ল্যুভর থেকে চুরি যাওয়া অলংকারের বাজারমূল্য কত?

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৪৬ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
দিনের আলোয় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ল্যুভর জাদুঘরে ঘটে গেছে এক দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা। এতে খোয়া গেছে নেপোলিয়ন যুগের রাজকীয় অলংকার ও অমূল্য সম্পদ, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৮ কোটি ৮০ লাখ ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা (১ ইউরো সমান ১৪১ টাকা হিসেবে)।
জাদুঘরের কিউরেটরের বরাত দিয়ে ফ্রান্সের এক সরকারি কৌঁসুলি এ তথ্য জানিয়েছেন। সরকারি কৌঁসুলি লোর বেকো আরটিএল রেডিওকে বলেন, অলংকারগুলোর অর্থমূল্যের অঙ্ক ‘অনেক বড়’। তবে তার মতে, অর্থমূল্যের চেয়ে এ ঘটনায় ফ্রান্সের ইতিহাস–ঐতিহ্যের ক্ষতি অনেক গভীর ও অপূরণীয়। খবর বিবিসির।
চুরি হওয়া সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে রাজকীয় অলংকার ও মূল্যবান উপহার। দুই নেপোলিয়ন সম্রাট তাঁদের স্ত্রীদের এসব অলংকার উপহার দিয়েছিলেন।
বিশ্বের সবচেয়ে দর্শনীয় জাদুঘরগুলোর মধ্যে ল্যুভর শীর্ষে। স্থানীয় সময় গত রোববার সকালে জাদুঘর খোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই চোরেরা বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করে আট মিনিটেরও কম সময়ে জানালা কেটে ভেতরে ঢোকে এবং কাচের বাক্সে রাখা অলংকার হাতিয়ে মোটরবাইকে করে পালিয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, চুরি যাওয়া অলংকার হয়তো ইতোমধ্যে অনেক দূরে চলে গেছে। তবে কৌঁসুলি লোর বেকো আশা প্রকাশ করে বলেছেন, চুরি যাওয়া অলংকারগুলোর মূল্য ঘোষণার পর চোরেরা হয়তো দ্বিতীয়বার ভাববে এবং সেগুলো নষ্ট করবে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, চোরেরা যদি অলংকারগুলো গলিয়ে ফেলার কথা ভাবে, তবে সেটা হবে খুবই খারাপ সিদ্ধান্ত। কারণ, গলিয়ে ফেললে এগুলোর প্রকৃত দাম পাওয়া যাবে না এবং লাভও হবে না।
আরো পড়ুন : ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফ্রান্সে নতুন প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ দিবেন ম্যাক্রোঁ
চুরি হওয়া অলংকারগুলোর মধ্যে আছে হীরা পান্না দিয়ে তৈরি একটি কণ্ঠহার, যা সম্রাট নেপোলিয়ন তাঁর স্ত্রীকে উপহার দিয়েছিলেন। এছাড়া তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রী সাম্রাজ্ঞী উজিনির একটি টিয়ারা এবং রানি মেরি-অ্যামেলির মালিকানাধীন একাধিক অলংকার রয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, চোরেরা যে পথে পালিয়ে যায়, সেখানে একটি মুকুট পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাড়াহুড়ার মধ্যে সেটি পড়ে যায়। উদ্ধার করা মুকুটটি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মুখোশ পরা চারজন চোর জাদুঘরের অ্যাপোলো গ্যালারির সিন নদীর দিকে মুখ করা একটি বারান্দা দিয়ে ভেতরে ঢোকে। এ জন্য তারা ট্রাকের ওপর থাকা একটি মেকানিক্যাল লিফট (ভাঁজ করা যায়, এমন একধরনের মই) ব্যবহার করে।
চার চোরের মধ্যে দুজন ভবনের প্রথম তলার একটি কাচের জানালা ব্যাটারিচালিত ডিস্ক কাটার দিয়ে কেটে প্রবেশ করে। এরপর তারা ভেতরে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের ভয় দেখিয়ে বের করে দেয়।
চোরেরা বাইরে তাদের গাড়িতে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু জাদুঘরের এক কর্মীর দ্রুত হস্তক্ষেপে সেটি ব্যর্থ হয়। পরে তারা অলংকার নিয়ে মোটরবাইকে করে পালিয়ে যায়।
ফরাসি প্রশাসনের ধারণা, এই চুরির সঙ্গে একটি পেশাদার অপরাধচক্র জড়িত, কারণ তারা অত্যন্ত দ্রুত ও সুসংগঠিতভাবে পুরো অভিযানটি সম্পন্ন করেছে।
ল্যুভরে দুর্ধর্ষ এ চুরির পর বিশেষজ্ঞরা বিবিসিকে জানান, চুরি যাওয়া সামগ্রী উদ্ধারের জন্য তদন্তকারীদের হাতে সময় খুবই সীমিত—মাত্র এক থেকে দুই দিন। এরপর এগুলো হয়তো চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চোরেরা সম্ভবত অলংকারগুলো গলিয়ে মূল্যবান ধাতু ও রত্নপাথর আলাদা করে ফেলতে পারে, যা পরে দেশের বাইরে পাচার করার চেষ্টা করবে। এতে অলংকারগুলো প্রকৃত আর্থিক মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি হতে পারে।
ঐতিহাসিক বিচারে এসব অলংকার ফ্রান্সের জন্য অমূল্য সম্পদ বলে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এই ঘটনাকে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ওপর হামলা বলে আখ্যায়িত করেছেন।