×

জাতীয়

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেফ এক্সিট কারা নিয়েছিলেন?

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫৯ পিএম

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেফ এক্সিট কারা নিয়েছিলেন?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে অতীতে অন্তত তিনবার সেফ এক্সিট নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘সেফ এক্সিট’ বা নিরাপদ প্রস্থান নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা। এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামের মন্তব্যের পর থেকে এ ইস্যুটি ঘিরে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যেও চলছে নানান প্রতিক্রিয়া।

যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিষয়টি নতুন নয়। বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে অন্তত তিনবার ‘সেফ এক্সিট’-এর ঘটনা ঘটেছে- ১৯৭৫, ২০০৭-০৮ এবং ২০২৪ সালে।

বর্তমান বিতর্কের সূত্রপাত

একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকারের উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের কথাও ভাবছেন।

তার এই মন্তব্য প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয় ব্যাপক আলোচনার ঝড়। প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করেননি উপদেষ্টারাও।

এনসিপির আরেক নেতা সারজিস আলম পাল্টা মন্তব্য করেন, কোথায় সেফ এক্সিট নেবে? পৃথিবীতে সেফ এক্সিটের একটাই জায়গা- সেটা হলো মৃত্যু।

বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানাও বলেন, সেফ এক্সিটের ব্যাপারে কী বলব ভাই? প্রত্যেকটা উপদেষ্টাই বিদেশি নাগরিক।

এদিকে, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমি কোনো এক্সিট খুঁজছি না। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, আমাদের কারও কোনো সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নেই। নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, আমাদের এক্সিটের কোনো সংকট নেই।

অন্যদিকে, গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় উপদেষ্টা সজীব ভূঁইয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, যাদের একাধিক দেশের পাসপোর্ট, তারাই আবার অন্যদের সেফ এক্সিটের তালিকা করে।

‘সেফ এক্সিট’ কী বোঝায়?

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘সেফ এক্সিট’ বলতে বোঝায়, জবাবদিহিতার বাইরে থেকে কোনো রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক ব্যক্তির নিরাপদে প্রস্থান নিশ্চিত করা। এটি সাধারণত ঘটে যখন ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তিত হয় বা কোনো রাজনৈতিক সংকটে কাউকে দায়মুক্ত রেখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে তিন দফা ‘সেফ এক্সিট’-এর নজির

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্তত তিনটি সময়ে এই ধারণা বাস্তব রূপ পেয়েছে।

১৯৭৫ সালের আগস্ট:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের ১৮ সদস্যকে হত্যার পর অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের রক্ষায় প্রণয়ন করা হয় ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’।

তাদের কেউ কেউ পরবর্তীতে বিদেশে কূটনৈতিক পদে নিয়োগ পান, যা বাংলাদেশের প্রথম ‘সেফ এক্সিট’ হিসেবে বিবেচিত হয়।

২০০৭–২০০৮ সালের ‘এক-এগারো’ সরকার:

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে দুই প্রধান দলীয় নেত্রীসহ বহু রাজনীতিক গ্রেফতার হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তৎকালীন সরকার নিজেদের নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিত করতে দুই শীর্ষ নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদের মতে, শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনাতেই ওই সময়কার প্রশাসনের ‘সেফ এক্সিট’ নিশ্চিত হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ ও সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ বিদেশে চলে যান।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট:

গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্দোলনে গুলি চালানোর নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে নিরাপদে দেশত্যাগের সুযোগ দেওয়া হয়।

বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদের ভাষায়, তিনি প্রাণে বেঁচেছেন, সেই অর্থে এটি সেফ এক্সিট। কারণ তাঁকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সামরিক বিমানে ভারতে পৌঁছে দেওয়া হয়।

তারেক রহমানের দেশত্যাগ

২০০৮ সালে তারেক রহমানের দেশত্যাগ নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এটি কি সেফ এক্সিট ছিল? মহিউদ্দিন আহমদের মতে, তিনি রাজনীতি না করার অঙ্গীকার দিয়ে দেশ ছাড়লেও, ওই অর্থে এটাকে সেফ এক্সিট বলা যাবে না।

সেফ এক্সিটের কারণ

বিশ্লেষকদের মতে, সংঘাত এড়ানো ও অস্থির পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কৌশল হিসেবেই ‘সেফ এক্সিট’-এর প্রয়োগ ঘটে।

মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, চলে গেলে সেও নিরাপদ থাকল, আমরাও ঝামেলামুক্ত থাকলাম। বিষয়টা এমন যে, একজন গণশত্রু পালালেন, কিন্তু তাকে পালাতে সাহায্য করল তারাই যারা একই গোয়ালের গরু।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেফ এক্সিট কারা নিয়েছিলেন?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেফ এক্সিট কারা নিয়েছিলেন?

এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন ইসি সচিব

এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন ইসি সচিব

দরপত্র ছাড়াই চিনি কিনছে সরকার

দরপত্র ছাড়াই চিনি কিনছে সরকার

২০ বছর পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান জেইসি বৈঠক

২০ বছর পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান জেইসি বৈঠক

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App