×

অর্থনীতি

এক্সিম ব্যাংক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন

একীভূত হলে অনিশ্চয়তায় পড়বে ব্যাংকের গ্রাহকরা

Icon

মরিয়ম সেঁজুতি

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ০৭:৪৩ পিএম

একীভূত হলে অনিশ্চয়তায় পড়বে ব্যাংকের গ্রাহকরা

এক্সিম ব্যাংক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন

এস আলমের লুটপাটে সংকটে পড়া চার ব্যাংকের সঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ওই চার ব্যাংকের চেয়ে এক্সিম ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা তুলনামূলক ভালো। এ কারণে বাকি চার ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হলে এক্সিম ব্যাংকের গ্রাহকেরাও অনিশ্চয়তায় পড়বেন বলে মনে করেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে এস আলমের চার ব্যাংকের তুলনায় আর্থিক নানা সূচকে এক্সিম ব্যাংক ভালো অবস্থায় রয়েছে। অন্য চার ব্যাংক এখনো আমদানি-রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের যে ব্যবসা করে, তার চেয়ে একাই বেশি ব্যবসা করছে এক্সিম ব্যাংক। দেশের রপ্তানি খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের অনেকে এখনো এক্সিম ব্যাংকের গ্রাহক। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মরিয়ম সেঁজুতি

ভোরের কাগজ : বিগত সময়ে সবচেয়ে সংকটে পড়া চার ব্যাংকের সঙ্গে এক্সিম ব্যাংক একীভূত করার ঘোষণা দিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী? 

নজরুল ইসলাম স্বপন: পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে এস আলমের চার ব্যাংকের তুলনায় আর্থিক নানা সূচকে এক্সিম ব্যাংক ভালো অবস্থায় রয়েছে। অন্য চার ব্যাংক এখনো আমদানি-রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের যে ব্যবসা করে, তার চেয়ে একাই বেশি ব্যবসা করছে এক্সিম ব্যাংক। দেশের রপ্তানি খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের অনেকে এখনো এক্সিম ব্যাংকের গ্রাহক। এ ছাড়া এক্সিম ব্যাংকের উদ্যোক্তা-পরিচালক ও শেয়ারধারীদের কোনো ধরনের মতামত ছাড়াই সরকারি সিদ্ধান্তে ব্যাংকটিকে একীভূত করার উদ্যোগ কতটা কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য হবে, তা আমার বোধগম্য নয়। এর আগে বিগত সরকারও আর্থিক অনিয়মে ধুকতে বসা কিছু ব্যাংককে অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অনেকটা ভালো ব্যাংকগুলোর ওপর খারাপ ব্যাংকের দায় চাপিয়ে দিয়েছিলেন সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। ফলে দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে ভালো ব্যাংকের একীভূত হওয়ার উদ্যোগটি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। 

ভোরের কাগজ : ব্যাংক একীভূত করার ঘোষণা দেয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। সেখানে আপনার ভূমিকা কেমন ছিল?  

নজরুল ইসলাম স্বপন: ৪ জুন পাঁচ ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে হঠাৎ ডেকে বাংলাদেশ ব্যাংক সভা করে। ব্যাংক পাঁচটি ছিল ইউনিয়ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। সে সভায় ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে এ পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। আগে ছয় ব্যাংক একীভূত করার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ সেটা পাঁচ ব্যাংক হয়ে গেল। সভায় তিন ব্যাংকের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক আপত্তি করে। আমিও জানিয়ে দিয়েছি, পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে চার ব্যাংকের সঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের তুলনা চলে না। ওই চারটি ব্যাংকের মালিকানা এস আলম গ্রুপের কাছে ছিল। এসব ব্যাংক যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এক্সিমের ক্ষত ততটা নয়।

আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে দিয়েছি, এক্সিম ব্যাংক কিছুদিনের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে তারল্য সহায়তা নেয়া হয়েছে, তা আগামী বছর থেকে ফেরত দেয়া শুরু হবে। আমাদের ব্যাংক থেকে কোনো গ্রাহক টাকা তুলতে সমস্যায় পড়েননি। আমাদের আমদানি, রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের যে ব্যবসা আছে, তা অন্য চার ব্যাংকের চেয়ে বেশি। এসব ব্যাংক মিলে একটা সরকারি ব্যাংকে রূপান্তর করা হলে তা কোনোভাবেই ভালো হবে না। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের একীভূত করার সিদ্ধান্ত মানতে পারছি না।

ভোরের কাগজ: বিগত সময়ে ব্যাংকটি যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখান থেকে বর্তমানে কতটা ঘুরে দাড়াতে পেরেছেন? 

নজরুল ইসলাম স্বপন: এক্সিম ব্যাংকের যতটা ক্ষতি বিগত সরকারের সময়ে হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে গত ১০ মাসে। কয়েক দফায় বলা হয়েছে, এক্সিম ব্যাংক দুর্বল, এক্সিম ব্যাংক একীভূত হবে। এর ফলে দফায় দফায় আমাদের ব্যাংকের গ্রাহকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। যাতে ব্যাংকের তারল্য–সংকটে পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হয়। এ ছাড়া বিদেশিদের দিয়ে ঋণের মান পরীক্ষায় প্রায় অর্ধেক ঋণ খেলাপি হওয়ার যোগ্য বলে জানিয়েছে, যা পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর। বাণিজ্যিক (ট্রেডিং) ঋণে কখনো শতভাগ জামানত থাকে না, বিদেশিরা জামানত কম পেলেই তা খেলাপি হিসেবে ধরেছে। এ ছাড়া এস আলমের ঋণ নিয়মিত থাকলেও তা খেলাপি বলা হচ্ছে। এভাবে ধরলে সব ব্যাংকের ঋণ অর্ধেক খারাপ হয়ে যাবে। তাই আমরা মনে করি, যথাযথ বাছবিচার ও হিসাব করে একীভূত করার সিদ্ধান্ত আসা উচিত। এক্সিম ব্যাংক একীভূত হবে না, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ঘোষণা দিলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তাতে এক্সিম ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানোও সহজ হবে। বরং এখন একীভূত করার ঘোষণায় নতুন করে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে এক্সিম ব্যাংক।

দেশে রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক্সিম ব্যাংক শীর্ষস্থানীয় রপ্তানি আয় আহরণকারী ব্যাংকের একটি। সরকার বদলের পর এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠিত হলেও টাকা তুলতে গিয়ে কোনো গ্রাহক সমস্যায় পড়েননি। গত ৯ মাসে ব্যাংকটির গ্রাহকেরা প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন। এসব অর্থ তুলে নিতে গ্রাহকদের কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। এ ছাড়া খেলাপি ঋণে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের তালিকায়ও এক্সিম ব্যাংক নেই। অন্য অনেক ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়লেও এক্সিম ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি নেই। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব বিবেচনায় পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে, তার কোনোটিতেই এক্সিম ব্যাংক পড়ে না।

২০২৪ সালে এক্সিম ব্যাংক আমদানি-রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে ৫০ হাজার ৩৮১ কোটি টাকার ব্যবসা করে। আর চলতি বছরে মে মাস পর্যন্ত ব্যবসা করেছে ১৮ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা, যা বাকি চার ব্যাংকের চেয়ে বেশি। গত ১০ মাসে এক্সিম ব্যাংকে ২ লাখ ৯৪ হাজার নতুন হিসাব খোলা হয়েছে। এ সময়ে নতুন আমানত এসেছে ১০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এ সময় ঋণ আদায় হয়েছে ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বর্তমানে সারা দেশে এক্সিম ব্যাংকের ১৫৫ শাখা ও ৭৪টি উপ-শাখা রয়েছে। ব্যাংকে কর্মরত রয়েছে ৩ হাজার ৩৯৩ কর্মী। ব্যাংকটির মোট গ্রাহকের সংখ্যা ১৬ লাখ ৬৪ হাজার। গত মে মাস শেষে ব্যাংকটির আমানত দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকায়, ঋণ বা বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা।  

ভোরের কাগজ : আপনার পরিচালনা পর্ষদের এ বিষয়ে মতামত কী?  

নজরুল ইসলাম স্বপন: গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকটির পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। এ ছাড়া শেয়ারধারীদের মধ্য থেকে পরিচালক হিসেবে রয়েছেন মো. নুরুল আমিন ও অঞ্জন কুমার সাহা। স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে রয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এস এম রেজাউল করিম ও সনদধারী হিসাববিদ খন্দকার মামুন।

আমাদের পর্ষদের সবাই ব্যাংকটির একীভূত করার বিপক্ষে। গত আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর এ ব্যাংকের পর্ষদ পরিবর্তন করা হয়েছে। এর পর থেকে ব্যাংকটি পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। আগে যেসব ঋণের সমস্যা ছিল, সেগুলোর বিষয়ে নিয়ম অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে। শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় এক্সিম ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নিলে সেটা ভালো উদাহরণ হবে না। এতে অনেক ভালো ব্যাংকের ওপর আমানতকারীদের অনাস্থা তৈরি হতে পারে। কারণ, ভবিষ্যতে অনেক ব্যাংকের পরিণতি একই হতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

গণঅভ্যুত্থান দিবস পালনে ৩৬ সদস্যের জাতীয় কমিটি

গণঅভ্যুত্থান দিবস পালনে ৩৬ সদস্যের জাতীয় কমিটি

আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বৈঠক: ট্রাম্প

আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বৈঠক: ট্রাম্প

দেবের নায়িকা থেকে বাদ ফারিণ, জানা গেলো কারণ

দেবের নায়িকা থেকে বাদ ফারিণ, জানা গেলো কারণ

বাংলাদেশ সফরে আসছে পাকিস্তান, সিরিজের সূচি প্রকাশ

বাংলাদেশ সফরে আসছে পাকিস্তান, সিরিজের সূচি প্রকাশ

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App