×

সাময়িকী

মালিকানার পরিবর্তন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৭:১৮ পিএম

মালিকানার পরিবর্তন
   

অফিসের কাজে দু’বছর পর চট্টগ্রাম আসলো অর্ণব। জিইসি’র পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় চোখ পড়লো একটা রেস্টুরেন্টের দিকে। থমকে দাঁড়ালো সে। মাত্র দু’বছরে এতো পরিবর্তন? তার স্মৃতিতে ভেসে উঠলো আগের চিত্র। সাধারণ চেয়ার টেবিলে সাজানো-গোছানো এ রেস্টুরেন্টটি সকল শ্রেণির মানুষের আড্ডার অন্যতম জায়গা ছিল। অনেকটা আবেগ নিয়ে সে রেস্টুরেন্টের প্রবেশপথের সিঁড়িতে পা রাখলো। আগে সে সিঁড়িগুলো কতো দ্রুত বেয়ে চট করে দোতালায় উঠে যেত। আজ ধীরগতি। মনে হচ্ছে প্রতিটি সিঁড়ির সাথে তার আবেগ জড়িয়ে আছে। প্রতি পদক্ষেপে স্মৃতিগুলো যেন জেগে উঠছে। রেস্টুরেন্টে ঢুকার পর তার প্রথমে নজরে আসলো ম্যানেজারের আসনটির দিকে। আগে এখানে হাসিমাখা মুখে বসে থাকতো আদনান নামের এক যুবক।

অর্ণবকে দেখলেই সে হাসিমুখে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করতো। নতুন ম্যানেজারকে বেশ ভাবগাম্ভীর্য মনে হলো অর্ণবের। রেস্টুরেন্টের ভিতরের পরিবেশেরও আমূল পরিবর্তন হয়েছে। কাঠের চেয়ার টেবিলের পরিবর্তে সোফা ও কাচের টেবিল বসানো হয়েছে। ইন্টেরিয়র করা হয়েছে চমৎকারভাবে। অর্ণব খাবার নিয়ে ছোটাছুটি করা ওয়েটারদের মধ্যে পরিচিত মুখ খোঁজার চেষ্টা করলো। হঠাৎ চোখ পড়লো একজনের দিকে। অমল নামের ছেলেটি দু’বছর আগেও এখানে কাজ করতো। অর্ণবকে দেখেই সে ছুটে আসলো।

দাদা এতোদিন পর কোথা থেকে আসলেন? মানুষ চলে যাওয়ার আগে বলে তো যায়। আবেগমাখা কণ্ঠে বললো অমল। অর্ণব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, হঠাৎ করেই চলে গিয়েছিলাম। কারও কাছ থেকে বিদায় নিতে পারিনি। তোর ফোন নম্বর ছিল না। কেমন আছিস? ভালো মন্দ বুঝি না দাদা। দেখলেন তো আমি ছাড়া এখানে আর কেউ নেই। মায়ায় আর পড়ে যেতে পারিনি। ঠিকই বলেছিস। মায়া এক অদ্ভুত জিনিস। দেহের সাথে চামড়া যেমন লেগে থাকে, ঠিক তেমনি। চাইলেও সরানো যায় না। অমল এ কথার অর্থ বুঝলো কিনা কে জানে? সে সাথে সাথে বললো, দাদা নিশ্চয় দিদিও আসবেন দেখা করতে। আপনাদের প্রিয় টেবিলটা খালি আছে। চলেন আগে আপনাকে সেখানে বসিয়ে আসি। পরে আবার দখল হয়ে যাবে।

অর্ণব রেস্টুরেন্টের ডান পাশের কর্নারের টেবিলে গিয়ে বসলো। তার চোখে পড়লো শুধু জাগয়াটুকু বাদে কোনো কিছুই আগের মতো নেই। অমল সোফায় বসে বললো, দু’বছর আগে তোদের কতো করে বলেছিলাম চেয়ার টেবিলগুলো একটু পাল্টা। পাত্তাই দিলি না। আমিও চলে গেলাম আর তোরাও সব পরিবর্তন করলি। অমল বললো, আগের মালিকের বেশি টাকাপয়সা ছিল না। নতুন মালিক টাকাওয়ালা। তিনি নতুনভাবে সাজিয়েছেন। বেশ ভালোই লাগছে। নিশ্চয় তোরাও আগের থেকে ভালো আছিস।

অমল নিচু স্বরে বললো, দাদা সব টাকাওয়ালাদের আত্মা থাকে না। বাইরে রংচং মেখে ঘুরে বেড়ায়। দুই টাকা দান করলে ছবি তোলে দুই হাজার। আগের মালিকের মন আপনার মতোই বিশাল ছিল। তুই তো দেখি ভালোই কথা শিখেছিস। আগে তো নতুন বউয়ের মতো চুপচাপ অর্ডার নিয়ে চলে যেতি।

অমল মুচকি হাসি দিয়ে বললো, অনেকদিন পর দেখা তো। তাই জমানো কথাগুলো বললাম। যাই আমি। আপনার জন্য ব্ল্যাক কফি নিয়ে আসি। দিদি না আসা পর্যন্ত তো আপনার খাওয়া একটাই, ব্ল্যাক কফি। অমল চলে যাওয়ার পর চিন্তায় নিমগ্ন হয়ে পড়লেন অর্ণব। তার কাছে এতো সুন্দর ইন্টেরিয়র করা রেস্টুরেন্ট অসাড় লাগছে। মনে হচ্ছে কোনো প্রাণের স্পন্দন নেই। অথচ এখানের কাঠের চেয়ারে হৃদিতা যখন তার পাশে বসতো মনে হতো স্বর্গ। ভালোবাসার মানুষের অস্তিত্বে কাঠের চেয়ারও সোনার আসনের চেয়ে মূল্যবান মনে হতো। টানা তিন বছর এ স্বর্গ রাজ্য ছিল অর্ণব আর হৃদিতার দখলে। মাসে যে কয়দিন অর্ণব সময় করতে পারতো এখানেই আসতো। এখানের টেবিল দখল নিয়ে কতো মজার ঘটনাও রয়েছে তার। অনেক সময় হৃদিতা আসার ঘণ্টাখানেক আগেও সে রেস্টুরেন্টে চলে আসতো। দু’জন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষাও করেছে নির্ধারিত আসনে বসার জন্য। অর্ণবের এমন ছেলেমানুষিকতা দেখে হৃদিতা বলতো, আচ্ছা এক জায়গায় বসলেই তো হলো।

অর্ণব তখন হেসে বলতো, প্রেমের জন্য পরিবেশ লাগে। ওখানে বসে তোমাকে দেখবে। আর জানালার গ্লাস দিয়ে দেখবো মানুষের ছুটে চলার দৃশ্য। এমন পাবলিক রেস্টুরেন্টে সে প্রেমের পরিবেশ খুঁজো। চলো একদিন দূরে কোথাও যাই। বলতো হৃদিতা। একদিন সময় করে যাবো। সারাদিন দু’জন থাকবো। মাঝে তৃতীয় কেউ থাকবে না।

তোমার আর যাওয়া হবে না। তার আগেই দেখবা মা-বাবা আমাকে কারও হাতে তুলে দিয়েছে। তখন তোমার সময় থাকবে। সময় কাটানোর পরিবেশ পাবে। কেবল আমি থাকবো না। হঠাৎ এমন কথা বলছো কেন? বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে নাকি? হতে কতক্ষণ। তুমি তো আর আমার পরিবারকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছো না। হঠাৎ দেখবা একদিন আমি নাই। এই কথার পর অর্ণব চুপ হয়ে গিয়েছিল। ভাই কি ভাবছেন? অমলের এমন প্রশ্নে অতীত থেকে বর্তমানে ফিরলো অর্ণব।

অমল ব্ল্যাক কফি টেবিলে রেখে বললো, ভাই আপনি চলে যাওয়ার পর প্রায়ই আপনাদের অপেক্ষায় থাকতাম। কেন জানি একটা মায়া হয়ে গিয়েছিল আপনার প্রতি। ওয়েটারদের কেউ দাম দেয় না। আপনিই কেবল আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। দিদি তো চলে আসবে। সেই পুরোনো রেসিপি দিবো নাকি? অর্ণব হাসি দিয়ে বললো, তোর যা খুশি নিয়ে আস। আজ তোর পছন্দের খাবার খাবো।

না দাদা তা হবে না। কতো দিন পর আসছেন। আর আপনি যাওয়ার পর দিদিকেও আর দেখিনি। তাই দিদির রেসিপিই নিয়ে আসছি। চিকেন ফ্রাই আর কোক। এই বলে চলে গেল অমল। অর্ণবের স্মৃতিপটে ভেসে উঠলো হৃদিতার সেই ছেলেমানুষি। ঠাণ্ডার দিনেও সে কোক খাওয়ার জন্য জেদ করে বসে থাকতো। অর্ণবের কোনো যুক্তিই সে পাত্তা দিতো না। সর্বশেষ যেদিন বসেছিল সেদিন হৃদিতা একটা অনুষ্ঠান থেকে তাড়াহুড়ো করে দেখা করতে এসেছিল। প্রতিদিন পাশাপাশি বসলেও সেদিন সে চেয়ারটা সরিয়ে একটু দূরে বসেছিল। অর্ণব বলেছিল, কী ব্যাপার ঝগড়া ছাড়াই দূরত্ব বাড়িয়ে দিলে। কি নতুন প্রেমে পড়েছো নাকি?

ধুরু বোকা। তোমাকেই সামলাতেই আমার জীবন শেষ আবার নতুন প্রেম। দেখো না আমি ঘামে ডুবুডুবু হয়ে আছি। অর্ণব চেয়ারটা কাছে নিয়ে হৃদিতাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, তোমার শরীরের ঘামের গন্ধও আমার কাছে পারফিউমের মতো মনে হয়। তুমি যখন থাকবে না তখন চোখ বন্ধ করে আমি সে ঘ্রাণ নিবো। হৃদিতা হাত সরিয়ে বলেছিল, আর ন্যাকামি করতে হবে না। ঘামটা শুকাতে দাও। অর্ণব তখন আরও কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলছিল, এমনো তো হতে পারে এটা শেষ দেখা?

তোমার মাথায় খালি উল্টাপাল্টা চিন্তা। শোন আমি বাকি দশটা মেয়ের মতো না। পারিবারিক চাপে আমি যদি তোমাকে বিয়ে করতে না পারি তাহলে প্রয়োজনে একা থাকবো। আর যদি করতেও হয় বিয়ের আগের দিন হলেও তোমার সাথে নীরবে সারাদিন সময় কাটাবো। হয়তো তার আগেই তুমি আমাকে ভুলে যাবে। বলেছিল অর্ণব। এমন নানা কথায় কয়েকঘণ্টা কাটিয়ে দু’জনেই বাসায় ফিরে গিয়েছিল। সেদিনই মাঝরাতে হঠাৎ অর্ণবের মোবাইলে এসএমএস আসলো, ‘তুমি আমাকে ভুলে যাও। আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করো না। আমি যা করছি তা পরিবারের জন্য করছি। পারলে ক্ষমা করো।’

তারপর নির্ঘুম রাত কেটেছিল অর্ণবের। অনেক চেষ্টা করেও সে হৃদিতাকে ফোনে পায়নি। তাছাড়া ম্যাসেঞ্জারও বøক ছিল। প্রায় মাসখানেক অর্ণব চট্টগ্রামে উন্মাদের মতো কাটিয়েছিল। হৃদিতার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। সর্বশেষ একদিন সকালে হৃদিতার ফোন থেকে কল আসলো। বেশ আগ্রহ নিয়ে অর্ণব রিসিভ করলো। কিন্তু ওপাশ থেকে ভেসে আসল পুরুষ কণ্ঠ। কোনো পরিচয় না দিয়েই সে বললো, আপনি আমার হবু বউকে বিরক্ত করছেন। আমি আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। অর্ণব কি বলবে বুঝতে পারছিল না। একটু পর আবার এসএমএস আসলো, আমি হৃদিতা। আমাকে ক্ষমা করো। আসলো তোমার আমার সম্পর্কটা সে জেনে গেছে। তাই বিষয়টা ক্লেয়ার করতে ফোন দেয়ালাম। আমাকে মাফ করে দিও। পারলে শহর ছেড়ে চলে যাও।

সেদিন অর্ণবের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। এভাবে প্রতারণা করতে পারে কেউ? তাও আবার সাবলীলভাবে। এই কষ্টটা অর্ণব আর সহ্য করতে পারেনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে অর্ণবের অনেক বন্ধুরা ঢাকায় চলে গিয়েছিল। সে ঢাকার ছেলে হয়েও শুধুমাত্র হৃদিতার জন্য পড়ে ছিল। টিউশনের টাকা দিয়ে সে কষ্ট করে চললেও তা কোনোদিন হৃদিতাকে বুঝতে দেয়নি। অর্ণব এই দিনের কষ্টটা আর সহ্য করতে পারেনি। শহরের মায়া, মানুষের মায়া ছিন্ন করে ওই দিন রাতেই সে পাড়ি জমিয়েছিল ঢাকায়।

এমন সময় অমল স্যুপ নিয়ে টেবিলে রেখে বললো, দিদি আসলে কোক দিবো। উনি তো আবার ঠাণ্ডা কোক পছন্দ করেন। অমল চলে যাওয়ার পর অর্ণব আবার কল্পনার রাজ্যে প্রবেশ করলো। স্যুপের বাটি থেকে তখন ধোঁয়া উড়ছে। অর্ণবের কাছে মনে হচ্ছে তার জীবনটাও এমন ধোঁয়ার মতোই রয়ে গেছে। প্রিয় ব্ল্যাক কফি, স্যুপ কোনো কিছুতেই সে ধরলো না। এখানে বসে থাকা তার আর সহ্য হচ্ছে না। তাই সে অমলকে ডাকলো। অমল ছুটে এসে বললো, ভাই আর কিছু দিতে হবে? না। বিল নিয়ে আস। দিদি আসবে না? বিল কতো বল।

অমল কিছুটা মন খারাপ করে বললো চারশো। সেও হয়তো বুঝেছে অর্ণবের হৃদয়ের ভাঙন। কারণ দীর্ঘদিন এ রেস্টুরেন্টে এমন অনেক দৃশ্য সে দেখেছে। একজনের সাথে কেউ বেশি দিন আসেনি। আজ একজনের সাথে। আরেকদিন অন্যজনের সাথে। অমলের দেখা অর্ণব আর হৃদিতার জুটিই সবচেয়ে বেশিদিন একসাথে এখানে এসেছিল। অর্ণব পাঁচশো টাকার একটা নোট বের করে দিয়ে বললো, বাকিটা তুই রেখে দিস। অমল বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইল। আর কিছু বলার সাহস পেলো না সে।

অর্ণব দ্রুত রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলো। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছে কোনদিকে যাবে। পুরো শহর তাকে স্মৃতিকাতর করে তুলছে। এমন সময় একটা প্রাইভেটকার এসে তার থেকে একটু দূরে থামলো। সেখান থেকে প্রথমে একটি ছেলে বের হলো। তাকে দেখে অর্ণবের বুক কেঁপে উঠল। এ ছেলেটিকে নিয়ে হৃদিতার সাথে অসংখ্যবার তার ঝগড়া হয়েছে। সরাসরি ছেলেটির সাথে তার পরিচয় না থাকলেও ফেসবুকে তার ছবি দেখেছে। তাকে নিয়ে অর্ণব সন্দেহ করলে হৃদিতা সাবলীলভাবে বলতো উনি আমাদের সংগঠনের বড় ভাই। অর্ণব ভাবলো নিজের পরিচয় দিয়ে ছেলেটির সাথে কথা বলবে। ঠিক তখন গাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো হৃদিতা।

পরনে দামি শাড়ি, স্লিভলেস ব্লাউজ, চুল ব্রাউন কালার করা, হাতে ও গলায় দামি গহনা। অর্ণবের ভেতরটা নড়ে উঠলো। সে আবার হৃদিতাকে দেখার চেষ্টা করল। ছিমছাম চেহার সদ্য ফোটা গোলাপের মতো হৃদিতার শরীরে বেশ চর্বি জমেছে। অর্থের প্রাচুর্যে বাইরের আবরণের পরিবর্তন হয়েছে তার। কিন্তু এ দেহের মধ্যে অর্ণব আর কোনো শিহরণ অনুভব করলো না। তার কাছে হৃদিতাকে ইন্টেরিয়র করা রেস্টুরেন্টের মতো অসাড় মনে হলো। হৃদিতা ছেলেটির হাত ধরে একটা শপিং মলে ঢুকে গেলো। অর্ণব দাঁড়িয়ে থেকে ভাবতে থাকলো মালিকানার পরিবর্তন হলে হয়তো সবকিছু এভাবে বদলে যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

এবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু

এবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু

নুসরাত ফারিয়া বিমানবন্দরে আটক

নুসরাত ফারিয়া বিমানবন্দরে আটক

ঝড়-বৃষ্টির মাঝে তাপমাত্রা বৃদ্ধির আভাস

ঝড়-বৃষ্টির মাঝে তাপমাত্রা বৃদ্ধির আভাস

ভারতে ভবনে আগুন, শিশুসহ ১৭ জন নিহত

ভারতে ভবনে আগুন, শিশুসহ ১৭ জন নিহত

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App