×

অর্থনীতি

সবজিতে ফের অস্বস্তি, ঝাঁজ বহাল পেঁয়াজের

Icon

সেবিকা দেবনাথ

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১৬ পিএম

সবজিতে ফের অস্বস্তি, ঝাঁজ বহাল পেঁয়াজের

ছবি : সংগৃহীত

যে কোনো অজুহাতেই অস্থির হয়ে উঠে নিত্যপণ্যের বাজার। রোদ-বৃষ্টি-রাজনৈতিক কর্মসূচি সব কিছুর সঙ্গেই যেন বাজারের বৈরি সম্পর্ক। এমনই এক পরিস্থিতি চলছে বাজারে। যেখানে সাধারণ মানুষের স্বস্তির জায়গাটা দিন দিন সীমিত হয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা উচ্চমূল্যের বাজারে হাঁসফাঁস করছে এসব মানুষগুলো। তবে যেন এদিকে নজর নেই সরকার বা সংশ্লিষ্ট কারোই।

বিগত চার মাসের তুলনায় চলতি মাসের শুরুতে সবজির বাজারে স্বস্তি এলেও দাম বেড়ে গিয়ে গতকাল শুক্রবার আবারো অস্বস্তি বাড়িয়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতিটি সবজির দাম বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে সবজির ট্রাক ঢাকা কম এসেছে। ফলে সরবরাহ কমেছে। যে কারণে মূলত সবজির দাম বেড়েছে। 

এদিকে পেঁয়াজের ঝাঁজ এ সপ্তাহেও কমেনি। বিক্রেতার ও ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজের সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে। ডিসেম্বর মাসে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসবে। তার আগে দাম কমার সুযোগ নেই। তবে সরকার যদি পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে দাম কমতে পারে।

বাজারে বয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমলেও এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির মাংস। মাছের বাজারও চড়া দামেই স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। 

সরবরাহ আছে তবুও দাম বাড়তি সবজির

বাজারগুলোতে থরে থরে সাজানো আছে শীতকালীন সবজি। দেখা গেছে, শীতকালীন সবজি নতুন এসেছে বলে এসবের দাম বেশি, আবার যেসব সবজি শীতের না সেগুলোর সিজন শেষ বলে দাম বেশি। বাজারে প্রতি কেজি পটল ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা আগের সপ্তাহে ৬০ টাকার ঘরে ছিল। এ ছাড়া প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, বেগুন প্রতি কেজি ১শ থেকে ১২০ টাকা, পেঁয়াজের ফুল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৮০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ১শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি শসা ৮০ থেকে ১শ টাকা, কচুর মুখী প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ১শ টাকা, কাঁচা টমেটো প্রতি কেজি ১শ থেকে ১২০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকা, মূলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১৪০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১৪০ টাকা। প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা।

এছাড়া, প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে। লাল আলু ২৫ টাকা, সাদা আলু ২৫ টাকা, বগুড়ার আলু ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, দেশি রসুন ৮০ থেকে ১১০ টাকা, চায়না রসুন ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, চায়না আদা ১৮০ থেকে ২শ টাকা, ভারতীয় আদা মান ভেদে ১৬০ থেকে ১৮০ দরে বিক্রি হয়েছে। বাজারে কাঁচামরিচ, ধনেপাতা ও লেবু বাদ দিলে মূল সবজির মধ্যে ২০টির দাম ১শ টাকা বা তারও বেশি। ৬০ টাকা থেকে ১শ টাকার মধ্যে রয়েছে ১১ ধরনের সবজির দাম। আর ৫০ টাকা বা তার নিচে রয়েছে ৩টি সবজির দাম।

রামপুরা বাজারে বাজার করতে আসা আব্দুল আলিম বলেন, গত সপ্তাহে সবজি কম দামে কিনলাম, এখন এসব সবজি অতিরিক্ত ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। প্রতিটি সবজির দামই বাড়তি। শীতে মানুষ কম দামে সবজি খাবে অথচ বাড়তি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। 

সবজি বিক্রেতা মামুন মিয়া বলেন, কারওয়ানবাজারে গিয়ে দেখি সব সবজির দাম বাড়তি, সেই সঙ্গে আজকের বাজারে সবজি সরবরাহ অনেকটা কম। সব মিলিয়ে বাড়তি দামে সবজি কিনতে হয়েছে, যে কারণে এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।

কাওরান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকার কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তুলনামূলক সবজির ট্রাক কম এসেছে কাওরান বাজারে। মূলত শীতে শুরুতে এই সময় সবজির দাম এমন বাড়তি হওয়ার কথা না। গত সপ্তাহেও কম দাম ছিল, কিন্তু আজ (শুক্রবার) মূলত সবজির সরবরাহ কম হওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে খুচরা পর্যায়ে।

ঝাঁজ কমেনি পেঁয়াজের

হুট করেই বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজের বাজারেও স্বস্তি ফেরেনি। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১শ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা দুই সপ্তাহ আগে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজে দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে পেঁয়াজের দাম বাড়ার এ তথ্য জানিয়েছে।

পেঁয়াজের বিক্রেতারা বলছেন, বেশি দামের আশায় অনেকে পেঁয়াজ মজুদ করে রেখেছে। তাই বাজারে ঘাটতি আছে। আর এই ঘাটতি থাকার কারণেই দাম হুট করে বেড়ে গিয়েছে। না হলে এভাবে হুট করে বেড়ে যেতো না। সিজন শেষের দিকে একটু দাম বাড়ে তা ঠিক আছে। কিন্তু এভাবে বাড়ে না।

কাওরানবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশি পেঁয়াজের মৌসুম অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। মজুতকৃত পেঁয়াজও এখন শেষের দিকে। ফলে প্রতি বছরই এ সময় বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে একটু ঘাটতি থাকে। সরকার যদি পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়, তাহলে দাম কমে আসবে। 

এদিকে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল না হলে আমদানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। এরই মধ্যে পেঁয়াজ আমদানির জন্য ২ হাজার ৮শ প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা রয়েছে বলে জানা গেছে।

গত সপ্তাহের শুরুতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, চলতি সপ্তাহের মধ্যে (গত সপ্তাহ) পেঁয়াজের দাম না কমলে আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

কিছুটা কমেছে বয়লার মুরগির দাম; এখনো চড়া গরু ও খাসির মাংসের দাম

কিছুটা সহনীয় হয়েছে মুরগির মাংসের বাজার। তবে গরু ও খাসির মাংসের দাম বরাবরের মতোই চড়া অবস্থানে রয়েছে। বাজারে গরুর মাংস কেজি ৭৫০ থেকে ৮শ টাকা এবং খাসির মাংস ১১শ থেকে ১২শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে। গত সপ্তাহে যেখানে ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায়, গতকাল অনেক জায়গায় তা ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খামার পর্যায়ে উৎপাদন বাড়া এবং পরিবহন ব্যয় স্থিতিশীল হওয়ায় ব্রয়লার বাজারে এই পরিবর্তন এসেছে বলে বিক্রেতারা জানান। বাজারে কক মুরগি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৯০ থেকে ৩শ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ থেকে ৬শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম- প্রতি ডজন ডিম মাসখানেক আগেও যেখানে ১৫০ টাকায় উঠেছিল, তা এখন ১৩০ থেকে পাড়া-মহল্লায় ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে হাঁসের ডিমের দাম বেড়েছে ডজন প্রতি ২০ টাকা করে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা সাইদুল হোসেন জানান, যখন সবজির দাম বেড়ে যায় তখন ডিমের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি হয়। আবার সবজির দাম কমে এলে ডিমের দামও কমে যায়।

মাছের বাজার এখনো চড়া

মাছের বাজারে এখনো কোনো স্বস্তির খবর নেই। রুই, কাতলা, পাঙাস, তেলাপিয়া সব ধরনের মাছই আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। রুই কেজি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৩৮০ থেকে ৫শ টাকা এবং পাঙাস ১৬০ থেকে ২২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ ৯শ থেকে ২৬শ টাকা, কালবাউশ ৪শ থেকে ৭শ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮শ থেকে ১৪শ টাকা, কাচকি মাছ ৪শ থেকে ৫শ টাকা, কৈ মাছ ২৫০ থেকে ১ হাজার টাকা, পাবদা মাছ ৫শ থেকে ৬শ টাকা, শিং মাছ ৪শ থেকে ১২শ টাকা, টেংরা মাছ ৬শ থেকে ৮শ টাকা, বেলে মাছ ৯শ থেকে ১২শ টাকা, মেনি মাছ ৬শ থেকে ৮শ টাকা, বোয়াল মাছ ৮শ থেকে ১২শ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১১শ থেকে ১৫শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাছের দামে পরিবর্তন আসার মতো পরিস্থিতি নেই। খামার থেকে এখনো একই দামে আসে। উপর থেকে সস্তা না হলে আমরা কমাতে পারব না।

চালে কমেছে ২ থেকে ৪ টাকা : বাজারে মাঝারি মানের বিভিন্ন চাল- নাজিরশাইল, পোলাওর চাল, সোনামসুরী ও স্বর্ণা জাতের চাল কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি পর্যায়ে আমদানি ও মিলগেট সরবরাহ বাড়ায় খুচরা বাজারে দাম কমার প্রভাব পড়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

ডেঙ্গুতে আরো ৫ জনের মৃত্যু

ডেঙ্গুতে আরো ৫ জনের মৃত্যু

নির্বাচনের সময় যতদিন মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

নির্বাচনের সময় যতদিন মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

যুদ্ধ নয়, স্বচ্ছতার নতুন যুগ: ড্রোন প্রযুক্তিতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের রূপরেখা

যুদ্ধ নয়, স্বচ্ছতার নতুন যুগ: ড্রোন প্রযুক্তিতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের রূপরেখা

ঢাকা-১৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন প্রবাসী কাজী এনায়েত উল্লাহ

ঢাকা-১৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন প্রবাসী কাজী এনায়েত উল্লাহ

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App