ঘূর্ণিঝড় নিয়ে মানুষের উদ্বেগ আর কৌতুহল সেই প্রাচীনকাল থেকে। কারণ, এটি আবহাওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও, উপকূলে পৌঁছালে বড় দুর্যোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। 

সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রাই হলো ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির মূল নিয়ামক। ১০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলেই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। এই তাপমাত্রায় সমুদ্রের পানি বাষ্প হতে থাকে। 

এসব বাষ্প ক্রমাগত উপরে উঠতে শুরু করে। সেই সঙ্গে তৈরি করতে থাকতে স্যাঁতস্যাঁতে বাতাস। এই দুইয়ের যোগে তৈরি হয় মেঘ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যখন বাষ্প উপরে উঠতে শুরু করে তখন বায়ুর চাপ ব্যাপকভাবে কমে যায়। আর এটিকেই নিম্নচাপ বলা হয়। শুরু হয় ঘূর্ণিঝড়ের প্রক্রিয়া।

সমুদ্রপৃষ্ঠ ছাড়াও পানির ৫০ মিটার নিচ পর্যন্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বাষ্প তৈরির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠের নিম্নচাপ এলাকা বায়ূশূণ্য হয়ে পড়লে, আশপাশ থেকে বায়ু সেই শূণ্যতা পূরণের জন্য ছুটে যায়। 

তখনই তৈরি হয় একটি ঘূর্ণাবর্ত। সব ঘূর্ণাবর্তের একটি কেন্দ্র তৈরি হয়, যেটিকে ঘূর্ণিঝড়ের চোখ বলে। এই ঘূর্ণি উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরতে থাকে। চারদিকের বাতাস, মেঘ, আর্দ্রতা জড়ো হতে শুরু করে আর তৈরি হতে থাকে ভয়ঙ্কর এক ঝড়- ঘূর্ণিঝড়। পানির তাপমাত্রা যত বেশি হয় এবং এই নিম্নচাপ এলাকায় চাপ যত কম থাকে, আরো শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা ততই বাড়তে থাকে।

ট্রপিক্যাল অঞ্চলের সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাস সাধারণত একশ’ থেকে এক হাজার কিলোমিটার হয়ে থাকে। যা ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট আকারের হয়ে থাকে। আর নন-ট্রপিক্যাল অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাস হয়ে থাকে এক হাজার থেকে চার হাজার কিলোমিটার হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয় বঙ্গোপসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি। কোনটি শেষ পর্যন্ত উপকূলে আসবে সেটি নির্ভর করে ঘূর্ণির চরিত্রের উপর। উৎপত্তিগতভাবে সব ঘূর্ণিঝড় একই রকমের হলেও পৃথিবীর একেক অঞ্চলের মানুষ এদেরকে  একেক নামে ডাকে। আমাদের ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এদের নাম সাইক্লোন।