থার্স্ট ট্র্যাপেও সক্রিয়
বিমানবালা শিমুর বিরুদ্ধে ‘হানি ট্র্যাপ’ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৩:৪৫ পিএম

বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু খাদিজা সুলতানা শিমু। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু খাদিজা সুলতানা শিমুর (বিমান পিনও নং: ৫৩৪২৯) বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন, ‘হানি ট্র্যাপ’ ও ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে প্রায় ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগী একজন এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হওয়ার পর ১১ মাসের সম্পর্কে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। বাদীপক্ষের উপস্থাপিত অর্থ লেনদেনের বিস্তারিত প্রমাণপত্র দেখে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিস্ময় প্রকাশ করেন। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে উত্তরা পশ্চিম থানাকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন (মামলা নম্বর: সিআর-১২১২/২৫)।
ঘটনার সূত্রপাত ও সম্পর্ক স্থাপন:
মামলার আর্জি থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বাদী, যিনি পেশায় একজন এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার, তার সঙ্গে বিমানবালা খাদিজা সুলতানা শিমুর পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং তারা উত্তরার একটি রেস্টুরেন্টে প্রথমবার দেখা করেন।
বাদীর উন্নত পেশা ও সামাজিক অবস্থানকে পুঁজি করে শিমু অল্প সময়ের মধ্যেই তার বিশ্বাস অর্জন করেন। তিনি বাদীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং নিজেকে তাদের ভবিষ্যৎ পুত্রবধূ হিসেবে উপস্থাপন করতে শুরু করেন। উভয় পরিবারের মধ্যে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি ছিল।
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ:
মামলার আর্জিতে বলা হয়েছে, সম্পর্ক গভীর হওয়ার পর শিমু বাদীকে বিয়ের আশ্বাস দেন। এই প্রতিশ্রুতির ওপর ভিত্তি করে তিনি বিভিন্ন সময়ে ও অজুহাতে বাদীর কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে থাকেন। নগদ টাকা, ব্যাংক ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং, ঘর সাজানোর ফানির্চার, ফ্লাগশিপ মোবাইল, কসমেটিকস, শপিংয়ের বিল পরিশোধের মাধ্যমে ধাপে ধাপে এই অর্থ গ্রহণ করা হয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর নিজের জন্মদিনে শিমু বাদীর কাছ থেকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি হীরার আংটি উপহার হিসেবে নেন। সেদিন তিনি দ্রুতই বাদীকে বিয়ে করবেন বলে পুনরায় আশ্বাস দেন।
পরবর্তীতে শিমু প্রস্তাব দেন, তাদের বিয়ের সম্পূর্ণ খরচ বাদীকে বহন করতে হবে এবং সেই অর্থ অনুষ্ঠানের আগেই পরিশোধ করতে হবে। তার কথায় বিশ্বাস করে বাদী বিয়ের খরচ বাবদ মোট ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৫১১ টাকা প্রদান করেন। এর বাইরে আরও ৪ লাখ টাকা ক্যাশ নেন তিনি। হীরার আংটিসহ সর্বমোট আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ২১ লাখ ৭৪ হাজার ৫১১ টাকা।
প্রতারণা, ব্ল্যাকমেইল ও হুমকি:
টাকা হাতে পাওয়ার পর শিমুর আচরণে পরিবর্তন আসতে শুরু করে বলে বাদী অভিযোগ করেন। বাদীর পরিবার থেকে দুইবার বিয়ের দিন তারিখ চূড়ান্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও শিমু বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি বিয়ে করতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানান। এজাহারে আরও বলা হয়, শিমু ও তার মা নতুন করে দাবি করেন যে, অতিরিক্ত ১০ ভরি স্বর্ণালংকার ও আরও অর্থ না দিলে এই বিয়ে সম্ভব নয়।
বাদী আরও অভিযোগ করেন, সম্পর্কের বিভিন্ন পর্যায়ে শিমু হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারে বাদীর কাছে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও চাইতেন। পরবর্তীতে সেই ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে তাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করা হয়।
‘হানি ট্র্যাপ’ ও ‘থার্স্ট ট্র্যাপ’ এর ব্যবহার:
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বিমানবালা শিমু অর্থ আদায়ের জন্য আধুনিক ‘হানি ট্র্যাপ’ (প্রেমের ফাঁদ) ও ‘থার্স্ট ট্র্যাপ’ (যৌন আবেদনময়ী ছবি/ভিডিও দিয়ে মনোযোগ আকর্ষণ) কৌশল ব্যবহার করতেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আকর্ষণীয় ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে এবং ব্যক্তিগত আলাপে আবেদনময়ী আচরণ করে ভুক্তভোগীকে আকৃষ্ট করেন এবং বিয়ের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করেন।
আইনি প্রক্রিয়া ও তদন্ত:
প্রতারণার শিকার হওয়ার পর বাদী প্রথমে পারিবারিকভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর তিনি ব্যাংক স্টেটমেন্ট, অর্থ লেনদেনের রসিদ এবং সাক্ষীদের প্রমাণসহ আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত বাদীর অভিযোগ ও প্রমাণপত্র পর্যালোচনা করে মামলাটি দণ্ডবিধির ৪২০ (প্রতারণা), ৪০৬ (বিশ্বাসভঙ্গ) এবং ৫০৬ (ফৌজদারি ভীতি প্রদর্শন) ধারায় গ্রহণ করে উত্তরা পশ্চিম থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিমানবালা খাদিজা সুলতানা শিমুর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ম্যাসেজ পাঠানো হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।