আজহারউদ্দিন-সোবার্সদের সঙ্গী হলেন মুমিনুল

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মুুুুমিনুল হক
কানপুরের গ্রিন পার্কে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের অবতারণা করেছেন মুুুুমিনুল হক। একপ্রান্তে মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান উইকেট বিলিয়ে দিলেও অপর প্রান্ত আগলে রেখেছেন এ বাঁ-হাতি ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি। স্বাগতিক ভারতীয় দলের শতশত সমর্থকের সামনে উঁচিয়ে ধরেন ব্যাট। সাকিব-লিটনের ব্যর্থতার দিনে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মুমিনুল হক। দারুণ এই সেঞ্চুরির পর মুমিনুলের পিঠ চাপড়ে দেন বিরাট কোহলি। বাঁ-হাতি এই ব্যাটারের ভারতের বিপক্ষে এটিই প্রথম সেঞ্চুরি।
কানপুরের উইকেট সাধারণত কিছুটা সেøা হয়ে থাকে। এখানে স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিশেষ করে চতুর্থ দিনে স্পিনারদের জন্য হয়ে উঠে স্বর্গরাজ্য। কানপুরে ব্যাটিং করা অতটা কঠিন না হলেও বল বেশ নিচু হচ্ছিল। স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা আদায় করে নিচ্ছিলেন। পাশাপাশি ভারতীয় পেসাররা দারুণ বোলিংও করছিলেন। এই অবস্থায় মুমিনুল যেভাবে দাপট দেখিয়েছেন, সেটি অবিশ্বাস্য। এদিন রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে সুইপ করে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন তিনি। সেঞ্চুরি ছুঁয়ে হেলমেট খুলেছেন, ব্যাট উপরে তুলে এরপর মুমিনুল সেজদা দিয়ে উদযাপন করেন সেই সেঞ্চুরি। ১৭২ বলে ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরির দেখা পান এই বাঁ-হাতি ব্যাটার।
শুক্রবার শুরু হওয়া কানপুর টেস্টের বৃষ্টিবিঘিœত প্রথম দিনটায় ৪০ রান করেছিলেন মুমিনুল। দুই দিন বিরতির পর গতকাল আবার শুরু হওয়া ম্যাচে প্রথম ড্রিংকস বিরতির আগেই ফিফটি পেয়ে যান মুমিনুল। তিন সঙ্গীকে হারিয়ে ফেললেও মুমিনুলের ব্যাটে রানের গতি শুধু বেড়েছে। ১১০ বলে ফিফটি ছোঁয়া বাঁ-হাতি ব্যাটার পরের ৫০ রান করেছেন ৬২ বলে। ৫০ থেকে ১০০ পর্যন্ত যেতেই ৭টি চার ও ১টি ছক্কা মেরেছেন।
মুমিনুল গতকাল সেঞ্চুরিটা পেয়েছেন লাঞ্চের আগে শেষ ওভারে। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের করা ওভারের দ্বিতীয় বলটাকে স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মেরেই সেঞ্চুরি উদ্?যাপনে মাতেন তিনি।
৪, ৪, ৬ তিনটি স্কোরিং শটেই ৭৮ থেকে ৯২-এ পৌঁছে যাওয়ার পরই যা একটু নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিলেন মুমিনুল। অশ্বিনের বলে একবার কাট করতে গিয়ে ক্যাচ তুললেও ঋষভ পন্ত নিতে পারেননি ক্যাচ। বল যে ব্যাটে লেগেছিল সেটি অবশ্য বোঝা গিয়েছিল আল্ট্রাএজ দেখার পর। মোহাম্মদ সিরাজের করা পরের ওভারে অবশ্য ভক্তদের ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন মুমিনুল। প্রথম সিøপে অল্পের জন্য তার ক্যাচ নিতে পারেননি বিরাট কোহলি। ওই বলে ১ রান নিয়ে ৯৬-এ পৌঁছানো মুমিনুল পরের ওভারেই পেয়ে যান সেঞ্চুরি। লাঞ্চে তিনি গেছেন ১০২ রান নিয়ে। বাংলাদেশের রান তখন ৬ উইকেটে ২০৫। মুমিনুল শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১০৭ রানে।
কানপুরের ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামে ১৯৪৫ থেকে এখন পর্যন্ত সেঞ্চুরি হয়েছে ৩৫টি। সর্বোচ্চ ৩টি সেঞ্চুরি ভারতীয় কিংবদন্তি ক্রিকেটার মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের। এই তালিকায় আছেন গ্যারি সোবার্স, ইয়ান বোথাম হতে শুরু করে কপিল দেব ও সুনীল গাভাস্কার। ২৭তম ক্রিকেটার হিসেবে মুমিনুল শতক হাঁকান ব্রিটিশ আমলে তৈরি ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়ামটিতে।
মুমিনুলের সেঞ্চুরির ইনিংসটি সাজানো ছিল ১৬টি চার ও ১টি ছয়ের মারে। ফিফটি করেন ১১০ বলে। ফিফটির পর সেঞ্চুরি পেতে খরচ হয় মাত্র ৬২ বল! চতুর্থ দিনজুড়ে মুমিনুলকে দেখা গেছে আগ্রাসি রূপে। কখনো সুইপ, কখনো পুল আবার কখনো ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা!
মুমিনুলের জন্যও এই সেঞ্চুরি বিশেষ কিছু। বিশেষ হওয়ার কারণ লম্বা সময় ধরে তিনি সেঞ্চুরিহীন। ১৩ ইনিংস আগে সর্বশেষ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। সর্বশেষ গত বছর জুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ১২১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত মার্চে ঘরের মাঠে টেস্টে সেঞ্চুরিবঞ্চিত হয়েছিলেন। যোগ্য সঙ্গীর অভাবে ৮৭ রানে অপরাজিত থাকতে হয়েছিল তাকে। এরপর আরো দুটি হাফ সেঞ্চুরি পেলেও সেঞ্চুরি পাচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি খরা কাটালেন সাবেক অধিনায়ক।
ভারতের বিপক্ষে প্রথম হলেও দেশের বাইরে এটি মুমিনুলের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দেশটির মাটিতে ১২৭ রানের ইনিংস খেলেছেন। এই সেঞ্চুরির আগে সবশেষ শতক ছিল ২০২৩ সালের জুনে মিরপুরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। টেস্ট ক্রিকেটে মুমিনুলের ১৩ সেঞ্চুরির পরে আছে মুশফিকের ১১ ও তামিম ইকবালের ১০টি।
মুমিনুলের এই ইনিংস নিয়ে প্রশংসা করেছেন ধারাভাষ্য দিতে কানপুরে আসা তামিম, ‘মুমিনুলের কোনো তাড়াহুড়ো ছিল না। স্বাচ্ছন্দ্যে খেলেছে, যে শটগুলো সে খেলেছে সব ছিল ক্রিকেটিং শট। সে এই ইনিংস নিয়ে নিশ্চয়ই গর্বিত হবে।’
কানপুর টেস্টের আগে ৬৪টি ম্যাচে মাঠে নেমেছেন মুমিনুল। প্রায় ৩৮ গড়ে ব্যাট করে ৪১৫৬ রান করেছেন তিনি। সঙ্গে রয়েছে ১২টি সেঞ্চুরি এবং ১৯টি ফিফটি। ৬৫তম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নেমে প্রথম ইনিংসেই নিজের ১৩তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি।
টেস্টে নিয়মিত হলেও দেশের জার্সিতে মাত্র ২৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। ২২ গড়ে রান তুলছেন ৫৫৭। অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন মাত্র ৬টি, রান তুলেছেন মাত্র ৬০।