শীতের স্থবিরতা কাটিয়ে লালমনিরহাটে কর্মব্যস্ততা
রবিউল ইসলাম বাবুল, লালমনিরহাট থেকে
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৪ পিএম
ছবি: ভোরের কাগজ
টানা পাঁচ দিন সূর্যের দেখা না মেলায় ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতে স্থবির হয়ে পড়েছিল লালমনিরহাটের জনজীবন। শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে কৃষি কাজসহ সব ধরনের কর্মব্যস্ততায় দেখা দেয় ভাটা। তবে বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই রোদের দেখা মিলতেই যেন নতুন প্রাণ ফিরে আসে জেলার কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের জীবনে।
বুধবার দুপুরে লালমনিরহাট জেলার পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে কৃষকদের এই কর্মচাঞ্চল্য চোখে পড়ে। কনকনে হিমেল হাওয়া, শীতের তীব্রতা ও দীর্ঘদিনের নীরবতা কাটিয়ে উজ্জ্বল রোদ উঠতেই মাঠে নেমে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। ফসলের প্রস্তুতি ও জমি পরিশোধনের কাজে আবারও ব্যস্ত হয়ে উঠেছে কৃষিজীবী মানুষ।
টানা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে জেলার অধিকাংশ ফসলি মাঠে জমির কাজ প্রায় বন্ধ ছিল। সেই অচলাবস্থা কাটিয়ে আজ মাঠে আবার কর্মব্যস্ততা শুরু হয়েছে। কৃষি কার্যক্রমে এই সক্রিয়তা কৃষকদের মধ্যে নতুন আশার আলো জাগিয়েছে।
মাঠে কর্মরত কৃষি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে কৃষকরা ল্যান্ড লেভেলিং, বীজতলার পরিচর্যা এবং অন্যান্য শস্যক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমির স্তর সমান করা, বীজতলা ঘেরা ও সেচ ব্যবস্থার প্রস্তুতিতেও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ ও দিনমজুররা।
দীর্ঘদিন পর সূর্যের আলো আবার আকাশে উঁকি দেওয়ায় কৃষকদের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি। স্থানীয় কৃষক মো. মমতাজ মিয়া বলেন, গত কয়েকদিন রোদ ছিল না। জমি কাদা ও কুয়াশায় ভিজে থাকায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না। আজ রোদ উঠতেই সবাই আবার মাঠে নেমেছি। রোদ আমাদের জন্য নতুন শক্তি ও আশা।
আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, লালমনিরহাটে দিনভর হালকা থেকে মাঝারি রোদ ও ধোঁয়াশা বিরাজ করছে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকতে পারে। শীতের মধ্যেও এই আবহাওয়া কৃষক ও সাধারণ মানুষের জন্য তুলনামূলকভাবে অনুকূল বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় কৃষি তথ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, গত কয়েকদিনের শীত ও কুয়াশার কারণে ফসলের ক্ষতি এবং কৃষি কাজ ব্যাহত হয়েছিল। তবে এই সময়ে রোদ উঠলে ফসল রোপণ, সার প্রয়োগ ও জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে, যা বোরো, আমন, ভুট্টা, আলু, গমসহ রবি শস্য উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
হাতিবান্ধা উপজেলার সানিয়াজন গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, রোদ উঠেছে, এখন গাছগুলো সঠিকভাবে বেড়ে উঠবে। তাই সময়মতো প্রস্তুতি নেওয়া খুব জরুরি।
স্থানীয় নারী কৃষক রোকছানা বেগম বলেন, শীতের পরে আবার মাঠে কাজ শুরু হওয়ায় আমরা ভালো ফলনের আশা করছি।
পাটগ্রাম উপজেলার রফিক উদ্দিন বলেন, রোদ উঠেছে, এখন ভুট্টা ক্ষেতের পরিচর্যা করতে হবে। টানা শীতে পাটগ্রাম এলাকার মানুষ কাবু ছিল। আজকের রোদ সবার মনে নতুন আশার আলো জাগিয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার ওসমান আলী জানান, টানা ছয়-সাত দিন শীতের তীব্রতায় মাঠে কাজ করতে সাহস পাইনি। আজ রোদ উঠতেই আবার কাজে নেমেছি।
আদিতমারী উপজেলার রিকশাচালক হরে কান্ত বর্মন বলেন, কয়েকদিন ঠান্ডার কারণে রিকশা বের করতে পারিনি। আজ রোদ উঠেছে, মন ভালো আছে, আয়ও বেড়েছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার ভ্যানচালক ঝন্টু মিয়া বলেন, প্রচণ্ড ঠান্ডায় হাত-পা অবশ হয়ে আসছিল। আজ রোদ ওঠায় কাজ করতে পারছি, আয় ভালো হবে বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক রকিব হায়দার বলেন, আজকের আবহাওয়া আগের কয়েক দিনের তুলনায় অনেকটাই উন্নত। রোদ ওঠায় কৃষকদের দুঃসময় কেটে গেছে। এতে ফসল উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে, তাই কৃষিকাজে আবহাওয়ার তথ্য নিয়মিত জানা জরুরি।
