হাদিকে হত্যাচেষ্টার সন্দেহভাজনের ব্যাংক হিসাব জব্দ
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৩০ পিএম
হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ। ছবি : সংগৃহীত
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান এবং তার মালিকানাধীন আইটি প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাপল সফট আইটি লিমিটেড’-এর সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, ফয়সাল করিম মাসুদের প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সদস্য।
ফয়সাল করিম মাসুদের মালিকানাধীন ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাপল সফট আইটি লিমিটেড’ ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া তিনি ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেডেরও মালিক। ওই প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সালে বেসিসের সহযোগিতা এবং সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন্দ্র করে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল।
আরো পড়ুন : হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক গ্রেপ্তার
ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য ছিলেন।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদি। মোটরসাইকেলে থাকা এক আততায়ী তাকে গুলি করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। বর্তমানে ওসমান হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারসহ বিভিন্ন স্থানে ফয়সাল করিমের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক সময়ের একাধিক ছবি পাওয়া গেছে। এসব ছবিতে থাকা ফয়সাল করিমের চেহারার সঙ্গে গুলি ছোড়া ব্যক্তির চেহারার সাদৃশ্য থাকায় হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ ঘটনায় ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ফয়সাল করিম মাসুদ ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন। ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় তার নাম সামনে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগ আমলে দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে তার ছবি ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা-৮ আসনে ওসমান হাদির গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের বিভিন্ন আড্ডায় ফয়সালের উপস্থিতির ছবিও ভাইরাল হয়। এতে অনেকেই ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম দীর্ঘদিন ধরেই ওসমান হাদিকে অনুসরণ করছিলেন।
এছাড়া ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ গঠিত ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’-তে ঢাকা-১২ আসনের সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম। ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
এর আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় আদাবর থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম। পরে ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সে সময় তার কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, তিনটি মোবাইল ফোন ও পাঁচ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
ওই মামলায় চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। পরে গত ১২ আগস্ট জামিনের মেয়াদ বাড়াতে আবেদন করলে হাইকোর্ট তাকে নতুন করে এক বছরের জামিন দেন। জামিনে থাকা অবস্থাতেই এবার তার বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ সামনে এসেছে।
