যেসব কারণে ড. ইউনূসের প্রশাসনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

অনামিকা রায়
প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ০৮:৫০ পিএম
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতের অমিল, সংস্কার প্রক্রিয়ার স্থবিরতা, এবং সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন সম্প্রতি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছিল।
ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন যখন আলোচনার তুঙ্গে, তখন রুদ্ধদার বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদ। এরপরই বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক- এ সবকিছু মিলিয়েই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও উত্তাল ঢেউ। স্বাভাবিক ভাবেই জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—ইউনূস প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কি ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে?
কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ড. ইউনূসের প্রশাসনের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ঢাকায় ক্ষমতার দ্বন্দ্ব যখন তীব্রতর হচ্ছে, ঠিক এমন একটি সময়ে সরকারপ্রধান ড. ইউনূস দেশের তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন।
যদিও সরকারের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, দৃশ্যত এটি ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি নিয়মিত বৈঠক।
তবে, দেশের গণমাধ্যম বলছে, রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের এ উত্তেজনা অন্তর্বর্তী প্রশাসন এবং সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে একধরনের ‘স্নায়ু যুদ্ধ’। আর এই টানাপোড়েনই এখন ইউনূস প্রশাসনের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন ড. ইউনূস। শুরুতে এই সরকারকে স্বাগত জানালেও, এখন ক্রমেই অসন্তোষ বাড়ছে সামরিক বাহিনীর ভেতরে।
সম্প্রতি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই একটি জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া উচিত। তিনি আরো জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনীকে বেসামরিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে—যা পেশাদারিত্বের পরিপন্থী এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
অন্যদিকে, সরকারের দাবি—নির্বাচন আয়োজনের আগে রাজনৈতিক সংস্কার, সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থার দৃঢ়তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই জন্য প্রয়োজন আরও সময়- যা হতে পারে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি।
এর বাইরেও সেনাপ্রধান ওয়াকার অন্তর্বর্তী সরকারের বিবেচনাধীন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগেরও জোরালো বিরোধিতা করছেন। তার মধ্যে রাখাইন রাজ্যের জন্য মানবিক করিডর এবং চট্টগ্রাম বন্দর হস্তান্তর অন্যতম।
সেনাপ্রধান জোড়ালোভাবে জানিয়েছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত শুধু জনগণের ভোটে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারই নিতে পারে। দেশের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে কাউকে আপস করতে দেবে না সেনাবাহিনী। এরইমধ্যে সেনাপ্রধান ওয়াকারকে পদচ্যুত করার চেষ্টা করেছিল সরকার- এমন খবরও ছড়িয়ে পড়ে, যা বেসামরিক-সামরিক সম্পর্ক নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যে লক্ষ্য নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই লক্ষ্য ঘোলাটে হয়ে উঠছে। এছাড়াও সরকার ও সেনাবাহিনীর এই অবস্থান পার্থক্যকে কেন্দ্র করেই রাজনৈতিক অঙ্গনে উদ্বেগের ছায়া। তাদের আশঙ্কা, সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে এই অস্বস্তি যদি অব্যাহত রাখে, তাহলে আগামী মাসগুলোতে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।