দেশে কসমেটিকস খাতে বড় সম্ভাবনা, আমদানি নির্ভরতায় উদ্বেগ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১২:২৫ পিএম

ছবি : ভোরের কাগজ
দেশে এখন কসমেটিকস, টয়লেট্রিজ ও পারসোনাল কেয়ার পণ্যের বাজার ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে এতো বড় বাজারের ৯০ শতাংশ কাঁচামাল এখনো আমদানির ওপর নির্ভরশীলঅ এ কারণে খাতটিতে উত্থান-পতন রয়েছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
রাজধানীর কুড়িলের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী প্রসাধনী ও পারসোনাল কেয়ার নিয়ে আয়োজিত ‘কসমেটিকা ঢাকা ২০২৫: কনকারেন্ট শো অ্যান্ড পার্সোনাল কেয়ার’-এ উদ্যোক্তাদের কথা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) বাংলাদেশে নিযুক্ত রিপাবলিক অব কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ংশিক এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। দুই দিন ব্যাপী এই প্রদর্শনী শেষ হয় শনিবার রাত আটটায়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ংশিক বলেন, কোরিয়ান কসমেটিকস বিশ্ব কসমেটিকস শিল্পে তৃতীয় বড় বাজার। বিশ্বব্যাপী কে-বিউটি নামে সুপরিচিত তাদের পণ্য। যা বাংলাদেশের এই প্রদর্শনীতে প্রদর্শন করছে দেশটি। কোরিয়া ২০২৪ সালে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি কসমেটিকস রপ্তানি করেছে বিভিন্ন দেশে।
আরো পড়ুন : ৩৩টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম কমলো
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে কোরিয়ান সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। কসমেটিকা ঢাকা ২০২৫ দুই দেশের কোম্পানির সরাসরি সম্পৃক্ততার মাধ্যমে পারস্পরিক উন্নয়ন ও বোঝাপড়ার নতুন দ্বার উন্মোচন করছে। কোরিয়ান কসমেটিকস, যা গুণমান, নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনে বিশ্বজুড়ে আস্থাভাজন, বাংলাদেশের দ্রুতবর্ধনশীল সৌন্দর্য ও পারসোনাল কেয়ার বাজারে সম্ভাবনাময় অংশীদার হবে। এই প্রদর্শনী দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করে ভবিষ্যতে যৌথ সাফল্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথ সুগম করবে।
দেশে প্রথমবারের মতো এমন আয়োজন করে স্কোয়াডমাইন্ড গ্লোবাল লিমিটেড। আয়োজনটির পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বাংলাদেশে অবস্থিত রিপাবলিক অব কোরিয়ার দূতাবাস, কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সি (কেওটিআরএ) এবং ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড প্রোমোশন (ডিআইটিপি), থাইল্যান্ড। টাইটেল স্পন্সর স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড, গোল্ড স্পন্সর হিসেবে ছিল কিউট এবং প্লাটিনাম স্পন্সর ইঞ্জিনিয়াস রিসোর্সেস।
স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের সিইও মালিক মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, বাংলাদেশের টয়লেট্রিজ, কসমেটিকস্ ও পারসোনাল হাইজিন পণ্যের বাজার খুব বড়, এটা প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে। গত কয়েক বছর থেকে এর প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ডাবল ডিজিটে। নগরায়নের প্রভাব, শহর ও গ্রামের মধ্যে তফাত কমে আসায় আমরা মনে করছি এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, তবে দুর্ভাগ্যজনক হলো, আমাদের খাতের উত্থান পতন রয়েছে খুব। কারণ, আমরা যে কাঁচামাল ব্যবহার করি তার ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। ফলে বেশিরভাগ সময় সাপ্লাই চেইন নিয়ে আমাদের উদ্বেগে থাকতে হয়। সে কারণে আমরা নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করছি, ফর্মুলেশন দেখছি এবং শেখার চেষ্টা করছি। আমরা কিছুদিন আগেও উপদেষ্টাসহ কোরিয়া গিয়েছিলাম, সেখানে আমরা দেখেছি ফর্মুলেশন এফিসিয়েন্সি ও ইনগ্রেডিয়েন্টস। এখন কোরিয়ান কোম্পানি এসে বাংলাদেশে একটা সল্যুশন দেবার চেষ্টা করছে, এটা খুব ইতিবাচক একটা দিক।
দেশে চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে তার কোম্পানি স্কয়ার কসমেটিকস, টয়লেট্রিজ, ন্যাপকিনের মতো সুরক্ষার নতুন সব পণ্য বাজারে আনার কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশে প্রসাধনী ও ব্যক্তিগত পরিচর্চার পণ্য নিয়ে প্রথমবারের মতো এটাই সবচেয়ে বড় আয়োজন। বাংলাদেশ ছাড়াও এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে কোরিয়া, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, জাপানসহ বেশকিছু দেশের প্রখ্যাত সব প্রসাধনী ব্র্যান্ড, প্রস্তুতকারক, সরবরাহকারী, খুচরা বিক্রেতা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
আয়োজনটির পৃষ্ঠপোষকতা করছে বাংলাদেশে অবস্থিত রিপাবলিক অব কোরিয়ার দূতাবাস, কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সি (কেওটিআরএ) এবং ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড প্রোমোশন (ডিআইটিপি), থাইল্যান্ড। টাইটেল স্পন্সর স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড, গোল্ড স্পন্সর হিসেবে রয়েছে কিউট এবং প্লাটিনাম স্পন্সর ইঞ্জিনিয়াস রিসোর্সেস।
দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীতে ছিল শতাধিক পণ্যের স্টল, লাইভ ডেমো, বিউটি কনসালটেশন, স্কিনকেয়ার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা এবং উদ্যোক্তাদের জন্য নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ। এতে দেশের পার্সোনাল কেয়ার খাতে নতুন বিনিয়োগ, প্রযুক্তি ও ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের পথ তৈরির আশা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান স্কোয়াডমাইন্ড গ্লোবাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম ফয়সাল মুনিম বলেন, প্রথমবারের আয়োজনে এতোটা সাড়া পাবো ভাবতেও পারিনি। আমরা দেশের অন্যতম বড় এই খাতের স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত করতে পেরেছি। কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে কসমেটিকস ও টয়লেট্রিজে বিনিয়োগ ও যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। এটা আমাদের জন্য বড় পাওয়া। আমরা আশা করছি, সামনের দিকে এই খাতে বড় বিনিয়োগ আসবে এবং দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
দেশে মানসম্মত কসমেটিকস, টয়লেট্রিজ ও পারসোনাল কেয়ার পণ্য ব্যবহারের ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয় প্রদর্শনী থেকে। সেই সঙ্গে নকল ও কালোবাজারি পণ্যের রোধেও চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোচনা হয়। সব মিলিয়ে, সম্ভাবনাময় এ খাতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার কথা উঠে আসে দুই দিনের প্রদর্শনী থেকে। প্রদর্শনীতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতিনিধি ছাড়াও ইনফ্লুয়েন্সার, বিভিন্ন অঙ্গনের তারকাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। শেষ দিন শনিবার সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পর্দা নামে এবারের আসরের।
আয়োজনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার ছিল প্রথম আলোর লাইফস্টাইল অনলাইন হাল ফ্যাশন, মিডিয়া পার্টনার লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ক্যানভাস, প্রতিদিনের বাংলাদেশ ও বাংলা টেলিগ্রাফ।