ইরানে হামলা না করতে নেতানিয়াহুকে সতর্ক করলেন ট্রাম্প

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ০৯:৫৯ এএম

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। ছবি : সংগৃহীত
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল—সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নতুন তথ্যের ভিত্তিতে এমনই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি সামনে আসার পর দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে সরাসরি সতর্ক করে দিয়েছেন, এখনই ইরানে হামলা চালানো সঠিক হবে না। মূলত পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনা চলমান রয়েছে এবং এর মধ্যেই ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এই সতর্কতা উচ্চারণ করা হলো।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ইরানের ওপর কোনও সামরিক হামলা না চালানোর জন্য বলেছেন, যাতে তার প্রশাসন তেহরানের সঙ্গে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তির জন্য আরো সময় পায়। কারণ ওমান এবং ইতালিতে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েক দফায় দেশ দুটির মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, তিনি নেতানিয়াহুকে জানিয়েছেন, এখন ইরানে হামলা করা সঠিক হবে না, কারণ আমরা একটি সমাধানের খুব কাছাকাছি রয়েছি।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা আছে। তবে ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তাদের ওপর হামলা হলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
আল জাজিরা বলছে, ওমান ও ইতালিতে কয়েক দফা বৈঠকের পর এখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন করে চুক্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের কাছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই ইরানি কর্মকর্তা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের জব্দ করা অর্থ ছেড়ে দেয় এবং বেসামরিক উদ্দেশে ইউরেনিয়াম পরিশোধনের অধিকার মেনে নেয় তাহলে ইরান এক বছরের জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ রাখতে পারে।
তাদের ভাষ্যে, যদি ওয়াশিংটন এই শর্তগুলো মেনে নেয়, তাহলে শিগগিরই একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব। তবে এই প্রস্তাব এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
আরো পড়ুন : ট্রাম্পের শুল্ক নীতিতে আইনি বাধা মার্কিন আদালতের
অন্যদিকে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা (আইএইএ)-র প্রধান রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি জানিয়েছেন, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার ফল এখনও অনিশ্চিত। তবে তিনি বলেন, আলোচনার অব্যাহত থাকা ইতিবাচক দিক। এর মানে হচ্ছে, দুই পক্ষের মধ্যে সমাধানে পৌঁছানোর ইচ্ছা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে সীমা আরোপ করেছিল এবং এর বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একতরফাভাবে সেই চুক্তি থেকে সরে আসেন, যার ফলে উত্তেজনা তীব্র আকার নেয়।
যুক্তরাষ্ট্র বারবার বলছে, যেকোনও নতুন চুক্তিতে ইরানকে সম্পূর্ণভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে হবে, কারণ এটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে এগোনোর সম্ভাবনা তৈরি করে। তবে ইরান বলছে, তাদের কর্মসূচি শুধু শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশে।
বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসন একটি নতুন চুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছে, যেখানে ইরানকে সম্পূর্ণভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করার শর্ত দেওয়া হয়েছে। তবে ইরান তা প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের দাবি—এটি তাদের জাতীয় অধিকার।