![]() |
২৬ জুলাই ই-ক্যাব নির্বাচনে বিজয়ে আশাবাদী মাহাবুব হাসান

হাসান শাহরিয়ার
প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২৫, ০৯:৪৫ এএম

ই–ক্যাব নির্বাচনে টিম টাইগারের প্রার্থী মো. মাহাবুব হাসান
আগামী ২৬ জুলাই ই–কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই–ক্যাব) নির্বাচনে টিম টাইগারের প্রার্থী মো. মাহাবুব হাসান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তরুণ এই উদ্যোক্তা একাধিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এবারের ই-ক্যাব নির্বাচনে ই–কমার্স খাতের তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য কাজ করতে চান তিনি। নির্বাচনে তার প্রতিশ্রুতি এবং অন্যান্য নানান বিষয়ে কথা বলেছেন ভোরের কাগজের সঙ্গে।
প্রশ্ন: চলুন শুরুতেই আপনার পরিচয় ও পেশাগত পথচলা সম্পর্কে কিছু বলুন।
উত্তর: আমি মোঃ মাহাবুব হাসান। একজন প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোক্তা এবং ই-কমার্স প্রেমী মানুষ। ২০০৯ সালে আমার সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স আইটি দিয়ে যাত্রা শুরু করি। এরপর ২০১২ সালে চালু করি টাক-শাল ডট কম, একটি সফল ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। ২০২৪ সালে গুলশান-২-এ চালু করি ‘ব্যাচেলর্স এক্সপ্রেস’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট, যেখানে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘উটের দুধের চা’ চালু করে দেশব্যাপী আলোচনায় আসি। আমার শিক্ষাজীবন শুরু হয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, যেখানে আমি কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক সম্পন্ন করি। প্রযুক্তি নিয়ে আমার আগ্রহই আমাকে উদ্যোক্তা হবার পথে অনুপ্রাণিত করেছে।
প্রশ্ন: আপনি ই-ক্যাব নির্বাচনে কেন প্রার্থী হয়েছেন?
উত্তর: আমার লক্ষ্য একটি আরও সুসংগঠিত, স্বচ্ছ, এবং প্রযুক্তিনির্ভর ই-কমার্স ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা। আমি বিশ্বাস করি, ই-ক্যাব কেবল একটি সংগঠন নয়, এটি হাজারো উদ্যোক্তার আশা-ভরসার জায়গা। আমি চাই তাদের জন্য একটি শক্ত ভিত তৈরি করতে। আমার অভিজ্ঞতা, সাংগঠনিক সম্পৃক্ততা, এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা দিয়ে আমি ই-ক্যাবের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই। আমি মনে করি, সময় এসেছে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধিত্বের। যারা মাঠ পর্যায়ের চ্যালেঞ্জ বোঝেন, প্রযুক্তির ব্যবহার জানেন, এবং পরিবর্তন আনতে পারেন।
প্রশ্ন: আপনার মূল ভিশন কী? নির্বাচিত হলে কী করবেন?
উত্তর: আমার মূল ভিশন – “স্বচ্ছতা, সক্ষমতা এবং সাপোর্ট”। ১. স্বচ্ছতা: ই-ক্যাবের সদস্যদের স্বার্থে কার্যক্রমে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। ২. সক্ষমতা: উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ, রিসোর্স সাপোর্ট ও টেক অ্যাডভাইজরি চালু করা। ৩. সাপোর্ট: স্টার্টআপ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য প্রমোশনাল সুযোগ, বিনিয়োগ সংযোগ এবং সরকারী সহায়তা সহজ করা।
প্রশ্ন: আপনি কোন কোন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন?
উত্তর: আমি বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও সামাজিক সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। যেমন বেসিস: বাংলাদেশ সফটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন, ই-ক্যাব: ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স, বিডি চ্যাম্প সিঙ্গাপুর, জেসিআই বাংলাদেশ (ঢাকা চ্যাপটার), বরিশাল ক্লাব – আজীবন সদস্য, দ্য ক্যাপিটাল রিক্রেশন ক্লাব, গুলশান – আজীবন সদস্য।
প্রশ্ন: আপনি নির্বাচিত হলে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য কী করবেন?
উত্তর: তরুণ উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের ভবিষ্যৎ। আমি চাই তারা যেন আরও বেশি প্রশিক্ষণ, মেন্টরশিপ ও প্রযুক্তিগত সাপোর্ট পান। আমি ‘ই-কমার্স স্টার্টআপ ইনকিউবেশন প্রোগ্রাম’ চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছি, যেখানে তরুণরা বিনা খরচে গাইডলাইন, ফান্ডিং অ্যাক্সেস ও নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ পাবেন।
প্রশ্ন: আপনি দীর্ঘদিন ধরে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। এই অভিজ্ঞতা ই-ক্যাবের জন্য কীভাবে কাজে লাগবে?
উত্তর: আমি প্রায় ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে সফটওয়্যার ও ই-কমার্স খাতে কাজ করছি। মাঠ পর্যায়ের বাস্তব অভিজ্ঞতা, প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা এবং টিম ম্যানেজমেন্টে আমার অভিজ্ঞতা ই-ক্যাব-এর প্রতিটি সদস্যের উপকারে আসবে। আমি জানি কীভাবে সমস্যাকে চিহ্নিত করে তা সমাধানে এগোতে হয়। বাস্তব ভিত্তিক, বাস্তব অভিজ্ঞতায় তৈরি নেতৃত্বই ই-ক্যাবকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন: ই-ক্যাব সদস্যদের বড় কিছু সমস্যা আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তর: মেম্বারদের অভিযোগ প্রধানত তিনটি জায়গায় হলো রেগুলেশন ও নীতিমালা জটিলতা, পেমেন্ট গেটওয়ের সমস্যা ও ব্যাংকিং জটিলতা, সরকারি সহযোগিতার সীমাবদ্ধতা। আমার পরিকল্পনা হলো ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে একটি ‘পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি সেলl’ গঠন করা, যারা সদস্যদের হয়ে এসব বিষয়ে সরকারের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় করবে।
প্রশ্ন: আপনি কীভাবে প্রযুক্তিকে ই-ক্যাবের কাজে আরও যুক্ত করবেন?
উত্তর: আমার পরিকল্পনায় রয়েছে একটি ‘ডিজিটাল ই-ক্যাব’ প্ল্যাটফর্ম চালু করা, যেখানে সদস্যরা নিজেরাই অনলাইন প্রোফাইল, বাণিজ্যিক রিপোর্ট, হেল্পডেস্ক ও প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করতে পারবেন। এর পাশাপাশি থাকবে মোবাইল অ্যাপ যেন কোনো জিজ্ঞাসা বা ফাইলিং করার জন্য অফিসে যেতে না হয়। ই-ক্যাব হবে ডিজিটাল, স্মার্ট ও সহজ।
প্রশ্ন: দেশের বাইরেও আপনি বিভিন্ন চেম্বারের সদস্য। এর প্রভাব কী?
উত্তর: আমি সিঙ্গাপুর-বাংলাদেশ চেম্বার ও বিডিচ্যাম সিঙ্গাপুরের সদস্য হওয়ায় আমার বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। এই সম্পর্কগুলো ব্যবহার করে আমি বিদেশি বিনিয়োগ, বিটুবি কানেকশন, এবং এক্সপোর্টমুখী ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারবো – যা ভবিষ্যতের ই-ক্যাব সদস্যদের জন্য বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করবে।
প্রশ্ন: আপনি কীভাবে সদস্যদের মাঝে একতা আনবেন?
উত্তর: আমি বিশ্বাস করি, ই-ক্যাব শুধুই নেতৃত্বের জায়গা নয়, বরং এটি একটি পরিবারের মতো। আমি পরিকল্পনা করেছি, প্রতি মাসে একবার করে "মেম্বার ডায়ালগ সেশন" আয়োজন করবো – যেখানে সদস্যরা সরাসরি তাদের মতামত, অভিযোগ, এবং প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারবেন। নেতৃত্বের মূল ভিত্তি হলো শ্রবণক্ষমতা – সেটিই আমি প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
প্রশ্ন: নারীদের জন্য ই-কমার্সে আপনি কী উদ্যোগ নিতে চান?
উত্তর: নারী উদ্যোক্তারা এখন ই-কমার্সের বড় চালিকাশক্তি। আমি ‘Women in E-commerce’ নামে একটি সাব-প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাই, যেখানে তাদের জন্য থাকবে আলাদা ট্রেনিং, প্রমোশন, ফান্ডিং অ্যাক্সেস এবং মেন্টরশিপ সুবিধা। আমি চাই একজন মফস্বলের গৃহিণীও যেন অনলাইনে নিজস্ব ব্র্যান্ড গড়ে তুলতে পারেন।
প্রশ্ন: আপনি ই-ক্যাবে কোন সংস্কৃতি চালু করতে চান?
উত্তর: আমি ‘জবাবদিহিতা এবং স্বীকৃতি’ – এই দুই সংস্কৃতি চালু করতে চাই। ১. জবাবদিহিতা: যেকোনো পদে নির্বাচিত হলে সেই দায়িত্বের জন্য স্পষ্ট অ্যাকশন প্ল্যান প্রকাশ ও তার অগ্রগতি নিয়মিত জানানো হবে। ২. স্বীকৃতি: সফল উদ্যোক্তাদের সম্মাননা প্রদান, মাসিক ‘Top Performer Member’ ঘোষণা এবং নবীনদের জন্য ‘Emerging Entrepreneur Award’ চালু করবো।
প্রশ্ন: আপনার ভোটারদের উদ্দেশ্যে শেষ কিছু বলবেন?
উত্তর: অবশ্যই। প্রিয় ই-ক্যাব সদস্যবৃন্দ, আপনাদের ভালোবাসা, সমর্থন ও পরামর্শের শক্তিতে আমি বিশ্বাস করি। এই নির্বাচনে আমি আপনাদের একজন নবীন প্রতিনিধি হিসেবে দাঁড়িয়েছি – দায়িত্বশীলতা, নেতৃত্ব ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে।
আমি চাই, আপনারা আমাকে একটি সুযোগ দিন যাতে আমি আপনাদের জন্য কাজ করতে পারি। আসুন আমরা একসাথে একটি উন্নত, টেক-সক্ষম ও উদ্যোক্তাবান্ধব ই-ক্যাব গড়ে তুলি। তাই আগামী ২৬ জুলাই ই-ক্যাব নির্বাচনে আমি বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।