সাড়ে ৯ কোটি চাকরি খেয়ে নেবে এআই, এড়াতে পারবেন কারা?

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ০৬:৪৮ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) কী সত্যিই চাকরির বাজারে থাবা বসাচ্ছে? এই ভয়টাই চেপে বসেছে বিশ্বজুড়ে। চারদিকে চাকরি গেল গেল রব। অনেকেই মনে করছেন, চাকরির বাজারে ভবিষ্যতে ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে এআই। এর আগ্রাসী প্রসারের কারণে বিভিন্ন সংস্থা মানবসম্পদের বোঝা কমিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর হতে চাইছে।
এআই যুগে এই প্রশ্নই যেন উঠে আসছে বার বার। আশঙ্কা ছড়িয়েছে, অনেক কাজ কেড়ে নেবে এটি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়া সম্ভব বলে বহু সংস্থাই কর্মী সঙ্কোচনের পথে হাঁটছে।
চাকরির বাজারের ভবিষ্যৎ রূপরেখা কী হতে চলেছে সে-ই নিয়ে চলতি বছরে (২০২৫ সাল) ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম একটি সমীক্ষা করে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব রূপান্তর, অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যার পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজার পুনর্গঠিত হচ্ছে। আগামী দিনে কাজের বাজারে একটা বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে বিশ্ববাজারে উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটলেও আগামী দিনে চাকরির বাজারে সঙ্কটের মুখে পড়তে হতে পারে বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত চাকরিজীবীদের। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দখল নিচ্ছে আমাদের জীবন ও যাপনের বহু ধাপ। এআই সস্তা এবং এর প্রয়োগও সহজ।
আগামী পাঁচ বছরে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অন্যান্য দক্ষতার তুলনায় লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তালিকার শীর্ষে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বিগ ডেটা। এর পরে রয়েছে নেটওয়ার্ক, সাইবার নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তিগত শিক্ষা।
এক হাজারেরও বেশি সংস্থার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সমীক্ষাটি চালানো হয়েছে। সেই রিপোর্টে উঠে এসেছে, ব্যবসায়িক রূপান্তরের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে দক্ষতা। নতুন প্রযুক্তিতে কাজ কমবে না। কাজ করাটা আরও সহজ হয়ে উঠবে।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে শুরু হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই’র প্রয়োগ। দিন দিন এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বহু মানুষ যেমন চাকরি হারাতে পারেন, তেমনই বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৈরি হবে নতুন নতুন চাকরির সম্ভাবনাও। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমান কর্মসংস্থানের ১৪ শতাংশ নতুন কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ করবে।
এমন কিছু কাজ, যা শিখিয়ে নেওয়া যায়, তা কৃত্রিম বুদ্ধিনির্ভর মেশিন করতে পারবে প্রচলিত প্রযুক্তির সাহায্যেই। প্রযুক্তি উন্নত হলে গবেষণাগারেও ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যেতে পারে যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তা। ফলে ২০২৫ সালে প্রায় ৯ কোটি চাকরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আওতায় চলে যেতে পারে। তবে এআই ব্যবহারকারী সংস্থাগুলো সাড়ে ৭ কোটি নতুন চাকরি সৃষ্টিও করবে।
চাকরির ভূমিকা পরিবর্তনের ইতিবাচক দিকও আছে। এআই আসার কারণে অনেক নতুন নতুন চাকরির ক্ষেত্রও তৈরি হবে। আবার কিছু নিরাপদ চাকরি আছে, যেখানে এআই তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না। এই অবস্থায় কাদের কাজ থাকবে আর কাদের থাকবে না? সমীক্ষা বলছে, নতুন প্রযুক্তিতে কাজ কমবে না। কাজ করাটা আরও সহজ হয়ে উঠবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তিগত বুদ্ধির দ্বারা চালিত ভূমিকার চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই চাকরিগুলোর মধ্যে রয়েছে বিগ ডেটা বিশেষজ্ঞ, ফিনটেক ইঞ্জিনিয়ার এবং এআই ও মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞ। যারা প্রাথমিক স্তরে রয়েছেন বা সংস্থায় জুনিয়র অ্যানালিস্ট কিংবা ডেটা ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন; তাদের ঘাড়ে কোপ পড়ার শঙ্কার কথা শুনিয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সমীক্ষা।
যে সমস্ত ক্ষেত্রে হাতেকলমে কাজের দক্ষতার কোনও দরকার পড়ে না। অর্থাৎ নিয়মমাফিক একই ধাঁচে কাজ করে যেতে হয় সেই সমস্ত কাজের বাজারে মানবসম্পদ ছাঁটাই করে এআই তার দখল নিয়ে নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। যেমন ধরা যাক- বিষয় লেখক বা কনটেন্ট রাইটার। এই ধরনের কাজ বা কনটেন্ট যারা তৈরি করেন, সেই কাজ এক–চতুর্থাংশ এআই করে দিতে সক্ষম।
ওয়ার্ডস্মিথ বা অটোমেটেড ইনসাইটের মতো চ্যাট বট দিয়ে যেকোনও প্রবন্ধ বা প্রতিবেদন লিখতে যেসময় লাগে তার চেয়ে ঢের বেশি সময় ব্যয় করেন এক কর্মী। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই স্বীকার করে নিয়েছেন, তাদের চাকরির জায়গা দখল করে নিয়েছে এআই। বর্তমানে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম এবং স্টার্ট-আপ সংস্থা এআই নির্ভর হতে শুরু করেছে।
গ্রাফিক ডিজাইন ও ভিজ্যুয়াল আর্ট-সম্পর্কিত কাজও এআই’র কাছে চলে যেতে পারে। অ্যালগরিদমের মাধ্যমে যেসব কাজ করা হয়, সেই সমস্ত কাজের ক্ষেত্রগুলো ক্রমে এআই’র দখলে চলে যেতে শুরু করেছে।
আরও কয়েকটি পেশা রয়েছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে বিমাক্ষেত্রে দায়ভার নির্ধারণ করার কাজ, গুদাম রক্ষণাবেক্ষণের কাজ কিংবা কায়িক শ্রম নির্ভর উৎপাদনের কাজ, গ্রাহক পরিষেবার কাজ, ডেটা এন্ট্রির কাজ ইত্যাদি। এছাড়া হিসাবরক্ষক, প্যারালিগাল চাকরি, রেডিয়োলজিস্টের মতো কয়েকটি পেশায় চাকরি আর সৃষ্টি না-ও হতে পারে আগামী পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে।
তবে আগাম তথ্য এবং বিবেচনা ব্যবহার করে যারা শিক্ষা ও কাজের প্রকৃতি বদলে ফেলতে পারবেন, তাদের চাকরির অভাব হবে না। যারা পুরনো চাকরিতে দক্ষতার মাঝের সারিতে রয়েছেন, তারা যদি কৃত্রিম বুদ্ধির দাপটে চাকরি বদলাতে বাধ্য হন, তাদের ক্ষেত্রে নতুন পেশায় নিচের দিকে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফলে আয়ও কমতে পারে।
ফরেন্সিক বিজ্ঞানী, আর্থিক বিশেষজ্ঞ, ভূতাত্ত্বিক প্রযুক্তিবিদ থেকে শুরু করে শিল্পক্ষেত্রে হিসাবরক্ষকের চাকরি— সবই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনুষঙ্গে ক্রমশ বাড়বে। কিছু ক্ষেত্রে কৃত্রিম মেধার ব্যবহার হবে সীমিত। যেমন- কৃষিবিশারদ, মনোরোগবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, অপরাধের বিচার, শিক্ষকতা, মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণা, গল্প-উপন্যাস-কবিতা লেখার মতো ক্ষেত্রে। বাড়বে দক্ষ কর্মীদের চাহিদা।
ডেলিভারি পৌঁছে দেওয়ার কর্মী, সফ্টঅয়্যার ডেভেলপার, নির্মাণ কর্মী, খুচরো দোকানকার, কলের মিস্ত্রি, নার্সিং পেশার সঙ্গে যুক্ত কর্মী, সমাজকর্মীদের চাকরিগুলোর পরিসর আগামী পাঁচ বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা উঠে এসেছে সমীক্ষায়।
প্রযুক্তির চাহিদা যত বাড়ে তত আরও বেশি সংখ্যক মানুষ সেই চাহিদার জোগান দিতে জড়িয়ে পড়েন। কাজের বাজারের পরিসর বাড়তে থাকে। কিন্তু যে কাজে পৌনঃপুনিকতা আছে সেখানেই কৃত্রিম মেধার বাড়বাড়ন্ত। তবে মানুষের মতো সৃজনশীল এখনই হতে পারবে না এআই।