দিল্লির মন্ত্রীদের বাড়িতে পৌঁছে গেল হাড়িভাঙ্গা আম
ড. ইউনূসের আম কূটনীতিতে সুফল মিলবে কী?

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য যে আম পাঠিয়েছিলেন নয়াদিল্লিতে তা বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দেশটির রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, জলশক্তি মন্ত্রী বাংলাদেশের হাড়িভাঙ্গা আম পেয়েছেন বলে ভোরের কাগজ নিশ্চিত হয়েছে। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহাকেও আম পাঠিয়েছেন। উল্টো দিকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী আম পেয়ে ফিরতি উপহার হিসেবে সেখানকার আনারস ঢাকায় পাঠিয়েছেন।
দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রের খবর, ভারত সরকারের মন্ত্রীদের মতো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছেও বাংলাদেশের রংপুরের প্রসিদ্ধ হাড়িভাঙ্গা আম পৌঁছে দেয়া হয়েছে। যদিও কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস সূত্র এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দিল্লিসহ বিভিন্ন জায়গায় এভাবে আম পাঠাতেন। শেখ হাসিনা না থাকলেও তার দেখানো পথে আম কূটনীতির ধারা বজায় রাখলেন ড. ইউনূস। বাংলাদেশ ইলিশের পরে আম পাঠালেও ভারতের তরফ থেকে এখনো ভিসাসহ নানা বিষয়ে ধীরগতি রয়েছে। এরকম পরিস্থিতি ড. ইউনূসের আম কূটনীতিতে সুফল মিলবে কী? ওই সূত্রের দাবি, মূলত তিনটি কারণে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক থেমে আছে।
জানতে চাইলে দিল্লির জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি গৌতম লাহিড়ী ভোরের কাগজকে বলেন, ড. ইউনূসের পাঠানো আম দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রীদের কাছে বিতরণ করা হয়েছে। তার মতে, ড. ইউনূস এই আম পাঠিয়ে ভারতের কাছ থেকে সহযোগিতার জন্য বার্তা আদায়ের বার্তা দিয়েছেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চেয়েছেন। কিন্তু কতটুকু সেই সম্পর্ক হবে তা সময় বলে দেবে। তিনি বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদাঙ্ক অনুসরণ করে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ ভারতীয় নেতৃত্বকে আকৃষ্ট করার জন্য আম পাঠিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতীয় নেতৃত্বকে ‘ইলিশ’ মাছ পাঠানোর মাধ্যমে উপহার হিসেবে এমন প্রথা শুরু করেছিলেন। পরে আম পাঠানোও শুরু করেছিলেন। আম কূটনীতির সৌজন্যের আবির্ভাব অমীমাংসিত সমস্যার সমাধানের জন্য একটি সূক্ষ্ম বার্তা নিয়ে আসে, যার মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন একটি প্রধান অংশ। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তঃসরকারি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দ্রুত অবনতি হয়েছে। বাণিজ্যের জন্য স্থল সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকে নতুন হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহর নিয়োগ ও পদায়নের পর থেকে বরফ গলার নানা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। যার লক্ষণ দেখা যায়, গুজরাটের গম্ভীরা সেতু ভেঙ্গে যাওয়ার পর মো. ইউনূসই একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান যিনি ভারতীয় নাগরিকদের প্রাণহানির জন্য শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে শোক বার্তা পাঠান।
সম্প্রতি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে তিস্তা অববাহিকা উন্নয়ন প্রকল্প চীনের কাছে হস্তান্তর এবং চীনের সহায়তায় বিমানবন্দর নির্মাণ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আম উপহার দেয়ার এই সর্বশেষ বিষয়টি ভারতের প্রতি ইউনূস সরকারের পররাষ্ট্রনীতিতে সামান্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তিস্তা নদীর অববাহিকা কৃষির একটি প্রধান কেন্দ্র এবং উন্নতমানের আম উৎপাদনের জন্যও বিখ্যাত।
একজন কূটনীতিক এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন যে, সূক্ষ্ম বার্তাটি এই সমস্যার সমাধানের প্রয়োজনীয়তার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে এই বিশেষ আম গ্রহণকারী এবং স্বাদ গ্রহণকারী নেতারা অবশ্যই এর সমৃদ্ধ স্বাদের কথা মনে রাখবেন এবং সম্ভবত তিস্তা নদীর অববাহিকায় স্মরণ করিয়ে দেবেন।
কূটনীতির এই সুস্বাদু রূপটি মূলত ২০ বছরেরও বেশি আগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চালু করেছিলেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কাছে একটি বিশেষ উপহার হিসাবে ‘ইলিশ’ মাছের একটি চালান পাঠিয়েছিলেন, ১৯৯৬ সালে ল্যান্ডমার্ক গঙ্গার জল ভাগাভাগি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগে। এর ফলে প্রতিবেশীদের মধ্যে ‘ইলিশ কূটনীতি’র বিশেষ রূপ চালু হয়েছিল। গঙ্গার জল চুক্তি এখন অনুমোদন করতে হবে। আম কূটনীতি চুক্তি আলোচনা সফলভাবে সমাপ্তির পথ প্রশস্ত করবে কি না উভয় পক্ষই তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে দেখবে।