যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ‘সিগনেচার প্রকল্প’
৪৮ জেলায় ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:১২ পিএম

৪৮ জেলায় ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়াধীন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বাস্তবায়নাধীন ‘দেশের ৪৮ জেলায় শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশী যুবদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২৫ মেয়াদে তিন মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে।
আজ রবিবার (৫ অক্টোবর) ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ প্রশিক্ষণ ব্যাচের উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মাহবুব-উল-আলম। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি প্রকল্পটিকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একটি ‘সিগনেচার প্রকল্প’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, দেশের শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশী তরুণদের কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে এই প্রকল্প অসাধারণ অবদান রাখছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১), মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব মোঃ আবুল হাসান (যুগ্মসচিব) এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ আলম। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রকল্প পরিচালক মোঃ মানিকহার রহমান (যুগ্মসচিব)।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিবসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক, সহকারী প্রকল্প পরিচালক, সংশ্লিষ্ট জেলার উপপরিচালকবৃন্দ, ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেডের জেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষক, কো-অর্ডিনেটর এবং প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
অতিরিক্ত সচিব মোঃ ইকবাল হোসেন জানান, খুলনা জেলায় মাত্র ৭৫টি আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ১,০৭৩ জন প্রার্থী। এ তথ্য প্রকল্পটির প্রতি যুবসমাজের ব্যাপক আগ্রহের সুস্পষ্ট প্রমাণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২৫ মেয়াদের এ ব্যাচে ভর্তির জন্য সারাদেশ থেকে ৯২,৭৬৩ জন প্রার্থী অনলাইনে আবেদন করেন। তাদের মধ্যে ৪০,৭৫৮ জন যোগ্য প্রার্থীকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য বাছাই করা হয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে সর্বশেষ ৩,৬০০ জনকে (প্রতি জেলায় ৭৫ জন) চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়।
৩ মাসব্যাপী (৬০০ ঘণ্টা) প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে ক্লাস নেওয়া হবে। প্রশিক্ষণার্থীদের উৎসাহিত করতে প্রতিদিন ২০০ টাকা যাতায়াত ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও বিকালের নাস্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া প্রশিক্ষণ চলাকালীন প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ উপকরণ প্রদান এবং কোর্স শেষে সনদপত্র দেওয়া হবে।
সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় মোট ৩টি ব্যাচে ৭,২০০ জন যুব-যুবতী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন, যাদের মধ্যে ৪০% নারী। এদের মধ্যে ৪,৫৬৭ জন (৬৩%) ইতোমধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করেছেন। তাদের আয় এখন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ লাখ ১ হাজার ৫২৬ মার্কিন ডলার এবং ২ কোটি ৭৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩২১ টাকা, যা মোট বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকার সমপরিমাণ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ আয় দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের ৪৮ জেলার চতুর্থ ব্যাচের ৩,৬০০ জন প্রশিক্ষণার্থী সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে পূর্ববর্তী ব্যাচের ২ জন সফল প্রশিক্ষণার্থী তাদের সাফল্যের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং নতুন ব্যাচের ২ জন প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণে সুযোগ পাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীদের জন্য নিয়মিত ভার্চুয়াল মেন্টরিং ক্লাস পরিচালনা করছে। এর ফলে যারা এখনো আয়মুখী হতে পারেননি, তারাও ধীরে ধীরে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব উদ্যোগে সারাদেশে ৬৪ জেলায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের নিয়োগ দিয়ে ই-কমার্স, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংসহ বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে এ কার্যক্রমে গড়ে ১,৬০০ জনের বেশি ফ্রিল্যান্সার কাজ করছেন, যা দেশের কর্মসংস্থানে নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।
প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ল্যাব, দক্ষ জনবল এবং পরবর্তী সাপোর্ট কার্যক্রম নিশ্চিত করে এ প্রকল্পকে “যুগোপযোগী ও কর্মসংস্থানমুখী” উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এটি শুধু একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নয়; বরং তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই কর্মসংস্থানের পথপ্রদর্শক মডেল।