চলমান রাজনৈতিক আলোচনার প্রেক্ষিতে ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি এবং বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সব রাজনৈতিক দল একসঙ্গে ‘জুলাই সনদ’-এ স্বাক্ষর করবে, এমন যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, তা হয়তো আর বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

রোববার (২৯ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত দ্বিতীয় দফার সপ্তম দিনের আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

আলোচনার সূচনালগ্নে আলী রীয়াজ বলেন, গত বছরের জুলাই আমাদের জন্য ছিল ঐতিহাসিক। তখন আমরা দলীয় পতাকা নয়, জাতীয় পতাকা উঁচিয়ে ধরেছিলাম। কিন্তু আজ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনীহা ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমরা যে ঐক্য গড়েছিলাম, তা আজ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছি।

আরো পড়ুন : ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ করবে এনসিপি

তিনি আরো বলেন, জুলাই মাসের মধ্যেই চলমান আলোচনা কার্যকর পরিণতির দিকে না গেলে জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে আমাদের দূরত্ব তৈরি হবে। আমরা যেন আর সেই আগের পরিস্থিতিতে ফিরে না যাই।

আলোচনার মূল এজেন্ডা হিসেবে যে বিষয়গুলো পুনরায় উপস্থাপন করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে— সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বতন্ত্র নিয়োগ কমিটি, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ গঠন, উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি ও উচ্চকক্ষের কার্যকারিতা ও ভূমিকা।

আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বহু বিষয়ে নমনীয়তা দেখিয়েছে। আমরা ৭০ অনুচ্ছেদ, এনসিসি গঠন এবং উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার মতো স্পর্শকাতর বিষয়েও আগের কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছি। এখন সময় এসেছে দলগুলোও নিজেদের অবস্থানে নমনীয় হোক।

তিনি বলেন, টেকসই গণতন্ত্রের জন্য একটি স্বাধীন ও কার্যকর বিচারব্যবস্থা, শক্তিশালী সংসদ, এবং ক্ষমতার ভারসাম্য জরুরি। শুধু ব্যক্তি কেন্দ্রীক ক্ষমতা থাকলে গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হবে—এমন অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না।

আলী রীয়াজ প্রশ্ন তোলেন, গত জুলাইয়ে যে প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছিলাম, তার কতটুকু আজ বাস্তবায়ন হয়েছে? আমরা কি কেবল নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধা খুঁজব, নাকি দেশের স্বার্থে সত্যিকারের সংস্কারে অংশ নেব?

আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং মো. আইয়ুব মিয়া।