হানি ট্র্যাপের অভিযোগে মামলা
ধার্য তারিখ পর্যন্ত জামিন পেলেন বিমানবালা খাদিজা সুলতানা শিমু
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:০৬ পিএম
বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু খাদিজা সুলতানা শিমু
বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু খাদিজা সুলতানা শিমুর (বিমান পিনও নং: ৫৩৪২৯) বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন, ‘হানি ট্র্যাপ’ ও ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে প্রায় ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলায় জামিন পেয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে আদালত পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিন শুনানির পর বাদী পক্ষের আইনজীবী মো: হায়দার তানভীরুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, আমার মক্কেল একজন ভুক্তভোগী, যিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। আদালত প্রাথমিক শুনানিতে বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেছেন এবং ধার্য তারিখ পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, বিচার প্রক্রিয়ায় সত্য প্রকাশ পাবে। আমরা চাই ন্যায়বিচার হোক, কাউকে হয়রানি নয়, কিন্তু অপরাধীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সের এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হওয়ার পর ১১ মাসের সম্পর্কে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। বাদীপক্ষের উপস্থাপিত অর্থ লেনদেনের বিস্তারিত প্রমাণপত্র দেখে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিস্ময় প্রকাশ করেন। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে উত্তরা পশ্চিম থানাকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন (মামলা নম্বর: সিআর-১২১২/২৫)। তদন্ত শেষে উত্তরা থানা মামলাটি সত্যতা পায় এবং রিপোর্ট দাখিল করলে আদালত খাদিজা সুলতানা শিমুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন এবং আজ সেই মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন।
মামলার আর্জি থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওমর ফারুকের সঙ্গে বিমানবালা খাদিজা সুলতানা শিমুর পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং তারা উত্তরার একটি রেস্টুরেন্টে প্রথমবার দেখা করেন। বাদীর উন্নত পেশা ও সামাজিক অবস্থানকে পুঁজি করে শিমু অল্প সময়ের মধ্যেই তার বিশ্বাস অর্জন করেন। তিনি বাদীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং নিজেকে তাদের ভবিষ্যৎ পুত্রবধূ হিসেবে উপস্থাপন করতে শুরু করেন। উভয় পরিবারের মধ্যে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি ছিল। মামলার আর্জিতে বলা হয়েছে, সম্পর্ক গভীর হওয়ার পর শিমু বাদীকে বিয়ের আশ্বাস দেন। এই প্রতিশ্রুতির ওপর ভিত্তি করে তিনি বিভিন্ন সময়ে ও অজুহাতে বাদীর কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে থাকেন। নগদ টাকা, ব্যাংক ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং, ঘর সাজানোর ফার্নিচার, ফ্লাগশিপ মোবাইল, কসমেটিকস, শপিংয়ের বিল পরিশোধের মাধ্যমে ধাপে ধাপে এই অর্থ গ্রহণ করা হয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর নিজের জন্মদিনে শিমু বাদীর কাছ থেকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি হীরার আংটি উপহার হিসেবে নেন। সেদিন তিনি দ্রুতই বাদীকে বিয়ে করবেন বলে পুনরায় আশ্বাস দেন। পরে শিমু প্রস্তাব দেন, তাদের বিয়ের সম্পূর্ণ খরচ বাদীকে বহন করতে হবে এবং সেই অর্থ অনুষ্ঠানের আগেই পরিশোধ করতে হবে। তার কথায় বিশ্বাস করে বাদী বিয়ের খরচ বাবদ মোট ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৫১১ টাকা প্রদান করেন। এর বাইরে আরও ৪ লাখ টাকা ক্যাশ নেন তিনি। হীরার আংটিসহ সর্বমোট আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ২১ লাখ ৭৪ হাজার ৫১১ টাকা। টাকা হাতে পাওয়ার পর শিমুর আচরণে পরিবর্তন আসতে শুরু করে বলে বাদী অভিযোগ করেন। বাদীর পরিবার থেকে দুইবার বিয়ের দিন তারিখ চূড়ান্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও শিমু বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি বিয়ে করতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানান।
এজাহারে আরও বলা হয়, শিমু ও তার মা নতুন করে দাবি করেন যে, অতিরিক্ত ১০ ভরি স্বর্ণালংকার ও আরও অর্থ না দিলে এই বিয়ে সম্ভব নয়। বাদী আরও অভিযোগ করেন, সম্পর্কের বিভিন্ন পর্যায়ে শিমু হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারে বাদীর কাছে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও চাইতেন। পরবর্তীতে সেই ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে তাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করা হয়। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বিমানবালা শিমু অর্থ আদায়ের জন্য আধুনিক ‘হানি ট্র্যাপ’ ও ‘থার্স্ট ট্র্যাপ’ (যৌন আবেদনময়ী ছবি/ভিডিও দিয়ে মনোযোগ আকর্ষণ) কৌশল ব্যবহার করতেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আকর্ষণীয় ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে এবং ব্যক্তিগত আলাপে আবেদনময়ী আচরণ করে ভুক্তভোগীকে আকৃষ্ট করেন এবং বিয়ের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করেন।
