অর্থনীতি
পুরনো চ্যালেঞ্জ নতুন চাপ
মরিয়ম সেঁজুতি
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০২:২৩ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
দেশের সার্বিক অর্থনীতি ভালো নেই। অস্বস্তি, অনিশ্চয়তা ও নানা শঙ্কার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে ব্যাংকসহ আর্থিক খাতগুলো। তবে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর কিছুটা পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে দেশের অর্থনীতিতে আবার অস্থিরতার বিষয়টি সামনে এসেছে।
ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট। অস্থির পুঁজিবাজার। চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন ট্যারিফ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে সরকার ও ব্যবসায়ীরা। সপ্তাহের ব্যবধানে একের পর এক আর্থিক খাতে অগ্নিকাণ্ড। মুদ্রাস্ফীতির চাপ, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, ডলারের উচ্চমূল্য ও রাজনৈতিক অস্থিরতা- সব মিলিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা। একদিকে টানা দুই মাস দেশের পণ্য রপ্তানি আয় কমেছে। অন্যদিকে বেড়েছে আমদানি ব্যয়।
এর মধ্যেই গত কয়েকদিন ধরে এক দুর্বিষহ সময় পার করছেন দেশের ব্যবসায়ীরা, একের পর এক আঘাতে কেঁপে উঠেছে দেশের বাণিজ্য খাত। ফলে ইতোমধ্যেই চাপের মুখে থাকা রপ্তানি-আমদানির শৃঙ্খল আরো নাজুক অবস্থায় পড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ, চলতি বছরের একই সময়ে যা নেমেছে ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশে। মূল্যস্ফীতি এখনো উচ্চপর্যায়ে। সার্বিকভাবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞদের মতামত, সাম্প্রতিক আমদানিপ্রবণতা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে- অর্থনীতি ক্রমেই মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাদের দাবি, এখনই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতি নেয়া জরুরি, যেন পরবর্তী নির্বাচিত সরকার দ্রুত সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রপ্তানির ওপর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাপ স্পষ্টভাবে প্রভাব ফেলছে। নতুন বিনিয়োগের অভাবে অনেক কারখানা উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে, যা রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া জ্বালানি সংকটে উৎপাদনে হিমশিম খাচ্ছে শিল্প কারখানাগুলো। অনির্বাচিত সরকার হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগও পাচ্ছে না ঠিকমতো। কারণ বিদেশিরা অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে যেখানে ঝুঁকি আছে- এমন জায়গায় বিনিয়োগ করতে চায় না। এরই মধ্যে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে দেশজুড়ে নতুন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বা অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অর্থনীতির গতি শ্লথই থাকছে, পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দা ভাব দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, আমাদের অর্থনীতি আমদানিনির্ভর। অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি কেমন তার ওপর নির্ভর করে আমদানি। সব ধরনের পণ্য যেমন মূলধনি পণ্য, বিভিন্ন ধরনের মধ্যবর্তী পণ্য বা ইন্টারমিডিয়েট গুডস, ভোগ্যপণ্য এ তিন ক্যাটাগরি বিশ্লেষণে দেখা যাবে- যখন বিনিয়োগ বাড়ে তখন মূলধনি পণ্যের আমদানি বাড়ে। আবার উৎপাদন বাড়লে মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি বাড়ে। আর মানুষের চাহিদা বাড়লে ভোগ্যপণ্য আমদানি বাড়ে। অর্থাৎ অর্থনীতি যত বেশি চাঙ্গা হবে, আমদানি তত বেশি বাড়বে।
প্রক্ষেপণে দেখা যাচ্ছে, আগামী মাসগুলোয় আমদানি বাড়বে না, বরং কমবে; অর্থাৎ অর্থনীতি আরো বেশি চাপে পড়ারই আশঙ্কা রয়েছে। ড. মুজেরী বলেন, বর্তমানে বিনিয়োগ বাড়ছে না। যেহেতু সামনে নির্বাচন, পরিবেশটা বিনিয়োগবান্ধব নয়। উদ্যোক্তারা বর্ধিত বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না বা হবেনও না। যার ফলে মূলধনি পণ্যের আমদানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। উৎপাদনেও একই অবস্থা। জুলাইয়ের আগে যে পরিস্থিতি ছিল, তার চেয়েও খারাপ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে অর্থনীতি। এসব কারণে প্রক্ষেপণে দেখা যাচ্ছে, অর্থনীতি আরো মন্দা ভাবের দিকে যাচ্ছে। আগের তুলনায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো কমবে। সামগ্রিকভাবে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর পরিবর্তে আরো বেশি নিচের দিকে নামার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
এ পরিস্থিতির সমাধান নির্ভর করছে রাজনৈতিক পরিবেশের ওপর উল্লেখ করে ড. মোস্তফা কে মুজেরী আরো বলেন, অর্থনীতি রাজনীতির বাইরে কিছু নয়। বর্তমানে যে পরিস্থিতি- রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামনে নির্বাচন, অনিশ্চিত পরিবেশ- যতক্ষণ পর্যন্ত এ পরিবেশ স্বাভাবিক না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা কম। তিনি বলেন, এখন নতুন করে অর্থনৈতিক সংস্কারগুলো করা হয়তো সম্ভব নয়, কিন্তু প্রস্তুতিগুলো নিয়ে রাখতে হবে। এতে যে সরকারই আসুক, অর্থনীতিকে মেরামত করার জন্য যে পদক্ষেপগুলো দরকার সেগুলো যেন দ্রুত গ্রহণ করে যত দ্রুত সম্ভব অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানোর ব্যবস্থা নিতে পারে।
আমদানিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাজমান পরিস্থিতির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে সরকারের আমদানি পরিসংখ্যানে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৬ অক্টোবর ‘মডিফাই’ করা ‘মেজর ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস : মান্থলি আপডেট সেপ্টেম্বর, ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে দেশে পণ্য আমদানির অর্থমূল্য ছিল ৬২৭ কোটি ডলার। আগস্টে যা কমে হয়েছে ৫২২ কোটি ২৭ লাখ ডলার।
গত বছর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার গঠন হলে দেশের আর্থিক খাত সংস্কারে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়। বিগত সময়ে লুটপাট হওয়া ব্যাংক খাত, পুঁজিবাজারে পরিচালনা পর্ষদের বড় পরিবর্তন করা হয়। পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও তা এখনো দৃশ্যমান হয়নি। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদেরও আস্থা ফেরে ব্যাংক খাতে। ফলে প্রবাসী আয়ের জোয়ারে বেড়েছে রিজার্ভ। এতে তলানিতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আস্তে আস্তে ভালো হতে থাকে। তবে তা আশানুরূপ পর্যায়ে নেই। পাশাপাশি রপ্তানি আয় আশা দেখালেও গত কয়েক মাসে তা আবার কমতে শুরু করেছে।
বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি টানা পতনের মুখে। ২০২৫ সালের আগস্টে এ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে মাত্র ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে, যা ২০০৩ সালের পর সর্বনিম্ন। এক বছর আগেও (২০২৪ সালের জুলাইয়ে) এই হার ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ প্রবৃদ্ধি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানি আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে জ্বালানির নিশ্চয়তা ও দেশের সামগ্রিক ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ঠিক রাখা জরুরি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মান্থলি আপডেট প্রতিবেদনে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরের আমদানির প্রক্ষেপণও দেয়া হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বরে আমদানির জন্য খোলা ঋণপত্রের অর্থমূল্য হতে পারে ৪৬৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। অক্টোবর ও নভেম্বর- দুই মাসেই ঋণপত্র খোলা হতে পারে কমবেশি ৪৬৭ কোটি ডলারের। অর্থাৎ আমদানিতে প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়বে।
প্রতিবেদনে এ প্রক্ষেপণের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর প্রান্তিকে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার প্রক্ষেপণ দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক শূন্য ১ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের একই সময়ের প্রক্ষেপণ ১৪ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় কম। একই সময়ে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির সম্ভাব্য দায় দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর অনুমোদিত ডিলারদের (এডি) বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুদের ৫১ দশমিক ৮৩ শতাংশের সমান। এ বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের মধ্যে রয়েছে নস্ট্রো অ্যাকাউন্টের নিট ব্যালান্স, অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট (ওবিইউ) বিনিয়োগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখা বৈদেশিক মুদ্রার ব্যালান্স।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান বলেন, ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি একেবারেই কমে গেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, তেমন কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। সবাই একটা ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ অ্যাপ্রোচ নিয়ে আছে। তারা ভাবছে আগে নির্বাচন হোক, নির্বাচনের পর পরিবেশের ওপর নির্ভর করবে- আমরা ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করব কী করব না। তিনি বলেন, বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শুনতে পাই- প্রতিটি খাতে চাহিদা কমেছে, বাড়ছে না। কারণ এখনো মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। সবাই একটু বুঝেশুনে খরচ করছে। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। মানুষের ডিসপোজেবল ইনকাম আগের মতো নেই, কমেছে। সবাই সতর্ক, বুঝেশুনে খরচ করতে চাইছে।
এদিকে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা দিন দিন বাড়ছে। আগামী ফেব্রæয়ারির শুরুতে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ফলে নভেম্বর মাস থেকেই নির্বাচনী ডামাডোল শুরু হয়ে যাবে। বিগত সময়ের অভিজ্ঞতা বলে, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও খারাপ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসার পরিবেশে মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার নানা উদ্যোগ নিলেও তা পুরোপুরি সফল হয়নি। অদৃশ্য সিন্ডিকেটের থাবা ভাঙতে পারেনি সরকার। ফলে বাজারে গেলে ভোক্তার নাভিশ্বাস ওঠে। মূল্যস্ফীতি কয়েক মাস নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গত সেপ্টেম্বরে আবার বেড়েছে, যা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য উদ্বেগ্নের বিষয়।
অনির্বাচিত সরকার হওয়ায় এবং রাজনৈতিক সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় বিদেশি বিনিয়োগও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই আসছেন, ফিল্ড দেখছেন, কিন্তু বিনিয়োগ করছেন না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিনিয়োগ বাড়াতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ লাগবে। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন যত দ্রুত হবে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তত দ্রুত স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছেন তারা।
টানা অগ্নিকাণ্ডে শিল্প খাতে অস্থিরতা : মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানী ও বন্দরনগরীতে সংঘটিত তিনটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড শিল্প উৎপাদন, রপ্তানি কার্যক্রম ও শ্রমিক নিরাপত্তা- সব ক্ষেত্রেই নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এর আগে ১৪ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে একটি প্রিন্টিং ও কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডে ১৬ শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। ওই দুর্ঘটনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) অবস্থিত অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইলস লিমিটেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুনে প্রতিষ্ঠানটির অন্তত ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
এরপর শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে আবারো ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় বিপুল পরিমাণ আমদানি ও রপ্তানিযোগ্য পণ্য। এতে তৈরি পোশাক খাতসহ রপ্তানি বাণিজ্যের পুরো সরবরাহ চেইন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। শিল্প খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব টানা অগ্নিকাণ্ড শুধু কোটি কোটি টাকার ক্ষতিই বয়ে আনছে না, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের সুনাম, ডেলিভারি প্রতিশ্রুতি ও বিনিয়োগ আস্থার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শিল্প স্থাপনাগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি এবং তদারকির দুর্বলতাকেই এর মূল কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির চাপ অর্থনীতিতে : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আগস্টের ৮ দশমিক ২৯ শতাংশের চেয়ে সামান্য বেশি। খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ, আর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বেড়ে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গ্রাম ও শহর- উভয় ক্ষেত্রেই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. এম মাশরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে বলা যায়, আমাদের অর্থনীতি একটা মিশ্র অবস্থায় রয়েছে। গত দেড় বছরে আমাদের রিজার্ভ বেড়েছে, তবে এখনো দুর্বলতা রয়ে গেছে। রপ্তানি আয় প্রবাসী বেড়েছে। গত দুই মাস রপ্তানি আয় যেটা কমছে, সেটা সাময়িক বলা যায়।
এ অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে সামনে রাজনৈতিক নতুন নতুন দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি হবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়মিত কাজে কিছুটা তো ব্যাঘাত ঘটবেই। এছাড়া আমাদের বৈদেশিক বিনিয়োগ নেতিবাচক পর্যায়ে রয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ না হলে তা বিনিয়োগে আসবে না। মাশরুর রিয়াজ বলেন, আমাদের অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি দুর্বলতা এখনো কাটেনি। এগুলো নিয়ে কাজ করার আছে। এছাড়া সামনে আমাদের এলডিসি গ্রাজুয়েশন হবে। ট্যারিফের চাপ সামাল দিতে হচ্ছে। এজন্য আমাদের যতটুকু প্রস্তুতি ও সংস্কার দরকার ছিল তা হয়নি।
