আরপিও সংশোধন: যেসব পরিবর্তন এলো
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০১:২০ পিএম
					ছবি : সংগৃহীত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জারি করা হয়েছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ২০২৫–এর অধ্যাদেশ। সোমবার (৪ নভেম্বর) জারি করা এ অধ্যাদেশে একগুচ্ছ পরিবর্তনের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু নতুন বিধানও।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, এই সংশোধিত আরপিওর ভিত্তিতেই শিগগির দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হবে।
নতুন আরপিও অনুযায়ী, আদালত ঘোষিত ফেরারি বা পলাতক আসামি প্রার্থী হতে বা ভোট করতে পারবেন না। দেড় দশক পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় যুক্ত হয়েছে সশস্ত্র বাহিনী—সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী। পাশাপাশি ‘না’ ভোট ব্যবস্থা ফিরেছে একক প্রার্থীর আসনে।
সংশোধিত আদেশে আরো বলা হয়েছে, সমভোট পেলে লটারির পরিবর্তে পুনঃভোট হবে, জোটে অংশ নিলেও ভোট দিতে হবে নিজ দলের প্রতীকে, প্রার্থীর জামানত ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে, দল আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে এবং অনিয়মের কারণে প্রয়োজনবোধে পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ইসিকে।
এছাড়া প্রথমবারের মতো আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি চালু হচ্ছে, যার আওতায় প্রবাসী, নির্বাচনি এলাকার বাইরে থাকা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ও কারাবন্দীরা ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন। একই সঙ্গে এআইয়ের অপব্যবহার, মিথ্যা তথ্য ও অপতথ্য প্রচারকে নির্বাচনি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
আরো পড়ুন : জোটেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে
আরপিওর ২ নম্বর অনুচ্ছেদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীর নাম যুক্ত করা হয়েছে, যা ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনের মতোই। এবার এই সংশোধনের ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর তৎপরতা আরো সুদৃশ্য হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
৮ নম্বর অনুচ্ছেদে ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতের দায়িত্ব জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার হাতে দেওয়া হয়েছে। ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রিটার্নিং অফিসার কোনো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলে তা ইসিকে জানাতে হবে।
১২ নম্বর অনুচ্ছেদে নতুন বিধান যুক্ত হয়েছে, আদালত ফেরারি বা পলাতক আসামি ঘোষণা করলে তিনি সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা কোনো কার্যনির্বাহী পদেও থাকলে প্রার্থী হওয়া যাবে না।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী পদকে ‘লাভজনক পদ’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, ফলে এই পদে থেকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকছে না। প্রার্থীদের হলফনামায় দেশে-বিদেশে আয় থাকলে তা বিস্তারিত জানাতে হবে এবং সর্বশেষ বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে জামানতের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে ৫০ হাজার টাকায়। ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশে ক্ষুব্ধ হলে শুধু প্রার্থী নয়, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানও আপিল করতে পারবে।
১৯ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘না’ ভোটের বিধান যুক্ত করা হয়েছে—যদি কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকেন, তাহলে ব্যালটে ‘না’ ভোটের অপশন থাকবে। তবে দ্বিতীয়বার নির্বাচনের পরও একক প্রার্থী থাকলে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে।
২০ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত একাধিক দল জোটে গেলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে।
২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রিজাইডিং অফিসারের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে—ভোটে অনিয়ম বা ব্যালট বাক্স ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাবেন, এরপর ইসি নতুন ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে।
ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিধান ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ইসি ইতোমধ্যে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২৯ ও ৩৬ নম্বর অনুচ্ছেদে ভোটকেন্দ্র ও গণনায় গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সমভোট পেলে আর লটারির মাধ্যমে নয়, পুনঃভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে।
৪৪ নম্বর অনুচ্ছেদে ভোট ব্যয়ের নতুন সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে—প্রতি ভোটারের জন্য সর্বোচ্চ ১০ টাকা, মোট ব্যয় ২৫ লাখ টাকার বেশি নয়। অনুদানের তালিকা প্রকাশ্যে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
৭৩ নম্বর অনুচ্ছেদে মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য, গুজব, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার রোধে দল ও প্রার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান আনা হয়েছে। ৯০ নম্বর অনুচ্ছেদে দল নিবন্ধন, আর্থিক অনুদান, এবং নিবন্ধন স্থগিত হলে প্রতীক স্থগিতের বিধান যোগ করা হয়েছে। ৯১ নম্বর অনুচ্ছেদে অনিয়মের কারণে শুধু কেন্দ্র নয়, প্রয়োজনে পুরো আসনের ফল বাতিলের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ইসিকে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমের পাশাপাশি ইসির ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের সময় গণভোট সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্ত বা ঐকমত্য এলে কমিশনের কর্মপরিকল্পনায়ও পরিবর্তন আসতে পারে।
আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে নির্বাচনি আইন সংস্কারের সব কাজ সম্পন্ন হলো। এর আগে ভোটার তালিকা আইন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান আইন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ভোটকেন্দ্র নীতিমালা, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ও সাংবাদিক নীতিমালাসহ সব সংস্কার কার্যক্রম শেষ করেছে ইসি।
সংশোধিত আরপিওর ভিত্তিতে এখন দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি দ্রুত জারি করবে নির্বাচন কমিশন।
	
																	
																	
																	
																	
																	
																	
																	
																	
																	
																	