বিজিবিতে চাকরি পেলেন ফেলানীর ছোট ভাই

রবিউল ইসলাম বাবুল, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৩৯ পিএম

ফেলানীর ছোট ভাই আরফান চাকরি পেয়েছেন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি)। ছবি : ভোরের কাগজ
সীমান্তে নির্মমভাবে নিহত কিশোরী ফেলানীর নাম আজও দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। সেই আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ১২ বছর পেরিয়ে এবার নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হলো লালমনিরহাট সীমান্ত। ফেলানীর ছোট ভাই আরফান অবশেষে চাকরি পেলেন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি)।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৫ ব্যাটালিয়নের আয়োজিত নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন ফেলানীর ছোট ভাই আরফান। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন ১৫ বিজিবির ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ঈমাম। এ সময় বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে আবেগাপ্লুত আরফান বলেন, আমার বোনকে সীমান্তে যেভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল তা শুধু আমাদের পরিবারকেই নয়, গোটা দেশকে কাঁদিয়েছিল। আজ বিজিবিতে চাকরি পেয়ে মনে হচ্ছে, বোনের আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে।
আরো পড়ুন : রাস্তার অভাবে অচল রায়গঞ্জের কোটি টাকার সেতু
ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশ ফেরার পথে আমার ছোট মেয়েকে গুলি করে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রেখেছিল বিএসএফ। সেই হৃদয়বিদারক দৃশ্য আজও চোখে ভাসে। তবে দেশবাসী ও বিজিবি সবসময় আমাদের পাশে ছিল। তারা আমাকে দোকান করে দিয়ে সহায়তা করেছে। আজ আমার ছেলে মেধা ও যোগ্যতায় বিজিবিতে সুযোগ পেল এটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ঈমাম বলেন, বিজিবি সর্বদা ফেলানীর পরিবারের পাশে রয়েছে। তার ছোট ভাই আরফান নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগ দেবে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রশিক্ষণ শেষে তিনি একজন দক্ষ সদস্য হিসেবে দেশের সেবায় নিয়োজিত হবেন।
তিনি আরো বলেন, ফেলানী হত্যার বেদনা গোটা জাতির। আজ তার ছোট ভাইকে বিজিবিতে চাকরি দিতে পেরে আমরা গর্বিত। আশা করি, সে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের সেবা করবে।
এলাকাবাসী জানান, ফেলানী হত্যার ১২ বছর পর তার ছোট ভাইয়ের বিজিবিতে যোগদান শুধু একটি চাকরি পাওয়া নয়, বরং এটি প্রতীকী ন্যায়বিচারের বার্তা। একই সঙ্গে সীমান্ত রক্ষায় বিজিবির সদস্যদের আরো উজ্জীবিত করবে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানী বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়ে কাঁটাতারে ঝুলে পড়েন। সেই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেশ-বিদেশে আলোড়ন তোলে। ন্যায়বিচার না পাওয়ার আক্ষেপ আজও রয়ে গেছে তার পরিবারে। তবে দীর্ঘদিনের সংগ্রামের পর এবার সেই পরিবারের একজন সদস্য সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীতে যুক্ত হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যেও স্বস্তি ফিরে এসেছে।