নতুন সভ্যতার স্থপতি হবে তরুণ প্রজন্ম : ড. ইউনূস

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৯ এএম

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বর্তমান সভ্যতার পরিবর্তনের মূল নেতৃত্ব গ্রহণ করবে তরুণ প্রজন্ম। তিনি বলেন, পূর্ববর্তী প্রজন্ম যেখানে পুরনো ব্যবস্থায় গড়ে উঠেছিল, সেখানে আজকের তরুণরা দেখতে পাচ্ছে কেবল কী আছে তা নয়, বরং কী হতে পারে। তাদের কল্পনা সীমাহীন।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘সামাজিক ব্যবসা, যুবসমাজ ও প্রযুক্তি’ বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
ড. ইউনূস বলেন, তিনি যে পদেই থাকুন না কেন, তার লক্ষ্য অপরিবর্তিত। একটি বিশ্ব গড়ে তোলা যেখানে সবার জন্য সুযোগ, মর্যাদা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত হবে।
প্রধান উপষ্টো বলেন, পদবি বদলাতে পারে, কিন্তু উদ্দেশ্য একই থাকে, এমন একটি পৃথিবী যেখানে ব্যবসা কেবল মুনাফার জন্য নয়, বরং মানুষের জন্য, পৃথিবীর জন্য এবং আমাদের যৌথ ভবিষ্যতের জন্য কাজ করবে।
আরো পড়ুন : ফেব্রুয়ারিতে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি প্রধান উপদেষ্টার
প্রধান উপদেষ্টা জলবায়ু পরিবর্তন, বৈষম্য ও বিশ্বব্যাপী সংঘাতকে মানবতার জন্য প্রধান হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই সংকটগুলো আলাদা নয়, বরং একে অপরের সঙ্গে জড়িত। তবে সেই সমস্যার সমাধানও অতীতের মতো নয়—এখন প্রয়োজন নবায়িত বহুপক্ষীয় কূটনীতি, গভীর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং টেকসই উন্নয়নের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার।
ড. ইউনূস বাংলাদেশের উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশটি এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে, জলবায়ু দুর্যোগ মোকাবিলা করছে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের বাজেট কমানো বা সহায়তা হ্রাস বিপরীত ফল বয়ে আনবে।
নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই নতুন অর্থনীতি মানুষের কল্যাণ, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং পরিবেশ রক্ষাকে অগ্রাধিকার দেবে। সামাজিক ব্যবসা এই নতুন অর্থনীতির কেন্দ্রে থাকবে। এটি শুধু মুনাফার জন্য নয়, বরং পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করবে। স্বাস্থ্যসেবা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিক্ষা ও ক্রীড়া সব ক্ষেত্রেই সামাজিক ব্যবসা প্রমাণ করছে, অর্থনৈতিকভাবে টিকে থেকেও জটিল সমস্যার সমাধান সম্ভব।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সভ্যতা সীমাহীন ভোগ, আহরণ ও সঞ্চয়ের দিকে যাচ্ছে, যা গ্রহকে হুমকির মুখে ফেলছে। তিনি বলেন, আমাদের নতুন সভ্যতা গড়ে তুলতে হবে—যেখানে লোভ নয়, বরং যৌথ প্রতিশ্রুতি মানুষ ও প্রকৃতির সমস্যার সমাধানকে চালিত করবে। ব্যবসাকে পুনঃসংজ্ঞায়িত করতে হবে, ব্যক্তিগত মুনাফার যান হিসেবে নয়, বরং সামাজিক কল্যাণের ইঞ্জিন হিসেবে।
ড. ইউনূস তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান, তাদের কল্পনা ও সৃজনশীলতাকে সামাজিক ব্যবসার দিকে চালিত করতে হবে। তিনি বলেন, যেখানে কল্পনা নেতৃত্ব দেয়, সেখানে উদ্ভাবন অনুসরণ করে। তরুণদের উদ্ভাবনই টেকসই সমাধান আনতে পারে—জলবায়ু পরিবর্তন, বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও বৈষম্যের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়।
প্রধান উপদেষ্টা আরো উল্লেখ করেন, আমরা এক নতুন প্রযুক্তিগত যুগে দাঁড়িয়েছি, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং অন্যান্য উদ্ভাবন শিল্প, সমাজ ও মানব অগ্রগতির কাঠামো পুনর্গঠন করতে পারে। দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করলে এগুলো টেকসই উন্নয়নের পথে অগ্রযাত্রাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে সক্ষম।
শেষে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান, চলুন আমরা নতুন এক তরঙ্গের স্থপতি হই, যেটি ন্যায়, টেকসই উন্নয়ন এবং আশার ওপর ভিত্তি করে এক পৃথিবী গড়ে তুলবে, যেখানে যৌথ স্বপ্ন মানবজাতির জন্য নতুন ভোর আনবে।