ফিরছে একের পর এক পরীক্ষা
অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার বিষয়ে রবিবার বৈঠক

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৫, ০৭:১৫ পিএম

অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার বিষয়ে রবিবার বৈঠক
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০২৩ সালে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছেন এক পরীক্ষার্থী। ঢাকার একটি কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পরীক্ষার্থী বলেন, ওই বছর পরীক্ষার আগে তিনদিনও ক্লাসে যাইনি। শুধু পরীক্ষা দিয়েছি। ফলাফল প্রকাশের পর আমি তৃতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হয়েছি। কিন্তু এখন আর সে সুযোগ নেই। রীতিমত ক্লাস করতে হচ্ছে।
এমনকি আগের বছরে কলেজের ইনকোর্স পরীক্ষায় অংশ না নিয়েই নম্বরও পেয়েছি। কিন্তু এখন বাধ্যতামূলক ইনকোর্স পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীই শুধু পরীক্ষা নিয়ে এমন মন্তব্য জানাননি, প্রতিষ্ঠানটির সব শিক্ষার্থীকেই এখন রীতিমত পড়াশুনা করে পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে। পরীক্ষা না দিয়ে কোনোভাবেই উত্তরণের সুযোগ নেই।
বিভিন্ন কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়ে তিনি ক্লাস-পরীক্ষার বিষয়ে জোর দেন। এরইমধ্যে বিভিন্ন কলেজে নির্দেশনা দিয়ে জানান, কলেজে অবশ্যই বিভিন্ন ইনকোর্স পরীক্ষা হতে হবে এবং ইনকোর্স পরীক্ষার উত্তরপত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে।
এই এক ঘোষণায় স্নাতক শ্রেণিতে সব কলেজে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে যায়। কারণ ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে ইনকোর্স পরীক্ষায় অংশ নেয়া যায় না। অনেক কলেজে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি এতই বেশি যে, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের জায়গা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের অভিভাবকরা মনে করেন, পড়াশুনার মূল মাপকাঠি হচ্ছে পরীক্ষা। অথচ এই পরীক্ষাটাই ঠিকমত হচ্ছিল না। পরীক্ষাটাকে উপহাসের পাত্রে পরিণত করা হয়েছিল। আমি এসে পরীক্ষাটাকে পরীক্ষার জায়গায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। আমার পরবর্তী পদক্ষেপ হবে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যত কলেজ আছে সবগুলো কলেজে বছরব্যাপী মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চালু করা। এটি চালু করতে পারলে শিক্ষার্থীরা আর কলেজ ফাঁকি দিতে পারবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার মাধ্যমে বৃত্তি দেয়া হত। আলাদা করে বৃত্তি পরীক্ষা তুলে দেয়া হয়েছিল। ১৬ বছর পর পঞ্চম শ্রেণিতে আবার ফিরেছে বৃত্তি পরীক্ষা। সবশেষে অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে এবং কিভাবে নেয়া হবে তা ঠিক করতে আজ রবিবার এক সভার আয়োজন করা হয়েছে। এর বাইরে স্কুলগুলোর অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাও প্রায় বন্ধ করে ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু হয়েছিল। এতে অভিভাবকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। বর্তমানে স্কুলগুলোতেও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ফিরে এসেছে।
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার ভোরের কাগজকে বলেন, অষ্টম শ্রেণি শেষে জেএসসি পরীক্ষা হয়ত হবে না। তবে অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আজ রবিবার একটি সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভায় পরীক্ষার নীতিমালা প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও ২০১০ সালে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা চালুর পর পৃথকভাবে পরীক্ষা নিয়ে বৃত্তি দেয়ার পদ্ধতি বাতিল করা হয়। এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে ফলাফলের ভিত্তিতে ৫০ হাজার শিক্ষার্থী বৃত্তি পেত। ২০২২ সাল থেকে স্থায়ীভাবে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়।
২০২৩ সাল থেকে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমেও এ দুটি পরীক্ষা ছিল না। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১’ বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০১২ সালে প্রণীত সৃজনশীল পদ্ধতি বহাল করা হয়েছে। এতে গতানুগতিক ধারায় আগের মতো বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হবে। ফলে আগের নিয়মে বৃত্তি পরীক্ষা ফিরছে। এরইমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নির্দেশনা দিয়ে বলেছে, ১৬ বছর পর আবারও প্রাথমিক বৃত্তির পরীক্ষা ফিরছে। আগামী ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এটা নতুন কিছু নয়। পুরানো পদ্ধতিতে আবার ফেরা হচ্ছে। শ্রেণির সব শিক্ষার্থীকে বাধ্য করা হবে না। যারা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আগ্রহী, তাদের পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হবে এমনটি ছিল একসময়। শিশুরা ছোটবেলা থেকে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে বড় হতে শিখবে।