ইরানের হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি আসলে কী?

কামরুজ্জামান আরিফ
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ০৬:০২ পিএম
টানা কয়েকদিন ধরে ইরান ও ইসরায়েলের হামলা ও পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। শুক্রবার ভোরে তেহরানসহ ইরানের বেশ কিছু স্থানে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েল বিমান হামলা চালায়।
পরে তীব্র শক্তি নিয়ে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা শুরু করে ইরানও। এমন অবস্থায় ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে । গুরুত্বপূর্ণ এই প্রণালী বন্ধের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে বলেও ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে দেশটি।
এর আগেও ইরান প্রায়ই হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে, যদিও কখনো তারা সেটা করেনি। তবে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই হলে ইরান এই প্রণালি বন্ধ করেও দিতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো যদি কখনো ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয় তাহলে বিশ্বে কী প্রভাব পড়বে? আরেকটি প্রশ্ন হলো- ইরান কি আদৌ এই প্রণালি বন্ধ করে রাখতে পারবে? আসুন এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক।
মূলত হরমুজ প্রণালী হচ্ছে ইরান ও ওমানের মাঝখানে অবস্থিত একটি সংকীর্ণ পানিপথ, যার মাধ্যমে উপসাগরীয় দেশগুলোর অধিকাংশ তেল রপ্তানি হয়। এর আগে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের তেল রপ্তানির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর ইরান এই প্রণালী বন্ধের হুমকি দিয়েছিল।
বাস্তবিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সামরিক শক্তির কাছে ইরান একেবারেই নস্যি। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ২০১৯ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের এক নম্বর সামরিক শক্তির দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে ইরান ও ইসরায়েলের অবস্থান যথাক্রমে ১৪তম ও ১৭তম। সামরিক শক্তিতে পিছিয়ে থাকার পরও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইরানের বুক ফুলিয়ে লড়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু ভূরাজনৈতিক ট্রাম্প কার্ড রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ট্রাম্প কার্ড হলো এই হরমুজ প্রণালি, যা বিশ্বের তেল বাণিজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথ।
ইরান প্রতিনিয়ত হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত তারা এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এর কারণ হলো এই প্রণালি দিয়ে ইরান নিজদের তেলও রপ্তানি করে থাকে।
পাশাপাশি এই প্রণালি বন্ধ করে দেওয়া মানে একাধিক দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। তাছাড়া, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বাড়বে আশঙ্কাজনকভাবে।
এই প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৮ থেকে ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পরিবাহিত হয়। অর্থাৎ বিশ্বের মোট তেলের প্রায় ২০ শতাংশ হরমুজ প্রণালী দিয়ে যায়। যদি হরমুজ প্রণালী দিয়ে তেল পরিবহন অর্ধেকে নেমে আসে, তাহলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১২০ মার্কিন ডলার বা তারও বেশি হতে পারে। আর দাম বৃদ্ধির এই প্রভাব বিশ্বজুড়ে সব দেশের ওপরই দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।
এই প্রণালী বন্ধ হলে এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইরানে সরাসরি হামলার একটা অজুহাত হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিতে। তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিলে তা হবে সরাসরি বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর আক্রমণ, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপরও। এমন পরিস্থিতি হলে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে, আসলে কী হতে যাচ্ছে তা সময়ই বলে দেবে।