শাহজাহান ফকিরের বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টা ও দুদকে অভিযোগ
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:১৫ পিএম
শাহজাহান ফকিরের বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টা ও দুদকে অভিযোগ
রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল)–এর মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) শাহজাহান ফকিরের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দাখিল করা অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর শ্যালক মাহবুব তরুণের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত শাহজাহান ফকির বর্তমানে আরপিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ), নির্বাহী পরিচালক (অর্থ)–এর অতিরিক্ত দায়িত্ব এবং আরপিসিএল ও শেনঝেন স্টারের যৌথ উদ্যোগে গঠিত প্রতিষ্ঠান বিপিইএমসি–এর সিএফও (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হিসেবে প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের অক্টোবরে আরপিসিএলের নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) অবসর গ্রহণের পর থেকে প্রায় এক বছর ধরে ওই পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন শাহজাহান ফকির। অথচ উক্ত পদের জন্য প্রয়োজনীয় এমবিএ বা অ্যাকাউন্টিং/ফাইন্যান্সে মাস্টার্স ডিগ্রি তাঁর নেই। অভিযোগে আরও বলা হয়, তিনি সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সে ভর্তি হয়েছেন এবং কোর্স শেষ হলেই তাঁকে নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) পদে নিয়োগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে এমবিএ ক্লাসে যাতায়াতের অভিযোগও তোলা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কথা থাকলেও, ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) পদের বিজ্ঞপ্তি ইচ্ছাকৃতভাবে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এ সংক্রান্ত নথি প্রস্তুত হলে শাহজাহান ফকির এইচআর বিভাগের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, আরপিসিএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহজাহান ফকিরের প্রভাবে পরিচালিত ছিলেন এবং তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের পর অনিয়ম ও দুর্নীতি আরও বেড়ে যায়। এছাড়া, শেনঝেন স্টার নামের একটি চীনা মিটার কোম্পানির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মাধ্যমে টেন্ডার ছাড়া ডাইরেক্ট প্রোকিউরমেন্ট মেথড (ডিপিএম)–এ প্রায় ৪০০ কোটি টাকার স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই প্রকল্পে এজেন্সি কমিশন গ্রহণের উদ্দেশ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। পাশাপাশি, নিয়ম বহির্ভূতভাবে আরএনপিএল–এ কনসালট্যান্ট ও পরে মহাব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টাকেও গুরুতর অনিয়ম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রশিক্ষণের নামে অফিস চলাকালীন সময়ে অপ্রয়োজনীয় কর্মসূচি চালিয়ে কয়েক লক্ষ কর্মঘণ্টা নষ্ট করা হয়েছে, যা উপদেষ্টা ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপন্থী। এতে আরপিসিএল, আরএনপিএল ও বিপিইএমসি—এই তিনটি প্রতিষ্ঠান আর্থিক ও প্রশাসনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এছাড়া, মাদারগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে ভুল তথ্য ও গাফিলতির কারণে প্রকল্প স্থগিত হওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে। অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়, এসব অনিয়মের ফলে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে, যা যে কোনো সময় গুরুতর পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।
অভিযোগের সার্বিক তদন্ত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন আবেদনকারীরা।
