আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ
ব্রামার নির্বাচন ঠেকাতে মরিয়া দুর্নীতিবাজ চক্র

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৭:০০ পিএম

মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান।
বাংলাদেশ রিফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (ব্রামা)—দেশের এসি ও ফ্রিজ ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন। সদস্য সংখ্যা হাজারের ওপরে। দীর্ঘদিন ধরে এই সংগঠন নিয়ে চলছিল নানামুখী আলোচনা ও সমালোচনা। এবার সামনে এলো চাঞ্চল্যকর অভিযোগের তালিকা, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান।
অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব ব্যবহার করে আসাদুজ্জামান ব্রামার নেতৃত্বে এসে গড়ে তোলেন অঢেল সম্পদের পাহাড়। সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করে তিনি দেশে নিম্নমানের কুলিং গ্যাস আমদানি করেন, যা পরবর্তীতে এসি বিস্ফোরণের মাধ্যমে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটায়। প্রাণহানির ঘটনাগুলোর দায় তিনি এড়াতে পারেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সংগঠনের অভ্যন্তরে অনিয়ম, চাঁদার টাকা আত্মসাৎ, এমনকি মানবপাচারের মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণও মিলেছে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে জাপানে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানো হলে, সেই দলে দু’জন এমন ব্যক্তি ছিলেন যারা কখনও ব্রামার সদস্য ছিলেন না। সফর শেষে তারা আর দেশে ফেরেননি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তাদের পাঠাতে হয়েছিল ৪৪ লাখ টাকার চুক্তিতে। যাঁদের একজন মোহাম্মদ বশিরুল হকের পাসপোর্টের ফটোকপিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
২০২৫ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্রামার ভেতরে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। চাপে পড়ে সভাপতির পদ ছাড়তে বাধ্য হন আসাদুজ্জামান। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তরফদার সোহেল রহমানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং নির্বাচন আয়োজনসহ সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে।
তবে নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া মাত্রই শুরু হয় নানা ধরনের অপপ্রচার। ব্রামার একাধিক সদস্যের অভিযোগ, এ অপপ্রচারের পেছনে রয়েছেন স্বয়ং আসাদুজ্জামান ও তার অনুসারীরা, যারা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কায় সংগঠনকে অস্থিতিশীল করতে চায়।
সম্প্রতি রাজধানীর পুরানা পল্টনের এক মতবিনিময় সভায় প্রশাসক তরফদার সোহেল রহমান বলেন, “সাবেক সভাপতির আমলে সংগঠনের চাঁদার অর্থের হিসাব নেই, অনিয়মের প্রমাণ মিলছে প্রতিনিয়ত।” এই বক্তব্যের পর থেকেই এক পক্ষ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে।
ব্রামার সদস্যদের বক্তব্য অনুযায়ী, এবার নির্বাচনে সরকারি কর্মকর্তাদের তদারকির ফলে অনিয়মের সুযোগ নেই। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী মাইনুদ্দিন বলেন, “আগে নিজেরা নির্বাচন করতাম, অনিয়ম হতো। এখন প্রশাসন করছে, সেখানে স্বচ্ছতা নিশ্চিত।” গেন্ডারিয়ার কামরান জানান, “আসাদের আমলে দুর্নীতি ছাড়া কিছুই দেখিনি। এখন নির্বাচন হবে বলেই তারা ভয় পাচ্ছে।”
সাবেক সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগ।
এই প্রেক্ষাপটে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, নির্বাচন বানচাল করে আবারও পুরনো প্রভাব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে একটি দুর্বৃত্ত চক্র। তবে প্রশাসন ও সচেতন সদস্যদের দৃঢ় অবস্থান, ব্রামাকে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সংগঠনে পরিণত করার আশা জাগাচ্ছে।