‘পি আর’ পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কার লাভ কার ক্ষতি?

কামরুজ্জামান আরিফ
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ০৭:৪৬ পিএম
নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনৈতিক অঙ্গণ। ভোটের রাজনীতিতে কে কত এগিয়ে থাকবে সেই প্রতিযোগীতায় এখন রাজনৈতিক দলগুলো। সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে জোট গঠন, ভোটারের মন জয়, আর রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে মাঠে নামতে শুরু করেছে দলগুলো। এরই মধ্যে সম্প্রতি হঠাৎ করে রাজনীতির মাঠে আলোচনার শীর্ষে উঠে এসেছে পি আর পদ্ধতির নির্বাচন।
গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর তার অধীনে ‘নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কারের’ লক্ষ্যে গঠিত বিভিন্ন কমিশন নানা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছে। বিশেষ করে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন বা পিআর পদ্ধতির দিকে নজর অনেক রাজনৈতিক দলের। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিশোদ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাব তুলে ধরেন। এরপর সেই পালে নতুন করে হাওয়া তোলেন তরুণদের গঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি।
তবে, প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে আসছে। প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষেই রয়েছে তারা। অন্যদিকে, নির্বাচনি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে এবং ভোটারদের মতামতকে যথাযথভাবে প্রতিফলিত করবে। তবে বিএনপির আপত্তির কারণে এ নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদি সব রাজনৈতিক দল একমত হয়, তবে ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে আনুপাতিক ভোটিংয়ের দিকেই এগোতে পারে। কিন্তু এই পি আর পদ্ধতিটা আসলে কী?
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর হচ্ছে নির্বাচনি ব্যবস্থার এমন একটি পদ্ধতি যেখানে আসন বণ্টন হয় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি কোন দল মোট প্রদত্ত ভোটের শতকরা ১০ শতাংশ পায়, তাহলে সেই দল আনুপাতিক হারে সংসদের ১০ শতাংশ বা ৩০টি আসন পাবেন। পিআর বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে মুক্ত, গোপন ও মিশ্র তিনটি আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘কোনো দল নির্বাচনে যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তারা সেই অনুপাতে আসন পাবে, নির্বাচনের এই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি যদি চালু হয় তাহলে তা সুশাসন নিশ্চিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।’এ পদ্ধতিতে একটি নির্বাচনে দেওয়া প্রত্যেকটি ভোট কাজে লাগে এবং প্রতিটি ভোট সংসদে সমানভাবে প্রতিনিধিত্ব করে। তাছাড়া একটি নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ও হারের ভিত্তিতে সংসদে আসন বণ্টন হয়।
তবে, এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সুবিধা হলেও কিছুটা অসুবিধায় পড়বেন বড় রাজনৈতিক দল। কারণ আনুপাতিক হারে বড় দলগুলোকে ছোট দলগুলোর জন্য কিছু আসন ছেড়ে দিতেই হবে। যা, বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতা কিছুটা হলেও খর্ব হবে। তবে, এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য হবে, সে কথা নিশ্চিত বলা যায়। কিন্তু এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশের জটিল রাজনৈতিক পেক্ষাপটে তা কতটুকু সম্ভব হবে।