ধ। কেউ কিছুই বলছে না। আনসারদের জিজ্ঞেস করলে বলছে, মারমারির কারণে হাসপাতাল বন্ধ। কবে খুলবে তাও কেউ জানে না। কোনও সরকারি হাসপাতাল এভাবে বন্ধ থাকতে পারে? 

শ্যামলী ৪ নং রোডের বাসিন্দা কায়সার আহমেদ (৪৮) এসেছিলেন হাসপাতালে। তিনি বলেন, কাছাকাছি এলাকায় থেকেও হাসপাতাল বন্ধের খবরটা আমি জানতাম না। আদাবর থেকে নবজাতক কন্যা সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন মারুফ হোসেন। তিনি বলেন, হাসপাতাল বন্ধের বিষয়টি আমি জানতাম না। এখানে এসে জানলাম। তবে সরকারি একটি হাসপাতাল এত দিন বন্ধ-এটি সত্যিই অপ্রত্যাশিত। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। তবে হাসপাতাল বন্ধের বিষয়টি যদি সরকারি ভাবেও মিডিয়াতে প্রচারিত হয় তাহলে মানুষের এই যে ভোগান্তি তা হতো না। হাসপাতাল বন্ধ জানলে তো লোকজন আর আসতো না। 

দায়িত্বরত আনসার সদস্য দেলোয়ার জানান, হাসপাতালে প্রতিদিনই রোগী আসছে। হাসপাতাল বন্ধ এটি আমরা তাদের বলছি। কবে হাসপাতাল খুলবে তা আমরা জানি না। হাসপাতালে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে কয়েকজন চিকিৎসাধীন আছেন। হাসপাতালের ভেতরে চিকিৎসাধীন আছেন এমন কয়েকজনকে দেখা গেলো বারান্দায় পায়চারি করতে। কেউ কেউ আবার খোলা জায়গায় হাঁটছেনও।  

এদিকে এনআইওর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম ভোরের কাগজকে জানান, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত না হলে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারিরা হাসপাতালে যোগ দেবেন না। ঈদের আগে হাপসাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু হতে পারে কি না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি ‘আন সার্টেন’। নিরাপত্তার বিষয়ে ইতোমধ্যেই স্থানীয় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ কে ছেন। বলেছেন, সেনাবাহিনী ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। 

প্রসঙ্গত, নানা দাবিতে গত ২৫ মে হাসপাতাল পরিচালকের কক্ষে বিষপান করেন চার আহত তরুণ। এর রেশ না ফুরাতেই মঙ্গলবার (২৭ মে) পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরীকে অবরুদ্ধ করে গায়ে পেট্রোল ও কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান তারা। ২৮ মে চিকিৎসক ও জুলাই আন্দোলনে আহতদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এই মারামারির ঘটনায় চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীসহ ১৫ থেকে ২০ আর জুলাই আন্দোলনে চিকিৎসাধীন ১০ জন আহত হয়। 

এ ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা কাজ বন্ধ করে দেন এবং নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা না হলে তারা কাজে যোগ দেবেন না জানান। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালকের দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। পরে তাকে সাত দিনের ছুটি দেয়া হয়। তার স্থানে ডা. জানে আলমকে দায়িত্ব দেয়া হয়। 

এদিকে চক্ষু হাসপাতালের অচলাবস্থা নিরসনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় যে উদ্যোগ নিয়েছে তা জানিয়ে ৩১ মে এক বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সেবাবঞ্চিত সব রোগীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি চক্ষু চিকিৎসার রোগীদের অন্তর্বর্তীকালীন বন্দোবস্ত হিসেবে নিকটস্থ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। চিকিৎসাসেবা দেয়ার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত হলেই সেবাদানকারীদের মাধ্যমে হাসপাতালটিতে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা আবারও শুরুর সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

ভাঙ্গায় বাস ও মাহিন্দ্রার সংঘর্ষে নিহত ৪

ভাঙ্গায় বাস ও মাহিন্দ্রার সংঘর্ষে নিহত ৪

মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারীরা পাচ্ছেন বিশেষ স্বীকৃতি

অধ্যাদেশ জারি মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারীরা পাচ্ছেন বিশেষ স্বীকৃতি

পাঞ্জাবকে হারিয়ে প্রথমবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু

পাঞ্জাবকে হারিয়ে প্রথমবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু

সিঙ্গাপুর ম্যাচ খেলতে ঢাকায় সামিত সোম

সিঙ্গাপুর ম্যাচ খেলতে ঢাকায় সামিত সোম

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App