ফেনীতে ফের বন্যার ছোবল, এবারও কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির শঙ্কা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫১ এএম

টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়। ছবি : ভোরের কাগজ
বছর না পেরোতেই ফের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর জনপদ। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩৬টি স্থানে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ৮ জুলাই থেকে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়। বাঁধ ভাঙনের চার দিন পর শনিবার (১২ জুলাই) ভাঙনের সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করেছে পাউবো।
প্রাথমিকভাবে ২০টি স্থানের কথা বলা হলেও এখন এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬টিতে, যার মধ্যে পরশুরামে ১৯টি, ফুলগাজীতে ১৭টি বাঁধে ভাঙন দেখা গেছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার জানিয়েছেন, সব ভাঙনস্থল পরিদর্শন করে চূড়ান্ত হিসাব করা হয়েছে। পানি নামার পর মেরামত শুরু হবে।
আরো পড়ুন : ফেনীতে তীব্র স্রোতে ডুবছে জনপদ, বন্যার আতঙ্কে লাখো মানুষ
স্থানীয়দের অভিযোগ, গেল বছরও মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়ার বাঁধের শতাধিক অংশ ভেঙেছিল। পরে ২০ কোটির বেশি টাকার প্রকল্পে বাঁধ মেরামত হলেও টেকসই হয়নি। এবারও অনিয়ম ও দুর্বল তদারকির কারণে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, পরশুরাম ও ফুলগাজীর পর নতুন করে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞার কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ১১২টি গ্রামের লাখো মানুষ বন্যাকবলিত। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে অন্তত সাড়ে ৯ হাজার মানুষ।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ত্রাণ কার্যক্রমে সাড়ে ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরো ৪০ লাখ টাকার ত্রাণ সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীও ত্রাণ তৎপরতায় প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করছে।
জেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ দপ্তরের হিসাবে, এ পর্যন্ত মৎস্য খাতে ৮ কোটি ১২ লাখ টাকার বেশি, কৃষিতে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর ফসলি জমি এবং প্রাণিসম্পদ খাতে প্রায় ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পুরোপুরি পানি নামার পর ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
ফুলগাজীর কমুয়া এলাকার খামারি মো. হারুন বলেন, গত বছর ২০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছিল। এবারও মুরগি আর মাছ ভেসে গেছে। প্রতিবারই বাঁধ ভাঙে, পানি আসে, আবার নতুন আশ্বাস মেলে।
ছাগলনাইয়ার ফরিদা সুলতানা বলেন, ঘরে পানি ঢুকে সব আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা আগে থেকে সঠিক পূর্বাভাসও পাই না। নদী শাসন আর টেকসই বাঁধ ছাড়া মুক্তি নেই।
পরশুরামের বাসিন্দা মাসুম বলেন, চার দিনেও কোনো পাউবো কর্মকর্তা আমাদের এলাকায় আসেননি। এবার টেকসই বাঁধের দাবিতে আন্দোলন গড়তে হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের জুলাই-আগস্টে ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে ২৯ জন প্রাণ হারান এবং শত কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়। সেই বেদনার স্মৃতি পেরোতে না পেরোতেই আবারও নদীভাঙন আর বন্যার ছোবলে বিপর্যস্ত ফেনীর মানুষ।