একই আঙিনায় মসজিদ-মন্দির, সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৭ পিএম
একই উঠানে মসজিদ ও মন্দির। একপাশে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মসজিদ, নামাজ পড়ছেন মুসল্লীরা। অপরপাশে পূজামন্ডপ, চলছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। এক পাশে ধূপকাঠি, অন্য পাশে আতরের সুঘ্রাণ। এক পাশে উলুধ্বনি, অন্য পাশে চলছে নামাজ। যার যার ধর্ম সে সে পালন করছে। এভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যুগ যুগ ধরে চলছে পৃথক দু'টি ধর্মীয় উপাসনালয়। বলছিলাম পাবনা জেলা শহরের শালগাড়ীয়া এলাকার শতবর্ষী মসজিদ-মন্দিরের কথা।
সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করা হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। পূজার উৎসবমুখরতার পাশাপাশি পাবনায় হয়ে উঠেছে সম্প্রীতির উজ্জ্বল নিদর্শন। এক পাশে মন্দিরের ভেতরে-বাইরে চলছে পূজা-অর্চনা ও উলুধ্বনি। ঠিক একই সময়ে আরেক পাশে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা। তবুও নেই কোন হানাহানি, নেই কোন বাড়াবাড়ি।
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন হিসেবে পাবনা জেলা শহরের শালগাড়ীয়া এলাকায় পাশাপাশি এই শতবর্ষী মসজিদ-মন্দির। ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে; এর যথার্থই প্রমাণ পাবনার এই পুরান বাজার জামে মসজিদ ও পুরান বাজার কালীবাড়ি দুর্গা মন্দির। এ যেন ধর্মীয় সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বছরের পর বছর এভাবে চলে আসলেও দুই ধর্মাবলম্বী মানুষের এ নিয়ে কোনও দ্বন্দ্ব ।মন্দিরে এখন চলছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি। তবু আজানের সময় নীরবতা বজায় রাখেন পূজারি ও ভক্তরা। প্রতিবেশী হিসেবেও একে অপরের প্রতি আন্তরিক। মসজিদ ও মন্দির পরিচালনাকারীরাও জানালেন শত বছর ধরে চলে আসা ঐক্যের এই বন্ধনের কথা।
মসজিদ ও মন্দিরের দেয়াল একসঙ্গে লাগোয়া। মসজিদে আজানের সময় থেকে নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরের মাইক, ঢাকঢোলসহ যাবতীয় পূজা-অর্চনার কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের লোকজন। নামাজ শেষ হলে মন্দিরের কার্যক্রম শুরু হয়। সুষ্ঠু ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে একই উঠানে বছরের পর বছর ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে আসছেন উভয় ধর্মের মানুষজন।
১১৫৩ সালে দুর্গা মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে এখানে ভাঙ্গা কালী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কারণে পুরান বাজার এলাকা অনেকের কাছে ভাঙ্গা কালীবাড়ি নামে পরিচিত। মন্দিরের পাশে ১৯৬৮ সালে একটি নামাজের ঘর নির্মিত হয়। পরে নামাজের ঘরটি ‘পশ্চিম শালগাড়ীয়া জামে মসজিদ’ নামে পরিচিতি পায়। সকাল-সন্ধ্যা স্বাভাবিক নিয়মে চলে নামাজ ও পূজার আয়োজন। প্রতি বছর জাঁকজমক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় শারদীয় দুর্গোৎসব। কখনও চিড় ধরেনি সম্প্রীতির বন্ধনে।
ধর্মীয় সম্প্রীতির সাক্ষী হয়ে আছে পাশাপাশি এই মসজিদ-মন্দির। এই ঐতিহ্যকে ধরে রেখে মানুষে-মানুষে ভাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতি অটুট থাকুক এই প্রত্যাশায় জানিয়েছেন স্থানীয়রা।