আইডিইবিতে ইউনেট বাংলাদেশ গেমিং ও ইস্পোর্টস সামিট ২০২৫ অনুষ্ঠিত
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০৯ পিএম
আইডিইবিতে ইউনেট বাংলাদেশ গেমিং ও ইস্পোর্টস সামিট ২০২৫ অনুষ্ঠিত
ইয়ুথ আপস্কিল নেটওয়ার্ক ইউনেট আয়োজিত বাংলাদেশ গেমিং ও ইস্পোর্টস সামিট ২০২৫, গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার আইডিইবি অডিটোরিয়াম-এ সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিনব্যাপী এই সামিটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থী, গেম ডেভেলপার, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, ইন্ডাস্ট্রি লিডার এবং গেমিং কমিউনিটির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান গেমিং ও ইস্পোর্টস ইকোসিস্টেমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সামিটে ২৫ জনেরও বেশি বক্তা অংশ নেন, যাদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষাবিদ, প্রযুক্তি পেশাজীবী, গেম ডেভেলপার এবং ইস্পোর্টস নেতৃবৃন্দ। তারা বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে গেমিং ও ইস্পোর্টসের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেন এবং এই খাতটি কীভাবে যুব কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং বৈশ্বিক অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করতে পারে তা তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন, ডিজিটাল বিনোদন ও ইন্টারঅ্যাকটিভ মিডিয়া যেভাবে দ্রুত বিকশিত হচ্ছে, তাতে বাংলাদেশ গেম ডেভেলপমেন্ট, প্রোডাকশন, ম্যানেজমেন্ট এবং প্রতিযোগিতামূলক ইস্পোর্টসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারে।
সামিটের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ইন্টার ইউনিভার্সিটি ইস্পোর্টস ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ (আইইউইসিসি ২০২৫)-এর গ্র্যান্ড ফিনাল। এই প্রতিযোগিতায় দেশের ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্পোর্টস ক্লাব অংশ নেয়। ভ্যালোরেন্ট, মোবাইল লেজেন্ডস, পাবজি মোবাইল, ইএ স্পোর্টস এফসি এবং ই-ফুটবলসহ মোট পাঁচটি গেমে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ইস্পোর্টস ক্লাব প্রথমবারের মতো জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে এবং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি) ইস্পোর্টস ক্লাব রানার-আপ ট্রফি লাভ করে। আয়োজকরা জানান, এই চ্যাম্পিয়নশিপ ভবিষ্যতে একটি জাতীয় পর্যায়ের কলেজিয়েট ইস্পোর্টস ঐতিহ্যে রূপ নিতে পারে।
এছাড়া সামিটে ইন্টারন্যাশনাল গেম ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টার-এর সহযোগিতায় আয়োজন করা হয় বিজিইএস গেম ডেভেলপার অ্যাওয়ার্ডস। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন - গোল্ড অ্যাওয়ার্ড: কম্প্রেস স্পেস - বি-দেশি ইন্টারঅ্যাকটিভ, সিলভার অ্যাওয়ার্ড: নাল - এসএস স্টুডিও, ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড: মটোরশ্যুটার - ইন্ডি ডেভেলপার ইমতিয়াজ আহমেদ দীপ্ত। এই পুরস্কারগুলো বাংলাদেশের গেম ডেভেলপমেন্ট খাতে তরুণদের সৃজনশীলতা ও আগ্রহের প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, প্রকল্প পরিচালক, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। তিনি অংশগ্রহণকারীদের সব ক্ষেত্রে উদ্ভাবনকে গ্রহণ করার আহ্বান জানান এবং বলেন, সঠিক দিকনির্দেশনা ও সহায়তা পেলে গেমিং ও ইস্পোর্টস খাত বাংলাদেশের জন্য বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে।
অনুষ্ঠানের কনভেনর মাহির আসফ বলেন, এ ধরনের সামিট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ইস্পোর্টস উদ্যোগগুলো গেমিং নিয়ে দীর্ঘদিনের সামাজিক নেতিবাচক ধারণা ভাঙতে সহায়ক হবে। তিনি উল্লেখ করেন, প্রতিযোগিতামূলক গেমিং এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুরো ইকোসিস্টেম তরুণদের জন্য বাস্তবসম্মত ক্যারিয়ার বিকল্প হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
ইভেন্ট ডিরেক্টর ও ইউনেট সিইও, মুহাম্মাদ আলতামিশ নাবিল বলেন, গেমিং ও ইস্পোর্টস তরুণদের মধ্যে যুক্তিবোধ, সমস্যা সমাধান, দলগত কাজ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সফট স্কিল গড়ে তোলে। তিনি আরও বলেন, কেবল খেলোয়াড় নয়, বরং প্রোডাকশন, অ্যানালিষ্ট, কাষ্টার এবং কনটেন্ট ক্রিয়েশনের মতো সহায়ক ভূমিকাগুলোতেও দক্ষতা তৈরি করা জরুরি, যা বাংলাদেশের তরুণদের বৈশ্বিক ইস্পোর্টস বাজারে যুক্ত হতে সহায়তা করবে।
ইয়ুথ আপস্কিল নেটওয়ার্ক - ইউনেট আয়োজিত এই সামিটে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি স্টেকহোল্ডার, শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবীদের একত্রিত করা হয় শেখা, নেটওয়ার্কিং এবং সহযোগিতার সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে। ইউনেট জানিয়েছে, ভবিষ্যতেও তারা এমন উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে যা তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন, এক্সপোজার এবং উদীয়মান ডিজিটাল খাতে অংশগ্রহণে সক্ষম করে তুলবে। আগামী বছর এই আয়োজনটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাবার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
এই অনুষ্ঠানের টাইটেল স্পন্সর ছিল এয়ারটেল (রবি আজিয়াটা পিএলসি-এর একটি ব্র্যান্ড) এবং পাওয়ার্ড বাই স্পন্সর হিসেবে যুক্ত ছিল এক্সকিউব স্টুডিও। আয়োজকরা জানান, এই সামিট গেমিং ও ইস্পোর্টসকে সৃজনশীলতা, আয়ের সুযোগ এবং বৈশ্বিক সম্পৃক্ততার একটি বৈধ মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জাতীয় পর্যায়ের আলোচনার সূচনা করেছে, যা বাংলাদেশের ডিজিটাল ভবিষ্যতের পথে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
