×

তথ্যপ্রযুক্তি

পারিশ্রমিক ছাড়াই

প্রযুক্তি কমিউনিটিকে যেভাবে এগিয়ে নিচ্ছে গুগল ভলান্টিয়াররা

Icon

মাহাবুব হাসান

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০৬:০৬ পিএম

প্রযুক্তি কমিউনিটিকে যেভাবে এগিয়ে নিচ্ছে গুগল ভলান্টিয়াররা

গুগল অফিস। ফাইল ছবি

বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য গুগল বেশ কিছু কমিউনিটি প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করে, যার অনেকগুলোই বাংলাদেশেও সক্রিয়। গুগল ডেভেলপার গ্রুপ (জিডিজি), লোকাল গাইডস বা প্রোডাক্ট এক্সপার্টদের মতো এই প্ল্যাটফর্মগুলো পরিচালিত হয় একদল নিবেদিতপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে। কোনো আর্থিক পারিশ্রমিক ছাড়াই, শুধুমাত্র প্রযুক্তি ও কমিউনিটির প্রতি ভালোবাসা থেকে তারা এই গুরুদায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু কী তাদের অনুপ্রেরণা? চলুন জেনে নেওয়া যাক এই টেক ভলান্টিয়ার প্ল্যাটফর্মগুলোর পেছনের গল্প।

বাংলাদেশে যেভাবে পরিচালিত হয় গুগলের কমিউনিটি

গুগল ইনকর্পোরেশনের গুগল ডেভেলপার গ্রুপ, গুগল বিজনেস গ্রুপ, লোকাল গাইডস, প্রোডাক্ট এক্সপার্টস, ডেভেলপার স্টুডেন্ট ক্লাব এবং এডুকেটর গ্রুপের মতো অনেকগুলো স্বেচ্ছাসেবক প্ল্যাটফর্ম বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। তবে বাংলাদেশে এর মধ্যে গুগল ডেভেলপার গ্রুপ, লোকাল গাইডস, গুগল বিজনেস গ্রুপ এবং প্রোডাক্ট এক্সপার্টস প্ল্যাটফর্মগুলো বিশেষভাবে সক্রিয় রয়েছে।

এই কার্যক্রমগুলো গুগলের অফিসিয়াল ফোরামের মাধ্যমে পরিচালিত হলেও, বাংলাদেশে নিযুক্ত কমিউনিটি ম্যানেজাররা স্থানীয় ব্যবহারকারীদের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ এবং পেজও পরিচালনা করেন। এর মাধ্যমে গুগলের নতুন আপডেট, বিভিন্ন প্রোগ্রাম এবং তথ্য খুব সহজে হাজারো মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়।

এই প্ল্যাটফর্মগুলোর নেতৃত্বে থাকেন গুগল কর্তৃক মনোনীত কমিউনিটি ম্যানেজার, মডারেটর বা অ্যাম্বাসেডররা। তারা একদিকে যেমন গুগলের হালনাগাদ তথ্য স্থানীয় কমিউনিটিতে ছড়িয়ে দেন, তেমনি স্থানীয় সমস্যা, আইডিয়া এবং দেশের সার্বিক কার্যক্রমের রিপোর্ট গুগলের কাছে পৌঁছে দেন। সেটা হতে পারে গুগল ম্যাপের কোনো সমস্যা, নতুন কোনো ফিচার নিয়ে আলোচনা কিংবা স্থানীয় ডেভেলপারদের জন্য আয়োজিত টেকনিক্যাল সেশন।

পারিশ্রমিক নয়, সম্মাননাই মূল চালিকাশক্তি

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, এই কমিউনিটি ম্যানেজার বা মডারেটররা গুগল থেকে কী পরিমাণ পারিশ্রমিক পান? উত্তরে সহজ উত্তর হলো—এই পদগুলো সম্পূর্ণ অবৈতনিক। বিশ্বের অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক কার্যক্রমের মতোই এটি একটি সম্মানজনক পদ। যারা স্বেচ্ছাশ্রমে বিশ্বাসী এবং দেশের প্রযুক্তি কমিউনিটিকে উন্নত করতে চান, তাদের মধ্য থেকেই গুগল এই দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নির্বাচিত করে।

তাদের এই ত্যাগকে অনেকটা "নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর" সাথে তুলনা করা গেলেও এর পেছনের দর্শন আরও গভীর। এটি অনেকটা সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সংগঠনের মতোই, যেখানে সদস্যরা ভালোবাসা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করেন কেউ যেমন কবিতা পাঠের আসর গড়ে তোলেন, কেউ বা গানের দল।

তাহলে লাভ কী? সুযোগের বিশাল দিগন্ত

আর্থিক লাভ না থাকলেও এই স্বেচ্ছাসেবকরা এমন কিছু সুবিধা পান, যা তাদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে অমূল্য সম্পদ হিসেবে কাজ করে।

জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি: তারা গুগলের নতুন প্রোডাক্ট বা ফিচার সবার আগে পরীক্ষা করার (বেটা টেস্টিং) সুযোগ পান। বিভিন্ন এক্সক্লুসিভ ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ এবং রিসোর্সে তাদের অগ্রাধিকার থাকে, যা তাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে।

গ্লোবাল নেটওয়ার্কিং: সারা বিশ্বের গুগল এক্সপার্ট, ডেভেলপার এবং গুগল টিমের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হয়। এটি তাদের প্রফেশনাল নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি এনে দেয়।

স্বীকৃতি ও সম্মান: "Google Recognized" তকমাটি তাদের ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ায়। এই অভিজ্ঞতা তাদের সিভি বা প্রোফাইলকে শক্তিশালী করে, যা কর্মজীবনে এগিয়ে যেতে সহায়ক হয়।

ইভেন্ট ও পুরস্কার: কাজের পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে গুগল তাদের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সামিট, যেমন— Product Expert Summit, Connect Live বা GDG Summit-এ আমন্ত্রণ জানায়। অনেক ক্ষেত্রে এসব আয়োজনে অংশগ্রহণের খরচও গুগল বহন করে। এছাড়া স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের জন্য থাকে গুগলের ব্র্যান্ডেড উপহার, সার্টিফিকেট ও অন্যান্য পুরস্কার।

কেন তারা এই কাজ করেন?

এই স্বেচ্ছাসেবকদের মূল চালিকাশক্তি মূলত কয়েকটি বিষয়:

প্রযুক্তিপ্রেম: টেকনোলজির প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং নতুন জ্ঞান অর্জনের আকাঙ্ক্ষা।

কমিউনিটিকে ফিরিয়ে দেওয়া: যে কমিউনিটি থেকে তারা শিখেছেন, সেখানেই নিজেদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে দিয়ে কমিউনিটিকে আরও শক্তিশালী করতে চান।

ব্যক্তিগত উন্নয়ন: নেতৃত্ব প্রদান, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং যোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা অর্জনের এটি একটি অসাধারণ প্ল্যাটফর্ম।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা: এই অভিজ্ঞতা ও নেটওয়ার্কিং ভবিষ্যতে তাদের জন্য উন্নত ক্যারিয়ারের দরজা খুলে দেয়।

এই প্রযুক্তিপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবকরাই দেশের ডিজিটাল ইকোসিস্টেমকে সচল রাখার অন্যতম কারিগর। তাদের নিঃস্বার্থ শ্রমের ফলেই বাংলাদেশের প্রযুক্তি কমিউনিটি আজ বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

মাহাবুব হাসান, বাংলাদেশের প্রথম গুগল প্রোডাক্ট এক্সপার্ট অ্যাম্বাসেডর 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা ভারতে গ্রেফতার

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা ভারতে গ্রেফতার

বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের সূচি ঘোষণা আফগানিস্তানের

বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের সূচি ঘোষণা আফগানিস্তানের

ফজলুর রহমানকে শোকজ, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেয়ার নির্দেশ

ফজলুর রহমানকে শোকজ, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেয়ার নির্দেশ

শেখ হাসিনার মামলায় ট্রাইব্যুনালে ১৯ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ

শেখ হাসিনার মামলায় ট্রাইব্যুনালে ১৯ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App