ট্রাম্প-হার্ভার্ড দ্বন্দ্বে ভংয়কর বিপদে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ

অনামিকা রায়
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ০৫:০৩ পিএম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে টানাপোড়েন নতুন কিছু নয়। তবে এবার এই দ্বন্দ্বের আঁচ এসে পড়েছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের গায়ে, বিশেষ করে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা পড়েছেন সবচেয়ে বিপাকে।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহকারী সংস্থা 'ওপেন ডোরস' বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী যান ভারত থেকে। তিন লাখ ৩৩ হাজারের-এরও বেশি ভারতীয় শিক্ষার্থী গত বছর বিভিন্ন মার্কিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হন হার্ভার্ডে।
ট্রাম্পের অভিযোগ, হার্ভার্ডে চলছে ইহুদি বিদ্বেষ, ডাইভার্সিটি প্রোগ্রাম ‘বর্ণবাদের নামান্তর’। আর সেই অজুহাতেই ফেডারেল ফান্ড প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় হোয়াইট হাউস। যার বাস্তবিক প্রভাব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ ও স্কলারশিপ ফান্ডে। এছাড়াও, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট সাময়িকভাবে বন্ধের পরিকল্পনা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে কমে যেতে পারে স্কলারশিপ ফান্ড, গবেষণা অনুদান এবং অন-ক্যাম্পাস চাকরির সুযোগ। আর এখানেই ঘনিয়ে উঠেছে মেঘ। কারণ, হার্ভার্ডে থাকা ভারতীয় শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ নির্ভর করেন এই আর্থিক সহায়তার ওপর। প্রতিবছর হার্ভার্ডে ভর্তি হওয়া ভারতীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ স্কলারশিপ অথবা অন-ক্যাম্পাস জবের ওপর নির্ভর করেন। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে সরাসরি প্রভাব পড়বে এই শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক ভারসাম্যে।
এদিকে, ট্রাম্পের জীবনীকার মাইকেল উলফ দাবি করেছেন—হার্ভার্ডে কখনো ভর্তি হতে না পারার ক্ষোভ আজও ভুলতে পারেননি ট্রাম্প।
তার মতে, ট্রাম্পের হার্ভার্ডবিরোধী অবস্থান কোনো নীতিগত নয়- বরং একান্তই ব্যক্তিগত। ট্রাম্প নিজে হার্ভার্ডে ভর্তি হতে না পারায় আজ এতদিন পরও সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শত্রুতা পুষে রেখেছেন। এমনকি ট্রাম্পের ছেলে ব্যারন হার্ভার্ডে সুযোগ না পাওয়ায় হোয়াইট হাউসের ঘরোয়া রসিকতায় শোনা যায়, ট্রাম্প হার্ভার্ডের পেছনে লেগেছেন কারণ তাঁর ছেলে ব্যারন ট্রাম্প সেখানে সুযোগ পাননি।
যদিও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন—ব্যারন কখনোই হার্ভার্ডে আবেদন করেননি। হোয়াইট হাউস অবশ্য এই বক্তব্য উড়িয়ে দিয়েছে। মুখপাত্র টেলর রজার্স বলছেন—ট্রাম্পকে সফল ব্যবসায়ী এবং ইতিহাসের সবচেয়ে পরিবর্তনকারী প্রেসিডেন্ট হতে হার্ভার্ডের মতো অতিরিক্ত মূল্যায়িত, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার দরকার ছিল না।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরাই যুক্তরাষ্ট্রকে বৈচিত্র্যের প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করিয়েছে। তাদের অন্তর্ভুক্তি ছাড়া এই বৈচিত্র্য অসম্পূর্ণ। তাদের মত, হার্ভার্ডের এই সংকট শুধু আর্থিক নয়, বৈশ্বিক প্রতিভা হারানোর আশঙ্কাও বাড়াচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের শিক্ষা-অভিজ্ঞতা হয়তো তাঁকে এই অভিজাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি ঈর্ষান্বিত করে তুলেছে। ট্রাম্প বনাম হার্ভার্ডের দ্বন্দ্ব এখন কেবল রাজনৈতিক নয়, বৈশ্বিক শিক্ষার ভারসাম্যের প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠছে—অভিজাত শিক্ষা কি কেবল রাজনৈতিক প্রতিশোধের মঞ্চে পরিণত হচ্ছে?