×

সাময়িকী

মেলা বাঙালি সংস্কৃতির শিকড়

Icon

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মেলা বাঙালি সংস্কৃতির শিকড়
বাংলার প্রাচীন সংস্কৃতি বর্ষবরণ উৎসব এবং বৈশাখী মেলা গ্রামীণ জীবন ছাপিয়ে নাগরিক জীবনে ধর্ম-গোত্র-বর্ণ নির্বিশেষ সব শ্রেণির মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। এ মেলা এখন জাতীয় বন্ধন উৎসবে পরিণত হয়েছে। বর্ষার আগমনকে নববর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে রবীন্দ্রনাথ গেয়েছেন, ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো ... মুছে যাক গøানি, ঘুচে যাক জ¦রা অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা। রসের আবেশ রাশি শুষ্ক করি দাও আসি’, এই যে রসের আবেশ রাশির সঙ্গে প্রাচীন কৃষিভিত্তিক জীবনযাত্রায় চাষকার্য এবং ফসল উৎপাদন মৌসুমের নিবিড় যোগ রয়েছে। বাঙালির ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রামের মতো সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা এবং লালন-পালনের জন্য রাজশক্তির বাধার মুখে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়েছে। ১৯৬৭ খ্রি. রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ হলে ঘুমন্ত বাঙালি জেগে ওঠে। ছায়ানট ও তখনকার আলোকিত কিছু মানুষের পৃষ্ঠপোষকতায় বাঙালির গ্রামীণ বর্ষবরণ উৎসব গ্রাম থেকে আসন পাতে ঢাকা নগরের রমনায়। সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের এই নিবিড় বর্ষবরণ পালন পরবর্তীতে বাংলাদেশের সব নগর, বন্দর, গ্রামগঞ্জ এমনকি বহিঃবিশ্বে বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে পহেলা বৈশাখ বরণের ছায়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। গ্রামীণ জীবনে বৈশাখী মেলা পালনের উৎস : সেই সুপ্রাচীন যুগ থেকে বাঙালির পূর্বসূরিরা ধর্মীয় এবং সামাজিক নানা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উৎসব এবং বৈশাখী মেলা পালন করে আসছে। যেমন- বৈশাখী উৎসব (বৌদ্ধ) চৈত্রসংক্রান্তি, বারুণী উৎসব, দোল উৎসব, মাঘি পূর্ণিমা, রথযাত্রা, পৌষসংক্রান্তি, বিভিন্ন পূজা, ঈদ, পুণ্যাহ (খাজনা আদায়) মেলা, মহরম, উরস মেলা, গাজীর মেলা, পাঁচপীরসিন্নি মেলা, বনবিবি মেলা, বদরের উরস মেলা, ফকিরের মেলা, টেংরা মাগুর (মাছের) মেলা, বড়দিন উৎসব মেলা, কঠিন চীবরদান মেলা, চড়ক মেলাসহ অসংখ্য লোকজ মেলা বৈশাখী উৎসব-মেলাকে কেন্দ্র করে অতীতকাল থেকে শুরু হয়ে আজো চলমান। আছে গ্রামীণ জীবনে কবি গান, জারি গান, যাত্রাপালা উপলক্ষে সপ্তাহ, পক্ষকাল বা মাসব্যাপী মেলা উৎসব। নাগরিক জীবনে মেলার প্রভাব : গ্রামীণ মেলা নাগরিক জীবনে প্রভাব ফেলায় নগরকেন্দ্রিক নতুন নতুন মেলার উদ্ভব হয়েছে। যেমন- উন্নয়ন মেলা, ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা, শিল্প-বাণিজ্য মেলা, কারুশিল্প মেলা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা, শিক্ষা মেলা, বৃক্ষ মেলা, ভাষা দিবস একুশে মেলা, স্বাধীনতা মেলা, বিজয় মেলা, মুজিবনগর মেলা, পশুপাখি মেলা, পর্যটন মেলা, পিঠাপুলি মেলা, আনন্দ মেলা, নারী দিবস মেলা, বলীখেলা মেলা, তথ্য মেলা, জাতীয় কুটির শিল্প মেলা, লোকশিল্প মেলা, এস এম ই মেলা, নবান্ন মেলা, কর মেলাসহ সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বহু নতুন মেলার সৃষ্টি হয়েছে। কবি-শিল্পী-ব্যক্তি নামের মেলা : কবি-শিল্পী-সাহিত্যিকগণের জন্ম-মৃত্যুকে উপলক্ষ করে ব্যক্তি নামের মেলা পালিত হয়ে থাকে। যেমন- মধু মেলা (যশোর), রবীন্দ্র মেলা (শিলাইদহ, শাহজাদপুর, পাতিসর, দক্ষিণডিহি), নজরুল মেলা (ত্রিশাল), লালন মেলা (কুষ্টিয়া), মীর মশাররফ মেলা (কুষ্টিয়া), সুলতান মেলা (নড়াইল), ভুলু দেওয়ান মেলা (ঝিনেদা), খান-ই-জাহান (উরস) মেলা (বাগেরহাট), খানবাহাদুর আহসানউল্লাহ (উরস) মেলা (সাতক্ষীরা), বিজয় সরকার মেলা (নড়াইল), জসীমউদ্দীন মেলা (অম্বিকাপুর), বেগম রোকেয়া মেলা (রংপুর), অনুকূল ঠাকুর মেলা-৩০ ভাদ্র (পাবনা), জিন্দাপীর মেলা (দিনাজপুর), শ্রীচৈতন্য মেলা (সিলেট), ভাসানী মেলা (টাঙ্গাইল), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেলা (টুঙ্গিপাড়া), হরিচাঁদ ঠাকুর মেলা (ওড়াকান্দি), পাগলা কানাই মেলা (ঝিনেদা)। এছাড়া নানা ধর্মবিশ্বাস এবং মতপথের গুণী ব্যক্তিগণের স্মরণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে উৎসব এবং মেলা হয়ে থাকে। এসব মেলা এবং পার্বণ কিন্তু ওই আদিম বৈশাখী মেলার পথ ধরে প্রসারিত হয়েছে। বৈশাখ বরণে পান্তা সংস্কৃতি : একটা লোকজ প্রবাদ আছে- ‘আমানি ঠেলে তবে পান্তা’। কথাটার সরল অর্থ দাঁড়ায়- আমানি খাওয়ার পর পান্তা খাওয়া। অর্থাৎ পান্তা ভাতের সঙ্গে যে পানীয় জল থাকে সেই জল খাওয়ার পর পান্তা খাওয়ার পালা। এটা পান্তা ভাতের বৈশিষ্ট্য। অতীতে গ্রামীণ কৃষক সমাজ সকালে পান্তা খেত। এখনো গ্রামের বহু মানুষ সকালে পান্তা খেয়ে থাকে। প্রাচীন যুগ থেকেই গ্রাম্য কৃষক পরিবারগুলো বিশ্বাসের ভিত্তিতে আমানি খেয়ে নতুন বছরকে বরণ করত। এই আমানি তৈরির প্রক্রিয়া ছিল একটু ভিন্ন। চৈত্রের শেষ দিনে মাটির হাঁড়িতে আতপ চাল ধুয়ে আমের পল্লব (এক গুচ্ছ পাতা) দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হতো। সকালে পরিবারের সবাইকে ওই ভিজানো চাল জলসহ খেতে দেয়া হতো। একই সঙ্গে আমের পল্লব দ্বারা মাথায় জল ছিটিয়ে দেয়া হতো শুদ্ধতার প্রতীক হিসেবে, যাতে সারা বছর সুখে-শান্তিতে থাকতে পারে। এর পর ঝাল পোড়া বা অন্য কিছু মাখিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার পালা। এটা গ্রাম বাংলার চিরন্তন রীতি। বর্তমান নাগরিক জীবনে নববর্ষ পালনে গরম ভাতে জল মিশিয়ে পান্তা প্রস্তুত করে ইলিশ ভাজি, নানা রকম দেশি মাছের ভর্তা, ঝাল ভাজিসহ বহু উপকরণ যুক্ত হয়েছে। কৃষিভিত্তিক জীবন ও বর্ষবরণ : বাঙালির বর্ষবরণ কবে কখন থেকে শুরু হয়েছে তা দিনক্ষণ দিয়ে বলতে না পারলেও এ কথা বলা যায় যে, যখন থেকে কৃষিভিত্তিক জীবনযাত্রা শুরু হয়েছে তখন থেকে বর্ষাকে বরণ করার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। প্রাচীন যুগ থেকে বাঙালি কৃষককুল বর্ষার আগমনকে ফসল উৎপাদনের সময় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সেই যুগে হালচাষ বা লাঙল চাষই ছিল ফসল উৎপাদনের একমাত্র মাধ্যম। তাই তারা স্বশিক্ষা জ্ঞানের বিচারে শুভদিন নির্ধারণ করে নতুন বর্ষার আগমনে হালচাষ বা লাঙল চাষ আরম্ভ করতেন, কিছু মাঙ্গলিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। এই হালচাষ আরম্ভটাকে কৃষকের ভাষায় বলা হয়, ‘হালপুটনে বা হালফুটানো’ অর্থাৎ হালচাষের নতুন বছর শুরু। এই দিনে কৃষক তার গরু স্নান করিয়ে মাথায় তেল-সিঁদুর দিয়ে ধান, দূর্বাঘাস, আমের পল্লব ঠেকিয়ে পরিবারের নারী-পুরুষ শুদ্ধ হয়ে দিনের পূর্বভাগে (তিথি মোতাবেক) শুভক্ষণে শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, বাদ্দিবাজনার মাধ্যমে বলদ গরু দিয়ে হালচাষ উদ্বোধন করতেন। আদিম কৃষককুলের উত্তরসূরিরা আজো পাঁজি-পুঁথি দেখে এ সংস্কৃতি পালন করে থাকেন। এই হালপুটনের দিন থেকে শুরু হয় কৃষকের চাষবর্ষ বা হালবর্ষ। যেটি পরবর্তীতে আধুনিক বাঙালি সংস্কৃতিতে নববর্ষ, পহেলা বৈশাখ বা বর্ষবরণ উৎসব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এসব বিবেচনায় বৈশাখী উৎসব বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির গৌরবময় উত্তরাধিকার। কারণ কৃষিভিত্তিক জীবনযাত্রা থেকে বাঙালি সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছে। প্রাচীন সভ্যতায় কুটির শিল্প নিদর্শন (প্রাচীন যুগ : খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক-খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতক) : প্রাচীন সভ্যনগর হিসেবে বাংলাদেশের মহাস্থানগড় (বগুড়া), ওয়ারিবটেশ্বর (নরসিংদী), শিলুয়ালেখ (ফেনী), সাভার ঢিবি (ঢাকা), ফতেহপুর (চট্টগ্রাম), শালবন বিহার (কুমিল্লা), বারোদুয়ারি ঢিবি (নেত্রকোনা), ভরত-ভায়না (যশোর), কোদলারমঠ (বাগেরহাট), ভাতভিটা (মাগুরা), পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার (নওগাঁ), সীতাকোট বিহার (দিনাজপুর) জগদ্দল বিহার, হলুদবিহার (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)-সহ দেশের বহু প্রাচীন পুরাকীর্তির কিছু কিছু প্রতœতাত্ত্বিক খননে আবিষ্কৃত হয়েছে অসংখ্য কুটির শিল্পজাত দ্রব্যের ভগ্ন অংশ যেমন- পোড়ামাটির ফলক, পোড়ামাটির সূর্য, ঢালাই মুদ্রা, নানা রকম মাটির ব্যবহার্য পাত্র, খেলনা, অলংকার, ছাঁচ, চকচকে কালো পাথর, জালের কাটি, ধাতব দ্রব্য, বিভিন্ন প্রকার মূর্তি ইত্যাদি। প্রতœতাত্ত্বিকগণের মতে, এসব দ্রব্য খ্রিস্টপূর্বে চতুর্থ শতক থেকে খ্রিস্টীয় দ্বাদশ/ত্রয়োদশ শতকের মধ্যের প্রতœশিল্প নিদর্শন। বৈশাখী ও কুটির শিল্প মেলা : মেলা শব্দটি সহজাত নানা অর্থে ব্যবহৃত হলেও এ অনুষঙ্গে মেলা অর্থ মিলিত হওয়া বা এক স্থানে সাময়িক অবস্থান অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ কুটির শিল্পজাত পণ্য বিনিময়, বিকিকিনি এবং আদান-প্রদান অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কোন উৎসব, অনুষ্ঠান বা পালা-পার্বণ উপলক্ষে গ্রামীণ জীবনযাত্রায় জনসমাগম ঘটলে, সেখানে মানুষ তার উৎপাদিত হস্তশিল্পজাত দ্রব্য, বিনিময় বা বিক্রির জন্য উপস্থাপন করেছেন। বৈশাখী ও বর্ষার সমগম উপলক্ষে এই কাজ প্রাচীন যুগ থেকে শুরু হয়েছে, জীবন-জীবিকাকে অবলম্বন করে। পরবর্তী পর্যায় কেউ কেউ পেশা হিসেবে বেছে নেয়ার কারণে কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, ছুতার, ঋষি শেকরা ইত্যাদি সম্প্রদায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। এদের উৎপাদিত পণ্য যেমন- দা, বঁটি, ছুরি, কাঁচি, মাটির হাঁড়ি, সরা, কলস, বদনা, বাসন, নানা রকম খেলনা, জাল, পোলো, খারা, গামছা, কাচা, ধুতি, লুঙ্গি, পিড়ে, ব্যালোন, চরকা, লাঙল, ফাল, ঝুড়ি, ডালা, কুলো, চালন, ঝাপি, তামা-পিতল-সোনা-রুপার কানের দুল, বাজুবন্ধ, রিং, নাকফুল, আংটি, হার ইত্যাদি কুটির শিল্পজাত দ্রব্য বিনিময় এবং বিক্রিকে কেন্দ্র করে কুটির শিল্প মেলা আরম্ভ হয়েছে। গ্রামীণ মেলার উদ্ভব মূলত আদিম জনজাতির হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান, খ্রিস্টান ও অন্যান্য নানা জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তিতে জাতীয় ও গোষ্ঠী কেন্দ্রিক আয়োজিত অনুষ্ঠান উৎসবকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ দ্বিধাহীন চিত্তে একসঙ্গে মিলিত হয়েছেন, পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, আনন্দ বিনোদন, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ, সর্বোপরি একে অন্যের পণ্যের উদ্ভাবনী জ্ঞান আহরণ, মতবিনিময় ও সম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে। বাঙালির এই মেলা বারো মাসই কোনো না কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। বছরজুড়ে অর্থাৎ বৈশাখ থেকে চৈত্র মাস, জানুয়ারি-ডিসেম্বর মাস এবং আরবি মহররম, জমাদিউস সানি, রজব, রবিউল আউয়াল ও অন্যান্য মাসের তারিখ অনুসারে অনুষ্ঠিত পার্বণ বা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের গ্রাম ও শহরে অসংখ্য মেলা বসে। এ সংক্রান্ত বিসিক কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের মেলা’ গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী সারা বছর ধরে দেশের ৬৪ জেলায় বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে ১ হাজার ৭৮৮টি মেলা হয়ে থাকে। শিল্প মেলা ও বিসিকের কর্মকাণ্ড : কোনো দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত সেই দেশের শিল্পোন্নয়ন। বাঙালির জাতীয় উন্নয়নে কুটির শিল্পের গুরুত্ব অনুধাবণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের শ্রম, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালনকালে ১৯৫৭ খ্রি. ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন গঠন করেন। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বিসিক দেশে কুটির, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প উন্নয়নে বহুমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। ফলে সনাতনী প্রথার কুটির শিল্প সামগ্রী থেকে বহু নতুন নতুন যুগোপযোগী শিল্প সামগ্রীর উদ্ভব হয়েছে। ঢাকায় প্রথম বৈশাখী কুটির শিল্প মেলা : বিসিক গ্রামীণ শিল্প মেলাকে জনপ্রিয় এবং নাগরিক জীবনে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রথম বৈশাখী মেলার আয়োজন করে। এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খাঁন তার এক বাণীতে উল্লেখ করেছেন, ‘বৈশাখী মেলা প্রথম আয়োজন ১৩৮৫ বঙ্গাব্দে।... এমনি দুঃসময়ে বাঙালি সংস্কৃতির নব-উজ্জীবনের লক্ষে এগিয়ে এলেন পটুয়া শিল্পী কামরুল হাসান। বাঙালি সংস্কৃতির শক্তিশালী উৎস বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে গ্রামীণ মেলার আদলে রাজধানীতে বৈশাখী মেলার আয়োজন করতে এর পরিকল্পনা করা হয় তখনকার সমকাল অফিসে।... সেদিনকার বৈশাখী মেলার আয়োজনের পেছনে শুধু পণ্য কেনাবেচার বিষয়টি জড়িত ছিল না, তা ছিল... বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও উজ্জীবিত করে বাঙালিত্বের চেতনাকে দীপ্র করা।’ গবেষক ড. আবুল আহসান চৌধুরি তার বাংলাদেশের মেলা প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ‘নববর্ষ উপলক্ষে বৈশাখী মেলার চল বেশ পুরনো। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন, বাংলা একাডেমি এবং লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিকল্পিত আয়জনে বৈশাখী মেলা নতুন মাত্রা পেয়েছে।’ (বাংলা একাডেমির ফোকলোর সংকলন, পৃষ্ঠা : ৬০-৬১) নববর্ষকে কেন্দ্র করে বৈশাখী উৎসব এবং মেলা বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব। বৈশাখী তার আত্মশক্তি বলে সভ্যতা সৃষ্টির যুগ থেকে মানুষের চেতনাকে শানিত করেছে, শিল্প-সংস্কৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ, বহু জাতি-গোষ্ঠী, ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষকে এক বাঙালি জাতীয়তাবাদের এবং অসম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার কাজে মেলবন্ধন রূপে চিহ্নিত হয়েছে। তাই যুগ যুগ ধরে বহমান বৈশাখী উৎসব ও মেলা বাঙালি সংস্কৃতির শিকড়ে পরিণত হতে সক্ষম হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

অন্তর্বর্তী সরকার: আস্থার ভাঙন!

অন্তর্বর্তী সরকার: আস্থার ভাঙন!

এসএসসির ফল প্রস্তুত, শিগগিরই প্রকাশ

এসএসসির ফল প্রস্তুত, শিগগিরই প্রকাশ

এবার নিজের নামে সুগন্ধি আনলেন ট্রাম্প

এবার নিজের নামে সুগন্ধি আনলেন ট্রাম্প

বাংলাদেশে জাপানের সহযোগিতা আরও বাড়াতে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

বাংলাদেশে জাপানের সহযোগিতা আরও বাড়াতে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App