আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গভর্নর ও দুদকে অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ০৫:২২ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থপাচার, শেয়ার কারসাজি ও যৌন হয়রানিসহ একাধিক অভিযোগ এনেছেন এক গ্রাহক। বুধবার (২৫ জুন) দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এসব অভিযোগ এনে আবেদন জমা দেন গ্রাহক শিমুল সর্দার। একই অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং আর্থিক খাত বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার কাছেও চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।
দুদকে দেয়া ১০ পাতার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আলমগীর কবির দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নামে-বেনামে ঋণ দিয়েছেন, চলতি ঋণের সুদ মওকুফ করেছেন এবং অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে একক সিদ্ধান্তে ঋণ অনুমোদন করেছেন। তার এসব কর্মকাণ্ডে সাউথইস্ট ব্যাংকের হাজার কোটি টাকার আমানত ঝুঁকিতে পড়েছে।
আলমগীর কবির ব্যাংকটির অর্থ সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনায় একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেছিলেন। ব্যাংকের প্রতিটি বড় সিদ্ধান্ত—যেমন নতুন শাখা খোলা, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, বুথ বসানো, সফটওয়্যার কেনা ইত্যাদিতে তার একক নিয়ন্ত্রণ ছিল। এসব কার্যক্রমে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই ছিল তার আত্মীয়স্বজন বা ঘনিষ্ঠজনদের মালিকানাধীন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আলমগীর কবির একাধিক নারী কর্মকর্তাকে নিজের অফিসে ডেকে যৌন হয়রানি করেছেন। যার প্রমাণ ভুক্তভোগীদের কাছে রয়েছে। তারা আইনগত পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া নিজের পছন্দের কিছু নারীকে ব্যাংকের অধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘গ্রিন স্কুল’ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড’-এ চাকরি দিয়েছেন তিনি।
বিএসইসি সূত্র জানায়, শেয়ার কারসাজির অভিযোগে আলমগীর কবিরকে ইতোমধ্যে ১২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তার নেতৃত্বে সাউথইস্ট ব্যাংকের ২৩২ কোটি টাকা বে লিজিংয়ে বিনিয়োগ করা হয়, যা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৪-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড বর্তমানে আর্থিকভাবে এতটাই দুর্বল যে, প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকের পাওনা ফেরত দিতে পারছে না।
এতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বে লিজিংয়ের পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়ায় ১৭২ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান সুরাইয়া বেগম আলমগীর কবিরের স্ত্রী। তার মাধ্যমে ব্যাংকটির সঙ্গে বে লিজিংয়ের লেনদেন ‘ব্যাংকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে লেনদেন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাতে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ২৭ (১-খ) ধারা লঙ্ঘন হয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, ব্যাংকের ফাউন্ডেশন ও শিক্ষা বিভাগের তহবিল থেকে অর্থ তুলে বে লিজিংয়ে সরবরাহ করেছেন আলমগীর কবির। ব্যাংকের মেয়াদি আমানত ও কলমানির অর্থ আটকে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। বারবার চিঠি পাঠিয়েও অর্থ ফেরত পায়নি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। শুধু মূলধন নয়, প্রতিষ্ঠানটি সুদও পরিশোধ করছে না।