জিম্মি মুক্তিতে রাজি হামাস, গাজা দখল স্থগিতের নির্দেশ ইসরায়েলের

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১৬ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
হামাস সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত গাজা শান্তি পরিকল্পনার বেশ কিছু বিষয়ে আরো আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের সংগঠনটি।
গাজায় সামরিক তৎপরতা সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। গাজা সিটির ‘দখল’ উদ্যোগ স্থগিত রাখার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে বলা হয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক ও রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রস্তাব এবং হামাসের সদিচ্ছার প্রতিক্রিয়া মুল্যায়ন করে রাজনৈতিক নেতৃত্ব আইডিএফকে (ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স) গাজা সিটি দখলের তৎপরতা থামাতে নির্দেশ দিয়েছে।
আইডিএফ একটি বিবৃতিতে জানায়, সেনারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে যাতে যেকোনও মুহূর্তে হুমকির জবাব দেওয়া যায়; তবে সামরিক তৎপরতা কেবল প্রতিরক্ষামূলক অভিযানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার নতুন নির্দেশনাও জারি করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিষয়ে মধ্যস্থতার ভূমিকায় কাজ করছেন। ট্রাম্প আগে হামাসকে শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সময় দিয়েছিলেন এবং সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন হামাস শান্তির জন্য প্রস্তুত। ট্রাম্প তার ভিডিও বার্তায় কাতার, মিশর ও সৌদি আরবকে পরিকল্পনার মধ্যস্থতায় সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
হামাসও ট্রাম্পের ওই মন্তব্যকে উৎসাহব্যঞ্জক ঘোষণা করেছে। হামাসের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, তারা বন্দি বিনিময়, যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। হামাস জানিয়েছে, সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পরে ইসরায়েল প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। তবে হামাস প্রস্তাবের কিছু দিক নিয়ে আরো আলোচনা চায়।
ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে ঘিরে প্রকাশিত বিবরণে বলা হয়েছে, পরিকল্পনায় একাধিক ধাপ/দফা রয়েছে; এর মধ্যে প্রথম ধাপ দ্রুত বাস্তবায়নের যোগ্য। পরিকল্পনার আরো একটি বর্ণনায় (প্রকাশিত আলোচনায়) বিভিন্ন ধাপ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে, গাজাকে উগ্রবাদমুক্ত করা, পরে গাজার পুনর্গঠন ও অবশেষে সৈন্য প্রত্যাহার এবং বন্দি বিনিময়।
ট্রাম্প নিজে সামাজিক মাধ্যম পোস্টে তৃতীয় ধাপের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমা নিক্ষেপ বন্ধ করতে হবে যাতে আমরা জিম্মিদের নিরাপদে দ্রুত বের করে নিয়ে আসতে পারি। তিনি আরো বলেছেন, এটি কেবল গাজার বিষয় নয়, এটা মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিনের শান্তির বিষয়।
কাতার হামাসের বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়ে মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের বিষয়ে সমন্বয় শুরু করেছে বলে জানিয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারও ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি পক্ষকে আলোচনা বাড়াতে এবং পরিকল্পনাটি দ্রুত বাস্তবায়নে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হামাস যে কিছু অংশ গ্রহণ করেছে তা যুদ্ধ বন্ধ, জিম্মিদের প্রত্যাবর্তন ও মানবিক সহায়তার পথ খুলে দিয়েছে।
একই সময়ে ইসরায়েলের সামরিক কর্মকর্তারা রাত্রিযাপন করে বৈঠক করেন। আইডিএফ প্রধানের নির্দেশনায় গাজার অভিযান দেখভালকারী দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডের সব সক্ষমতা মোতায়েন রাখা হয়েছে। আইডিএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সেনাদের নিরাপত্তা ‘শীর্ষ অগ্রাধিকার’ এবং তাই তাদের সক্ষমতা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে; তবে বিবৃতিতে গাজায় সামরিক তৎপরতা কীভাবে হ্রাস করা হবে তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়নি।
উল্লেখ্য, মিডিয়ায় পরিকল্পনার ধরণ ও ধাপ নিয়ে কিছু ভিন্নতাও প্রকাশিত হয়েছে। কিছু প্রতিবেদন ‘২০ দফা’ হিসেবে পরিকল্পনার অংশ উল্লেখ করা হয়েছে; তবে সর্বমোট ভাবেই পরিকল্পনার মূল ধারণা হলো—(১) গাজা উগ্রপন্থি সন্ত্রাসমুক্ত করা, (২) গাজার পুনর্গঠন এবং (৩) যুদ্ধ অবসান ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ও বন্দি বিনিময়।
এদিকে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে জাতি ও সরকারগুলো এবার মধ্যস্থতায় সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার বার্তা দিচ্ছে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাতার, মিশর ও সৌদি আরবকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে দ্রুতই বন্দি মুক্তি, যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা কার্যকর হবে।
এই অগ্রগতি সংক্ষেপ
- হামাস জানিয়েছে তারা সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে, তবে প্রস্তাবের কিছু বিষয়ে আরো আলোচনা চায়।
- ট্রাম্প হামাসের প্রতিক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং ইসরায়েলকে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
- কাতার মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে যুদ্ধবিরতি সমন্বয়ে কাজ করছে; যুক্তরাজ্যও সমর্থন জানিয়েছে।
- ইসরায়েলি নেতৃত্ব আইডিএফকে গাজা সিটি ‘দখল’ তৎপরতা বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে; সেনারা সতর্ক অবস্থায় থাকবে।
- পরিকল্পনার বিভিন্ন খননে ধাপ হিসেবে গাজা উগ্রবাদমুক্তকরণ, পুনর্গঠন ও সৈন্য প্রত্যাহার-সহ বন্দি বিনিময় উল্লেখ রয়েছে।
ঘটনাবলি দ্রুত পরিবর্তনশীল—এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা কিভাবে কার্যকর হবে ও মসৃণভাবে বন্দি বিনিময়, যুদ্ধবিরতি এবং পুনর্গঠন বাস্তবায়িত হবে, সেটাই পরবর্তী কয়েকদিনের আশঙ্কা ও নজরকেন্দ্র হবে।