×

রংপুর

বিপদসীমার ওপরে তিস্তা–ধরলার পানি, দিশেহারা চরাঞ্চলের মানুষ

Icon

শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট থেকে

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৩ পিএম

বিপদসীমার ওপরে তিস্তা–ধরলার পানি, দিশেহারা চরাঞ্চলের মানুষ

ছবি : ভোরের কাগজ

তিস্তা ও ধরলা নদীর শতাধিক চরের মানুষ কাটাচ্ছে আতঙ্ক আর নির্ঘুম রাত। রাতে হু হু করে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ভোরের আলো ফুটতেই তা কমতে থাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ পরিস্থিতির নেপথ্যে রয়েছে ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের পানি ব্যবস্থাপনার কারসাজি।

লালমনিরহাট জেলার দুই পাশ বেয়ে প্রবাহিত তিস্তা ও ধরলা নদী উজানের পাহাড়ি ঢল আর ভারী বর্ষণে অস্বাভাবিক আচরণ করছে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেকর্ড অনুযায়ী তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকাল ৯টায় তা নেমে আসে ১ সেন্টিমিটার নিচে। দুপুরে ৫ সেন্টিমিটার এবং বিকালে ১১ সেন্টিমিটার নিচে নেমে যায়। তবে বিকেলের পর ভারত গজলডোবা ব্যারেজ থেকে পানি ছাড়লে নদী আবার অগ্নিমূর্তি ধারণ করে।


মহিষখোচা চরবাসী মোখলেছ উদ্দিন বলেন, রবিবার রাতভর এক মুহূর্ত ঘুমাতে পারিনি। ভোর রাতে শো শো শব্দে পানি ঘরে ঢুকতে শুরু করে। চরজুড়ে কান্নার রোল পড়ে যায়। সবাই উঁচু জায়গায় আশ্রয় নেয়। কিন্তু সকাল হলে আবার পানি কমে যায়।

এভাবে হঠাৎ বাড়তি পানির প্রবাহ লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারীর বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ঘরবাড়ি, ফসল ও গাছপালা ভাসিয়ে নিয়ে যায়। পানি নামতে শুরু করলে শুরু হয় ভয়াবহ নদীভাঙন। ইতোমধ্যে হাতীবান্ধার ছয় ইউনিয়নে ২০০-র বেশি বসতভিটা বিলীন হয়েছে। সদর উপজেলার মোগলহাটের ফলিমারী চরে ধরলা নদী গিলে নিয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও স্থাপনা। হুমকির মুখে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

চরাঞ্চলের শত শত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অনেকেই এখন বাঁধ, রাস্তা, সরকারি জমি ও স্কুল মাঠে আশ্রয় নিয়েছে। ফসলি জমি ডুবে গেছে পানিতে। বাদাম, মরিচ, ভুট্টা ও ধানের খেত নষ্ট হয়েছে।

আরো পড়ুন : তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, খুলে দেওয়া হলো সব জলকপাট

স্থানীয়দের অভিযোগ, ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর পাড় দুর্বল হয়ে পড়েছে। তীব্র স্রোতে ধসে যাচ্ছে বিভিন্ন বাঁধ। হাতীবান্ধার গড্ডিমারীর তালেব মোড়ের ওয়াপদা বাঁধ ও বাইপাস সড়ক ঝুঁকির মধ্যে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি কাজের অংশ হিসেবে জিও ব্যাগ ফেলছে। তবে এ কাজে দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছে এলাকাবাসী।

২০১১ সালের পর থেকে তিস্তা বা ধরলা নদীর পানি নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি। ফলে ভারতীয় গজলডোবা থেকে পানি ছাড়ার আগাম তথ্য বাংলাদেশ পায় না। আগে পানি ছাড়ার খবর মাইকিং, পত্রপত্রিকায় প্রচার করা হলেও এখন তা বন্ধ। চরবাসীর অভিযোগ, এতে আগাম প্রস্তুতি নিতে না পারায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে।


পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, তারা দিনে মাত্র পাঁচবার পানির পরিমাপ রেকর্ড করেন। ৬টার পর আর কোনো পরিমাপ হয় না। এই দুর্বলতার সুযোগ নেয় ভারত। রাতে হু হু করে পানি ছাড়লেও তার সরকারি রেকর্ড থাকে না।

স্থানীয় সমাজকর্মী শফিকুল ইসলাম বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। লালমনিরহাটের স্বার্থ রক্ষা না করলে তিস্তা ব্যারেজের মতো এই প্রকল্পও অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে।

পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, কিছু কিছু জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। নদীর গতিবিধি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে আছে। তবে তিস্তা শাসন ছাড়া স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

বাজার থেকে ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বাজার থেকে ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

টস হেরে ব্যাটিংয়ে আমিরাত

এশিয়া কাপ টস হেরে ব্যাটিংয়ে আমিরাত

এরদোগানের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল আঙ্কারা

এরদোগানের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল আঙ্কারা

১৮ দিন পর হাসপাতাল ছাড়লেন নুর

১৮ দিন পর হাসপাতাল ছাড়লেন নুর

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App