বাগেরহাট-২
নতুন সমীকরণ ভিন্ন ধারায় ভোটযুদ্ধে নেমেছেন বিএনপির আহ্বায়ক

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৩২ পিএম

বিএনপির বাগেরহাট জেলা আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার এ.টি.এম. আকরাম হোসেন তালিম
যেখানে নির্বাচনী প্রচারণা মানেই মিছিল-মাইক আর দেয়াল ভরা পোস্টার, সেখানে একেবারে ভিন্ন পথে হাঁটছেন বিএনপির বাগেরহাট জেলা আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার এ.টি.এম. আকরাম হোসেন তালিম। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান তিনি। কিন্তু প্রচারণায় প্রচলিত সেই পরিচিত রূপ নেই একটি পোস্টারও লাগাননি তিনি। তার যুক্তি, আইন ভাঙা নয়, মানুষের আস্থা অর্জনই হতে হবে রাজনীতির প্রথম ধাপ।
বাগেরহাট-২ আসন দীর্ঘদিন ধরে মূলত ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবাধীন এলাকা হিসেবে পরিচিত। নির্বাচনের মৌসুম এলে পোস্টার-ব্যানারে ঢেকে যেত সদর ও কচুয়ার রাস্তা-ঘাট। শোভাযাত্রা, স্লোগান আর মঞ্চকেন্দ্রিক প্রতিশ্রুতিতে সরব থাকত মাঠ। কিন্তু এসব আড়ম্বরের পরও অবকাঠামোর ভাঙন, স্বাস্থ্যখাতের দুরবস্থা আর কৃষকের সমস্যার সমাধান হয়নি।
এই জায়গা থেকেই ভিন্ন বার্তা নিয়ে মাঠে নামছেন তালিম। তার ভাষায়, মানুষ এখন চোখে দেখছে, বছর বছর প্রতিশ্রুতি আসে, কিন্তু বাস্তবে কিছুই পাল্টায় না। তাই এবার আমাদের নতুন করে শুরু করতে হবে মানুষকেন্দ্রিক রাজনীতি দিয়ে।”
তালিমের রাজনৈতিক পরিচয় নতুন নয়। শত বছরের ঐতিহ্য বহন করা একটি পরিবারের সন্তান তিনি। তাঁর পিতা প্রয়াত ডা. মোজাম্মেল হোসেন ছিলেন জমিদার, এমএলএ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ এবং বাগেরহাট পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। বড় ভাই প্রয়াত এ.এস.এম. আতাহার হোসেন টানা ২০ বছর বাগেরহাট পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন।
এই দীর্ঘ রাজনৈতিক ঐতিহ্যের মধ্যেও পরিবার কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার বা লুটপাটের রাজনীতিতে জড়ায়নি। তার সন্তানরাও প্রতিষ্ঠিত দুজন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসক, একজন ঢাকায় চিকিৎসক, একজন এ সি সি এ অ্যাফিলিয়েট এবং কনিষ্ঠ কন্যা ব্যারিস্টার। ফলে রাজনীতি দিয়ে সম্পদ গড়ার কোনো প্রলোভন তাঁর নেই।
তালিম বলেন, প্রায় ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের পর বাগেরহাট-২ আজ ভাঙা অবকাঠামো, বেকারত্ব, দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা আর অবহেলিত কৃষকের সমস্যায় জর্জরিত। আমাদের প্রথম কাজ হবে আস্থা পুনর্গঠন। রাস্তা মেরামত, শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যখাতে সঠিক বাজেট ব্যবহার এসবই সবচেয়ে সাধারণ দাবি, কিন্তু এগুলো পূরণ করতে পারলেই বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা পাল্টে যাবে। আমি চাই বাগেরহাট-২ আসনকে উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা আর অন্তর্ভুক্তির মডেলে রূপ দিতে।
বাগেরহাট সদরের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, আমরা বহু নেতা দেখেছি কেউ ক্ষমতায় গিয়ে আর ফিরে তাকায়নি। কিন্তু তালিম সাহেবের পরিবার আলাদা। উনি যদি আসেন, অন্তত মানুষের টাকা মেরে খাওয়ার ভয় থাকবে না।
কচুয়ার শিক্ষক শাহনাজ পারভীন বলেন, আমাদের এলাকার স্কুলগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। তালিম ভাই যদি সত্যিই শিক্ষা খাতে জোর দেন, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাঁচবে।
বাগেরহাট সদরের কৃষক নূরুল ইসলাম বললেন, “ধান বিক্রি করি, দাম পাই না। সার-বীজের দাম আকাশছোঁয়া। কোনো এমপি এসে কৃষকের কথা শোনে না। তালিম সাহেব যদি কৃষকের পাশে দাঁড়ান, আমরা উনাকে ভোট দেব।
এক তরুণ ভোটার রাকিব হাসান বলেন, আমাদের প্রজন্ম এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে, দেশের অন্য জায়গায় কেমন উন্নয়ন হয়। এখানে কেন হয় না? পোস্টার-মিছিল না করে যদি সত্যিই কাজ করেন, তবে তালিম ভাই তরুণদের আশা পূরণ করবেন।
প্রবীণ ভোটার রহিমা খাতুনের মন্তব্য, আমরা অনেক প্রতিশ্রুতি শুনেছি। রাস্তা, হাসপাতাল, ব্রিজ সব বলেছে। কাজ হয়নি। এখন আমরা এমন কাউকে চাই, যে নিজের জন্য কিছু চায় না, শুধু মানুষের জন্য কাজ করবে। বাগেরহাটের রাজনৈতিক মাঠে তাই এবার অন্যরকম গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একদিকে প্রচলিত ব্যানার-পোস্টার নির্ভর প্রতিযোগিতা, অন্যদিকে তালিমের পোস্টারহীন নীরব কিন্তু চিন্তাশীল প্রচারণা।