কোটি টাকার সম্পদের মালিক নির্বাচন কর্মকর্তার গাড়িচালক!

সৈয়দ মনির আহমদ, ফেনী থেকে
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২৫ পিএম

ছবি : প্রতীকী
ফেনী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার গাড়িচালক মেহেদী হাসান মামুন। গাড়িচালক পদে চাকরি করেই মাত্র কয়েক বছরে কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ফেনী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত আছেন আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শেরপুরের মেহেদী হাসান মামুন। এক জায়গায় দীর্ঘদিন কর্মরত থাকায় বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি, কম্পিউটার দোকানদার ও দালাল শ্রেণির লোকদের সঙ্গে তিনি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। তাদের মাধ্যমে এনআইডি সংশোধনের কাজ করার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন। তার মাধ্যম ছাড়া কোনো সংশোধন কাজ অনুমোদন করতেন না জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রেজাউল করিম। সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে চুক্তিতে টাকার হিসাব না মিললে আবেদন বাতিল করে দিতেন জেলা কর্মকর্তার মাধ্যমে। তার ভয়ে ভীত থাকতে হয় প্রত্যেক উপজেলা ও জেলা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। সবার সঙ্গে ধমকের সুরে কথা বলেন তিনি। বদলির হুমকিও দিতেন কর্মচারীদের।
বিগত উপজেলা নির্বাচনে সদর উপজেলা নির্বাচনকালীন রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন। ওই সময় মেহেদী তার সঙ্গে সবসময় অশোভন আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে তখন বিভিন্ন মিডিয়া কর্মী, অফিস স্টাফ ও সংশিষ্টরা বিস্মিত হয়েছিলেন। তৎকালীন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার প্রশ্রয়ে মেহেদী এমন আচরণ করতেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন কর্মকর্তা।
এদিকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রেজাউল করিমের ওপর ভর করে কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন মেহেদী। মাত্র ১৭ হাজার টাকার বেতনে চাকরি করে তিনি ৫টি বাস ও ২টি (মিনি ট্রাক) পিকআপের মালিক। ব্যবহার করেন আইফোন ১৫ প্রো-ম্যাক্স। তার মেয়ে ‘মেঘ’র নামে লোগো সম্বলিত গর্জনী এক্সপ্রেস নামের কয়েকটি বাস ঝিনাইগাতী-শেরপুর-ঢাকা রুটে চলাচল করে। তার স্ত্রী সামান্তা জাহান চম্পা গত ১২ আগস্ট ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘অবশেষে জামাই এর স্বপ্ন পূরণ হলো।’
ভুক্তভোগীদের মন্তব্য, শেরপুর জেলার বাসিন্দা মেহেদী দীর্ঘদিন ফেনীতে চাকরির সুবাদে নির্বাচন অফিসে আসা সেবাগ্রহীতাদের জিম্মি করে কোটিপতি বনে গেলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কেউ নেই। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মেহেদি বলেন, আমি ক্ষুদ্র কর্মচারী, আমার এত ক্ষমতা হবে কীভাবে, এনআইডি সংশোধন করার ক্ষমতা আমার আছে নাকি?
এদিকে মেহেদীর দুর্নীতি ও অপকর্মের তথ্য অনুসন্ধানের বিষয়টি জানাজানি হলে আতঙ্কিত হয়ে যান মেহেদী। তার কয়েকজন সুভাকাক্সক্ষীকে দিয়ে প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অফিসের বিভিন্ন কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
সদ্য যোগদান করা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন বলেন, এখন আর কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই। বিধি অনুযায়ী যার যে কাজ, তাকে সেই কাজই করতে হবে। মেহেদীর বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।